logo ১৫ জুন ২০২৫
রমজানের ফজিলত
ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
০২ জুলাই, ২০১৪ ১৪:৩৫:০৯
image

ঢাকা: বিশ্ব মুসলিমের নেকি অর্জনের বসন্তকাল পবিত্র রমজানুল মুবারক আমাদের মাঝে সমাগত। রসূল (স.) রোজা শুরু হওয়ার আগে তার সাহাবীদেরকে কিভাবে সচেতন করতেন নিম্নের হাদীস হতে আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি।


হযরত সালমান ফারসী (রা.)হতে বর্ণিত তিনি বলেন,শাবান মাসের শেষ দিন রসূলুল্লাহ (স.) আমাদিগকে খুতবা শুনালেন, যেখানে তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমাদের ওপর একটি মহান ও পবিত্র মাস আসছে, যার মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার রাত থেকে উত্তম।‘যে মাসের দিনগুলোতে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন এবং রাতের নামাযকে (তারাবিহকে)নফল করেছেন (উম্মতের জন্য সুন্নত)।যে ব্যক্তি ওই মাসে কোন একটি সদভ্যাস (বা সৎকাজ) করে তা ছওয়াবের দিক দিয়ে অন্য মাসের একটি ফরয কাজের সমতুল্য হয়ে থাকে।আর একটি ফরয আদায় করলে, তা অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায়ের সমতুল্য ছওয়াবের হয়ে থাকে।এটা হল ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য অবলম্বনের প্রতিদান হচ্ছে বেহেশতে। এটা পরোপকার ও সহানুভূতির মাস এবং এটা এমন একটি মাস যাতে ঈমানদারগণের রুজি বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায়, ইহার বিনিময়ে তার সমস্ত গুণাহ মাফ হয়ে যায় এবং সে জাহান্নাম হতে মুক্ত হয়।তাছাড়া সে উক্ত রোযাদার ব্যক্তির তুল্য ছওয়াবও পাবে। এতে অবশ্য উক্ত রোযাদারের ছওয়াবে একটুও কমতি করা হবে না।


আমরা বললাম ইয়া রসূলুল্লাহ (স.)! আমাদের এমন কিছু সংস্থান নাই যা দ্বারা আমরা রোযাদারকে ইফতার করাতে পারি। তদুত্তরে হুযুর (স.) বললেন, এই ছওয়াব আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকেও প্রদান করবেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে এক ঢোক দুধ বা একটি খোরমা কিংবা সুমিষ্ট পানি দ্বারা ইফতার করাবে।আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে আমার ‘হাউজ কাওছার’ হতে এমনভাবে পর্যাপ্ত করে পান করাবেন যে, বেহেশতে না যাওয়া অবধি তার আর পিপাসা লাগবে না।


আর ওই মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক ক্ষমার ও তৃতীয় দশক জাহান্নাম হতে মুক্তির জন্য নির্ধারিত। যে ব্যক্তি ওই মাসে স্বীয় চাকরের ওপর কার্যভার লাঘব করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম হতে আযাদ করে দেন।


রাসূল (সা.)বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রাত্রি সমাগত হতেই শয়তান ও দুষ্টমতি জ্বিনগুলো শৃঙ্খলিত হয় এবং জাহান্নামের দ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, একটি দরজাও খোলা থাকে না। আর বেহেশতের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়, ইহার একটাও বন্ধ থাকে না।


আর কোন একজন গায়েবী আহ্বানকারী উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকেন হে পুণ্যার্থীগণ অগ্রসর হও! হে পাপাত্মার দল পিছিয়ে যাও! এই সময় আল্লাহর পক্ষ হতে বহু দোযখী মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। এমনি করে প্রত্যেক রাত্রিতেই আহ্বান করা হয়।


রসূলুল্লাহ (স.) আরো বলেছেন,‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সঙ্গে ও ছওয়াবের আশায় রোযা রাখে, তার অতীত গোনাহ মাফ হয়ে যায়।’ আর যে ব্যক্তি এই মাসে ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় রাত জেগে (তারাবির) নামায পড়ে, তার অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।


যে ব্যক্তি শবে ক্বদর রাতে ঈমানের সঙ্গে ছওয়াবের আশায় রাত জাগরণ করে নামায পড়ে, তারও অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।


নবী করীম (স.) বলেছেন,‘মানুষের প্রত্যেক সৎকর্মের ছওয়াব দশ হতে সাতশ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। শুর্ধমাত্র রোজা ছাড়া। কেননা আল্লাহ তায়ালা হাদীসে কুদসীতে উল্লেখ করেন, রোজা একমাত্র আমার জন্যই করা হয় সুতরাং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে প্রদান করব। যেহেতু রোযাদার স্বীয় কামপ্রবৃত্তিকে দমন ও আহারাদি পরিহার করে থাকে কেবলমাত্র আমারই জন্য।


হুযুর (স.)আরও বলেছেন,রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফ্তারকালে অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে।তিনি আরো বলেন, রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকে অম্বরের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। তিনি বলেন, (রোযাদারগণের পক্ষে) রোযা হচ্ছে ঢালস্বরূপ।’


সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউই রোযা অবস্থায় নির্লজ্জ কথা বলবে না এবং বাজে বকবে না। যদি কেউ রোযাদারকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে দেয় যে, আমি রোযাদার।’


নবী করীম (স.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি রোযা রাখা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ হতে বিরত রইল না, তার উপবাসে আল্লাহর কিছুই যায় আসে না।’


তিনি সাবধান করে বলেন যে, বহু রোযাদার এমনও রয়েছে যে, ক্ষুধায়-পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ব্যতীত তাদের রোযা রাখায় আর কোন ফল নেই। এমনিভাবে বহু রাতজাগা নামাযী রয়েছে, যাদের রাত জাগরণ ব্যতীত অন্য কোন লাভ হয় না।হযরত নবীয়ে করীম (স.) বলেছেন যে,আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন, যে রোযাদারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে বিরত থাকল না, তার শুধু পানাহার হতে বিরত থাকায় কোন লাভ নেই।


আল্লাহ বলেন,তোমরা তোমাদের রবের দেয়া ক্ষমার দিকে দ্রুত অগ্রসর হও। আর ওই বেহেশতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও জমীনব্যাপী! যা তিনি কেবল মুত্তাকীন বা পরহেজগারদের জন্যই প্রস্তুত করে রেখেছেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সঠিকভাবে রোজা রেখে আল্লাহর রেজামন্দী হাসিল করা। আর এর মাধ্যেমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।


(ঢাকাটাইমস/২জুলাই/এমআর/ঘ.)