রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাসের নবম দিবস আমরা অতিবাহিত করছি। রমজান মাসে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন ও সংস্কৃতি একটু আলাদা, একটু ভিন্ন। মনকাড়া নানা আয়োজন উপভোগে রাতদিন মুমিন মন থাকে মশগুল। আপনি রমজানের মৌসুমে জনপদের যে প্রান্তেই অবস্থান করুন, ভোরে নানা ধরনের গজলের সুর কানে আসবেই। মুসলিম শিশু -কিশোর স্বেচ্ছাসেবী দল নানা কোরাস তুলে ঘন্টাধ্বনি কিংবা সাইরেন দিয়ে সেহরি গ্রহণের জন্য রোজাদারদের নিদ্রাভঙ্গে প্রয়াস চালায়। যেমন কোথাও কোথাও কিশোররা মসজিদের মাইক থেকে ভোরে গেয়ে ওঠে:
‘রমজানেরই রাতের শেষে/ঘুমিয়ে কেন তুমি এখন
সেহরির যে সময় হলো/ ওঠো ওঠো মুমিনগণ।’
সেহরি অর্থ কোন কিছু পানাহারপূর্বক প্রত্যুষে সুবহে সাদিকের আগে রোজার শুভ সূচনা করা (আমাদের অনেকে সেহরিকে ‘সেহেরী’বলে, এটা শুদ্ধ নয়। তবুও এটা প্রচলন হয়ে আছে)। উল্লেখ্য, সেহরি/সেহেরী ভোরে নিছক একটি খানাপিনার আয়োজন নয়। এটি ইসলাম ধর্মে ইবাদতের শামিল। এ এক পবিত্র মুহূর্ত।
আল কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে : তোমরা পানাহার করো, যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য সাদা সুতা কালো সুতা হতে সুস্পষ্ট না হয়।
রাসুলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন : তোমরা সেহরি খাও। কেননা এতে বড় বরকত নিহিত। -বুখারী শরীফ।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত যায়িদ ইবনে সাবিত (রাদি.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা প্রিয় নবী হুজুরে কারীম (স)-এর সাথে সেহরি খেয়েছি। পরে তিনি ফযরের নামাজ পড়েছেন। সাহাবী যায়িদ (রাদি.) স্মৃতি রোমন্থনের সময় একজন জানতে চাইলেন তখন আজান ও সেহরির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? উত্তরে তিনি জানালেন, ৫০ আয়াত তিলাওয়াত করতে যে সময় লাগে সে সময় পরিমাণ। রাসুলে আকরাম (স) অন্যত্র বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফিরেস্তারা সেহরি গ্রহণকারীর ওপর রহমত ও দোয়া প্রেরণ করেন। -(ফাজায়েলে তাবরানী)।
সুতরাং আমরা যেন সেহরি অনুষ্ঠানকে রমজানের পালনীয় একটি অন্যতম সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করি। কোন ধর্মীয় ব্যাপারে অতিরিক্ত বারাবাড়ি কিংবা কৃত্রিমতার আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। আল্লাহপাক বান্দাকে শুধু উপোস রেখে পরীক্ষা করতে চান তা নয়, পবিত্র ও হালাল পন্থায় পানাহারের যে তাগিদ রয়েছে সেহরির প্রতি ইসলামের উৎসাহ প্রদান সে ইঙ্গিত বহন করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) তো স্পষ্ট বলেছেন: ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার পার্থক্য হচ্ছে সেহরি খাওয়া নিয়ে।’ (ইমাম মুসলিম হাদীসটি আমর ইবনুল আসের (রাদি.) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন)।
সেহরি যথাসম্ভব দেরি করে খাওয়া ভাল। তবে এত দেরি করা উচিত নয় যে, যখন সুবহে সাদিক হওয়ার আশঙ্কা হয়। কেউ যদি সেহরি খুব জলদি খায়, কিন্তু তারপর পান - চা - পানি ইত্যাদি অনেক্ষণ পর্যন্ত খেতে থাকে এবং সুবহে সাদিক হওয়ার অল্প পূর্বে কুলি করে ফেলে তবুও দেরি করে খাওয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি কারও রাতে ঘুম না ভাঙ্গে এবং সে জন্য সেহরি খেতে না পারে, তখন সেহরি না খেয়ে রোজা রাখবে। সেহরি না খাওয়ার কারণে রোজা ছেড়ে দেয়া বড়ই কাপুরষতার লক্ষণ। আমরা যেন এসব বিধিবিধান পালনে সর্তক হই, তাহলেই আল্লাহ তায়ালার রহমতের যে বারিধারা এ মৌসুমে প্রবাহমান তা আমাদের সিক্ত করবে।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক