৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে হজ্জ্ব ফ্লাইট। দৈহিক-আর্থিক সামর্থ্য এবং স্থান ও সময়গত সামঞ্জস্যতার বিশ্বজনীন ইবাদত হজ্জ্ব। পবিত্র কুরআনের একটি সুরার নাম 'হাজ্জ্ব'। আরাফাত , মুজ্দালিফা,মিনা প্রভৃতি স্থানে যথা সময়ে সুশৃঙ্খল কর্ম সম্পাদনের এক মহা প্রশিক্ষণ হজ্জ্ব।এতে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের অগনন বনী আদম সমবেত হন, যাদের পরনের কাপড় এক, কামনা এক, মনে-মুখে ধ্বনিত হয়- আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ! প্রিয়নবী (স.) বলেন "আমার কাছ থেকে হজ্জ্বের নিয়মকানুন শিখে নাও"।
বলাবাহুল্য বাংলাদেশের মানুষ সাধারণতঃ শেষ জীবনে একবারই হজ্জ্ব করেন। তাই হজ্জ্বের প্রস্তুতিতে সতর্কতা একান্ত জরুরি। হজ্জ্বের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি, জাগতিক খ্যাতি ও স্বার্থ নয়। মহান আল্লাহ্ বলেন "জেনে রেখ ! অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য (যুমার :০৩)। খাঁটি ভাবে তওবা করে মানসিক পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে আর্থিক প্রস্তুতি হতে হবে পবিত্র ও পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত। প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন " নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পবিত্র । তিনি পবিত্র ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না" (মুসলিম)।
হজ্জ্বের আগে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া এবং বৈষয়িক বিরোধ মিটিয়ে দেওয়া কর্তব্য। আল্লাহ্ বলেন " তোমরা ভ্রাতৃ বিরোধ মিটিয়ে দাও"(হুজরাত:১০)। হজ্জ্ব হলো দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্যের সুসমন্বিত ইবাদত। তাই দৃঢ় মনোবল ও সুস্থতা হজ্জ্বের প্রস্তুতির অংশ। মনে রাখতে হবে- "যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে , আল্লাহ্ই তার জন্য যথেষ্ট"(তালাক:০৩)। হজ্জ্বের নিয়ম-কানুন দোওয়া-কালাম শিখে নেওয়া , লিখে নেওয়া, অভিজ্ঞদের কাছে জেনে নেওয়া 'পুস্তিকা' সঙ্গে রাখা জরুরি। কেননা, আল্লাহ্ বলেন 'না জানলে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নাও"। হজ্জ্বের সফরে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী হালকা ও অল্প হওয়া কেননা, মহান আল্লাহ্ বলেন "তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। তবে মনে রাখবে 'তাকওয়া'ই উত্তম পাথেয়" (বাকারা:১৯৭)। স্বাস্থ্য সচেতনা , রোগকে অবহেলা ও আড়াল না করা। বরং ডাক্তারের পরামর্শে টিকা নেওয়া ও ঔষধ সেবন করা। প্রচুর পানি পান করে শরীর সতেজ রাখা ,ক্ষুধা সহিষ্ণুতা ও খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা। কোন কারণে কাফেলা থেকে হারিয়ে গেলে, মালামাল হারানো গেলেও মনোবল হারানো যাবে না। অন্যদিকে সবার সঙ্গে সদ্ভাব-সুন্দর আচরণ ও সমন্বিত হয়ে চলা। ভিড় ও ব্যস্ততায় Safty first নীতিতে ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় করণীয় শেষে অন্যকে সুযোগ দেওয়ার মানসিকতা থাকা । এতেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। তিনি বলেন" আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ্ব ও উমরা পূর্ণ কর"(বাকার:১৯৬)।
হজ্জ্বের ফরজ তিনটি— ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ এ জিয়ারত এবং আরাফাতে উপস্থিতি। এ ফরজ গুলোর একটি ছুটে গেলেও হজ্জ্ব নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যথাযথ ভাবে হজ্জ্বের ফরজগুলো সুসম্পন্ন করবার সার্বিক প্রস্তুতি জরুরি। হজ্জ্বের ওয়াজিব পালনে ব্যর্থতায় 'দম' বা একটির জন্য একটি কুরবানী দিতে হয়। এজন্য ওয়াজিব পালনে তৎপর থাকতে হবে। হজ্জ্ব একটি বিশ্বজনীন ইবাদত। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ,পেশা ও বয়সের মানুষ সমবেত হন। তাই নিজের ইবাদতে যেন অন্যের কষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করা, তাওয়াফকালীন দ্রুত চলা, মাকামে ইব্রাহীমে নামায,জমজমের পানি পান ইত্যাদি সুন্নাত পালন করতে গিয়ে অন্যর কষ্টের কারণ হওয়া যাবে না । হজ্জ্বের সময় হাজী সাহেবানের কিছু অনিচ্ছকৃত ত্রুটি হয়ে থাকে। যেমন ইহরামের ক্ষেত্রে, ইহরাম না বেঁধেই মিকাত বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে মিকাতের ভেতরে বা জেদ্দা বা অন্যস্থানে পৌঁছে ইহরাম বাঁধেন— এমন হলে 'দম' (কুরবানি) দিতে হবে । তাওয়াফের সময় অনেকে হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌছার আগেই তাওয়াফ শুরু করেন। অথচ হাজরে আসওয়াদ থেকেই তাওয়াফ করা অপরিহার্য। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য ভিড় করা ,গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি , অন্যের ক্ষতি করা উচিত নয়। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে না পারলেও তাওয়াফের ক্ষতি হয় না । আর অক্ষমতার ক্ষেত্রে দূর থেকে ইশারা করাই যথেষ্ট।