ঢাকা: সারা পৃথিবীতে এখন দ্রুতহারে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে কমছে চাষাবাদের জমির পরিমাণ। দেখা দিচ্ছে খাদ্য ঘাটতি। একই সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অনেকে অল্প বয়সেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চাকরি ও পড়াশোনার কাজে এখন অনেকেই হচ্ছেন শহরমুখী। ইচ্ছাকৃতভাবেই শহরকে বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। শহরে জায়গার তুলনায় মানুষ দ্বিগুণ হওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে।
অনেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছেন না, অনেকে চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আবার অনেকে তাদের শিক্ষা, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌল মানবিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। দিন যাবে জনসংখ্যা বাড়বে। মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে। এজন্য আপনাকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আপনাকেও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সুযোগে প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করার চেষ্টা চালাতে হবে।
শাকসবজি ও ফলমূল মানুষের খাদ্যাভ্যাসের একটি অপরিহার্য উপাদান। অনেকেই, বিশেষ করে যারা শহরে থাকেন তারা এটি থেকে বঞ্চিত হন। যদিও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা ধরনের শাকসবজি শহরে আসে তা টাটকা নয়। আবার তাতে বিষাক্ত পদার্থ মেশানো থাকে। মাঝেমধ্যে দাম বেশির কারণে তা আবার অনেকে কিনতে পারেন না। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিজের বাড়ির মধ্যেই উৎপাদন করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও সুস্বাদু ফলমূল। এজন্য আপনি বাড়ির রান্নাঘরের পাশে সুবিধাজনক জায়গা, বেলকনি বা জানালার পাশ বেছে নিতে পারেন। যেখানে দিনে অন্তত ৬ ঘণ্টা সূর্যের আলো থাকে সে জায়গাটিই আপনার সবজি চাষের জন্য উপযোগী হবে।
এরপর আপনি ভাবুন আপনার কোন ফল বা সবজি বেশি প্রিয়। আপনার বাড়ির জায়গা অনুযায়ী কোনটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। যেমন আপনি মূলা, গাঁজর, পালং শাক, টমেটো, লাউ শাক, লেটুস বা আপনার পছন্দমতো অন্য কোন সবজি চাষ করতে পারেন। প্রয়োজন হলে আপনি টবে ঘরে বা ঘরের পাশে যে কোনো ফলের চারা রোপণ করতে পারেন। এভাবে পেয়ারা, কলা, সফেদা, আম, লিচু, পেঁপে বা অন্যান্য ফলের চারা রোপণ করা যায়। এতে পরিবারের চাহিদাও পূরণ হয় আবার প্রয়োজন হলে অন্যদের সাহায্যও করা যায়।
আপনার বাড়িতে সবজি বাগান থাকলে আপনি ইচ্ছামতো যে কোনো সময়ে সেখান থেকে নিয়ে রান্না করতে পারেন। তাছাড়া যদি টমেটোর চাষ থাকে তাহলে তা থেকে তৎক্ষণাৎ সালাদ তৈরি করে নিতে পারেন। এত আপনার খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। তবে আপনাকে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, শুধু চারা রোপণ বা বীজ বপন করলেই তা থেকে আপনার পছন্দের ফল বা সবজি পাবেন না। এজন্য আপনাকে নিয়মিত তার যত্ন নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার প্রয়োজন হবে না। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর বা বিকেলে অফিস থেকে ফিরে অবসরে একবার তা দেখুন। তাতে পানি দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা বা পোকা মাকড় লেগেছে কিনা তা দেখুন। তবে সব সময় আপনি তাতে সার বা কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন।
গাঢ় সবুজ শাকসবজি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো, চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সবুজ শাকসবজির ভূমিকা অত্যধিক। তবে সেটি বাসি বা বিষযুক্ত নয়, চায় টাটকা ও সবধরনের কীটনাশকমুক্ত। তাছাড়া আপনি বাড়ির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা রোপণ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে না। সিঁড়ির পাশে বা জানালার ধারে টবে আপনার পছন্দের ফুলের চারা রোপণ করতে পারেন। তাতে আপনার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, আপনার মনও ভালো থাকবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে সদর উদ্দীন লিমন
(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এসইউএল/জেএস)