লজ্জার অনিবার্য ফল দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ
১৪ জুলাই, ২০১৪ ০৯:৪৫:৫৪

ঢাকা: দেখতে দেখতে আমরা মাহে রমজানের প্রায় অর্ধেক সময় অতিবাহিত করেছি। আজ ১৫ রমজান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘যিনাল উয়ুন আন নাযর’ ‘চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি নিক্ষেপ।’ মাহে রমজান শুধু আমাদের দিনের বেলা পানাহার পরিহারের ব্যবস্থা করেনি, একই সঙ্গে চোখ, হাত, পা, বিদ্যাবুদ্ধি, চিন্তা-চেতনার নিত্য পাপরাশি থেকেও দূরে থাকার ব্যবস্থা করেছে। মানবদৃষ্টির দিগন্ত বিস্তৃত শক্তিকে সুপথে পরিচালিত করতে হবে। সৃষ্টি করতে হবে লাজ-লজ্জার ভান্ডার। নবীজী (স.) বলেছেন, ‘লজ্জা-শরমও ঈমানের অংশ (আল হায়াউ শুবাতুন মিনাল ঈমান)।’ স্বাভাবিক লজ্জা-শরমের অনিবার্য ফল হচ্ছে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ। চোখের দৃষ্টি এমন একটি হাতিয়ার, যার দ্বারা দুনিয়ায় যেমন ভাল কাজও করা যায়, তেমনি নিজের মধ্যে জমানো যায় পাপের পুঞ্জীভূত বিষবাষ্প। দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীক্ষ্ম শাণিত তীর যা নারী-পুরুষের অন্তর ভেদ করতে পারে। প্রেম-ভালবাসা তো এক অদৃশ্য জিনিস, যা কখনো চোখে ধরা পড়ে না, বরং চোখের দৃষ্টিতে ভর করে অপরের মর্মে গিয়ে পৌঁছায়। বস্তুত, দৃষ্টি হচ্ছে লালসার বহ্নির দখিন হাওয়া। মানুষের মনের দৃষ্টি যেমন লালসাগ্নি উৎক্ষিপ্ত করে, তেমনি তার ইন্ধন জোগায়। দৃষ্টি বিনিময় এক অলিখিত লিপিকার আদান-প্রদান, যাতে লোকদের অগোচরেই অনেক প্রতিশ্রুতি-অনেক মর্মকথা পরস্পরের মনের পৃষ্ঠায় জ্বলন্ত আঁখরে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।
ইসলামের লক্ষ্য যেহেতু মানবজীবনে সার্বিক পবিত্র ও সর্বাঙ্গীণ উন্নত চরিত্র, সেজন্যে দৃষ্টির এ ছিদ্রপথকেও বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে, দৃষ্টিকে সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্য দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশ। কুরআন মাজীদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে: ‘মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্য অতিশয় পবিত্রতাময়। আর তারা যা কিছু করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত।’ (সূরা নূর-৩০)। কেবল পুরুষদেরই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কেও বলা হয়েছে: ‘মুমিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে।’ (সূরা নূর- ৩১)।
দুটো আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে- দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা সংরক্ষণ। কিন্তু এ একই কথা পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে এবং মহিলাদের জন্য; তার পরে স্বতন্ত্র একটি আয়াতে বলা হয়েছে। এর মানেই হচ্ছে এই যে, এ কাজটি স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমানভাবে জরুরী। এ আয়াতদ্বয়ে যেমন রয়েছে আল্লাহর নৈতিক উপদেশ, তেমনি রয়েছে ভীতি প্রদর্শন। উপদেশ হচ্ছে এই যে, ঈমানদার পুরুষই হোক কিংবা স্ত্রীই, তাদের কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা। কাজেই আল্লাহর বিধান মুতাবিক যার প্রতি চোখ তুলে তাকানো নিষিদ্ধ, তার প্রতি যেন কখনো তাকাবার সাহস না করে। আর দ্বিতীয় কথা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের অনিবার্য ফল হচ্ছে অন্তরের পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর বন্দেগী পালনে উদ্যম-উৎসাহ।
পবিত্র মাহে রমজানের সার্বিক শিক্ষাই হচ্ছে এটি। আল্লাহ আমাদের কুরআনের ধারায় অনুপম চরিত্র গঠনে মাহে রমজানকে ওয়াসিলা বানিয়ে দিন।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক