logo ১৮ মে ২০২৫
রোযার নিয়ত করা ফরজ
০৩ জুলাই, ২০১৪ ১০:২৫:৪৫
image

ঢাকা: আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৪র্থ দিবস। এখন ঘরে ঘরে মসজিদে অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ধর্মপ্রাণ মুসলিম পুরুষ শিশু-কিশোরের সময় কাটে কুরআন তিলাওয়াতে। হাদিসচর্চা ও দ্বীন-দুনিয়ার সুচিন্তায়। সারাদিনের উপবাসব্রত পালন, নানা কর্মব্যস্ততায়ও এতটুকুন দুর্বল হয়ে পড়েন না মুমিনরা। কি যেন এক পরকালীন স্বর্গীয় প্রাপ্তির তামান্না তাদের প্রতিটি মুহূর্ত বিভোর ও ব্যাকুল করে রাখে। ব্যাপক অর্থে, রমজান মাসের সিয়াম সাধনা মুমিনের মাঝে ইশ্ক মহব্বত খোদা তায়ালার প্রতি অবিচল আস্থা সৃষ্টিরই নামান্তর।


সিয়াম অর্থ শুধু রোযা বা উপবাসব্রত পালনই নয়, এর অর্থ আরও ব্যাপক। উপবাসব্রত পালনের সঙ্গে সিয়ামে থাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। এসব অনুশীলনের মধ্যে সিয়াম সাধনার পূর্ণতা নিহিত। যারা এগুলোর কোনটির প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শন করলো, তাদের রোযায় অসল খৎরা বা লোকসানী। এ মাসে একে তো উপবাসের মর্মপীড়া; এর উপর রয়েছে দিনেরাতের সুনির্দিষ্ট ইবাদতের তাগিদ। সব মিলিয়ে একটা যেন পরীক্ষাক্ষেত্র। বস্তুত এ পরীক্ষাক্ষেত্রে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারাই মুমীনের জীবনের বড় সফলতা। এ মাস কষ্টের মাস, এ মাস সাধনার মাস, এ মাস পরীক্ষার মাস বলেই আল্লাহ পাকের কাছে সিয়াম সাধনার মূল্য অনেক। তাই আল্লাহ বলেছেন, যেহেতু এই সিয়াম সাধনা একমাত্র আমার জন্যই করা হয়ে থাকে , সেহেতু আমি নিজ হাতেই এর পুরস্কার দেব।’ -(হাদিসে কুদসী)।


হাদিস শরীফে আরও আছে, ‘কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকজন যখন হিসেব নিকেশ বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে দারুণ উৎকন্ঠায় থাকবে তখন রোযাদাররা এক সুশীতল ছায়ায় বসে সানন্দে পানাহার করবে। উৎকন্ঠিত লোকেরা বলবে- এ কি ব্যাপার ! আমরা হিসাব দিতে হয়রান অথচ তারা কিনা দিব্যি পানাহার করছে।’


তখন উত্তর আসবে: দুনিয়াতে যখন তোমরা সানন্দে পানাহারে মত্ত ছিলে তখন এরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোযা রেখে ক্ষুৎ-পিপাসার যন্ত্রণা সহ্য করেছিল। তাই আজকে তাদের এই আনন্দঘন অবস্থা।


তাই আমাদেরকে রোযা এবং এর আনুষঙ্গিক বিষয়ের প্রতি যতœবান হতে হবে। রোযা পালনের সময় পানাহার ত্যাগ যেমন ফরজ তেমনি নিয়ত করাও ফরজ। আল্লাহতায়ালার প্রতি ঐকান্তিকতা ছাড়া কেবল উদাসীনভাবে অন্যের দেখাদেখি রোযা রাখলে সিয়ামের মর্যাদা পাওয়া যায় না,দরকার খালিস নিয়ত। এ প্রসঙ্গে ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: নিয়ত মুখে না বললেও মনে মনে সংকল্প করতে হবে যে, আমি আজ আল্লাহর নামে রোযা রাখবো। যদি রাত হতে এ নিয়ত করা হয় তাহলে ফরজ আদায় হয়ে যায়। দিনের দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা আগ পর্যন্ত রমযানের নিয়ত করা দুরস্ত আছে। অবশ্য, এ মাসে কেউ যদি খাস করে রমযানের রোযা রাখে বা ফরজ রোযা বলে নিয়ত নাও করে , শুধু এতটুকু নিয়ত করে যে, ‘আজ আমি রোযা রাখবো’ অথবা রাতে মনে মনে বলে যে, ‘আগামীকাল আমি রোযা রাখবো’ - এতে রমযানের রোযা সহীহ হবে। তবে বাংলা অথবা আরবীতে শুদ্ধভাবে নিয়ত পড়ে নেয়াই উত্তম। এর দ্বারা প্রতিটি রোজা, প্রতিটি ক্ষণের প্রতি একটি বিশেষ যতœ, সতর্কতা ও দরদ সৃষ্টি হয়। আসুন আমরা সেই দরদী মন ও মননে সিয়াম সাধনায় নিমগ্ন থাকি।


অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক