আল্লাহ বলেন
তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব
০১ জুলাই, ২০১৪ ১১:০১:২৪

আজ পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় দিবস। চতুর্দিকে অন্য এগারো মাসের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে অতিবাহিত করেছি আজকের সকাল। ভোর রাতে উঠে সেহরি গ্রহণ আবার ফজরের বড় জামাতে অংশগ্রহণের ব্যতিব্যস্ততা। কারণ রহমতের মাসের সূচনা, রহমতের দশকের সূচনা। এ বরকতপূর্ণ মাসের প্রথম দশককে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) রহমতের দশক, দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাতের এবং সমাপনী দশ দিনকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির বলে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়া আখেরাতে কল্যাণ, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যপ্রত্যাশী মুসলমানরা তাই অঞ্জলি ভরে খোদা লা শারিকের রহমত কামনায় নেমে পড়েছেন মাহে রমজানে। জীবনের কঠিন সময়ও যাদের চোখ থেকে দু’ফোঁটা নোনা পানি বের হয়নি, তাদের চোখ দিয়েও এখন নেমে আসছে খোদার ভয়ে দোয়া মুনাজাতে তাসবীহ তিলাওয়াতে থেমে থেমে অশ্রুধারা। আল্লাহর রহমতকে এভাবে দরদ ও কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘ফাযকুরুনী আযকুরুকুম’ তোমরা আমাকে স্মরণ কর। আমি তোমাদের স্মরণ করব। আল্লাহর অনেক নাম রয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, সেসব নাম ধরে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব এবং তোমাদের মনষ্কামনা পূর্ণ করব। লক্ষণীয় বিষয় হলো আল্লাহর সেসব নামগুলোর অধিকাংশই দয়া করুণা, দান মার্জনা প্রভৃতি মর্মার্থে ভরা।
আল্লাহতায়ালার রহমত প্রাপ্তির জন্য তাঁর সেই মর্যাদাপূর্ণ জ্ঞান, ভক্তি ও বিশ্বাস আমাদের থাকা উচিত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআনে বেহেশতে খাবার পানি ও অন্যান্য আকর্ষণীয় বিষয়ের চেয়ে আল্লাহর নাম, তাঁর বৈশিষ্ট্য ও কার্যবলীর উল্লেখ বেশি রয়েছে। যেসব আয়াতে আল্লাহর নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা আখেরাতের বর্ণনা সংবলিত আয়াতের মর্যাদার চেয়ে বেশি।’ যদি এ কথা নির্ধারিত হয় যে আল্লাহ সৃষ্টিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তবে তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন ব্যতীত কি তাঁকে এবাদত করা সম্ভব? বস্তুত সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ অব্যাহতভাবে তখনই আসে যখন সে তাঁর প্রতিপালককে জানা এবং তাঁর নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে অসতর্ক না হয়। কারণ এরূপ জ্ঞানের পরিমাণ দ্বারা তার ঈমান বৃদ্ধি পায় ও বিশ্বাস শক্তিশালী হয়। আল্লাহর নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্বন্ধে জ্ঞান, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মহান প্রভাব সৃষ্টি করে, ফলে উত্তম জীবনযাপন সম্ভব হয় এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সুখী হয়। এ উম্মতের পূর্ববর্তী লোকগণ প্রতি পদক্ষেপে ইসলামের পদ্ধতি এবং আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও উত্তম নামসমূহের উজ্জ্বল পথে চলেছেন। আল্লাহর সমস্ত নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহে বিশ্বাস, এ বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করা এবং মহানবী (স) আল্লাহর জন্য যা প্রতিষ্ঠা করেছেন তা প্রতিষ্ঠা করা, যা নিষেধ করেছেন তা নিষেধ করার ওপর পুণ্যাত্মা সাহাবা ও তাবেয়িগণ একমত ছিলেন। আল্লাহপাক নিজের সম্বন্ধে আল কোরআনে বলেন- ‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ ইমাম তিরমিযি (রাহ) বলেন, নাঈম ইবনে হামাদকে (রহ) আমি বলতে শুনেছি, যে আল্লাহকে কারও সঙ্গে তুলনা করে সে কাফির হয়ে যায় এবং আল্লাহ নিজেকে যে বৈশিষ্ট্য দ্বারা বর্ণনা করেছেন তা যে অস্বীকার করে সেও কাফির হয়ে যায়। আল্লাহর নাম বৈশিষ্ট্যসমূহে এ ছিল পূর্ববর্তী মহান লোকদের বিশ্বাস। তাঁদের পবিত্রতা বর্ণনা করে আল্লাহপাক বলেন, ‘অতএব তাঁরা যদি সেরূপ ঈমান আনে যেরূপ তোমরা বিশ্বাস করেছ তাহলে তাঁরা সঠিক পথ লাভ করবে। সুতরাং এখন তাঁদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।’-(সুরা বাকারা-১৩৭)। আল্লাহর কয়েকটি পবিত্র নামের ছায়া, তাঁর অর্থের ফসল ও তাঁর প্রভাবের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো : আল্লাহ হচ্ছেন তিনি যাঁর ভালবাসা, ¯েœহ ও সম্মানে অন্তর হতবুদ্ধি হয়ে যায়, যে তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর উচিত হলো আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠা, ইবাদতে তাঁকে একক স্থির করা ও তাঁর সঙ্গে শিরক করা থেকে দূরে থাকা। তাঁর অন্যতম নাম হলো রাহমান (পরমদাতা) ও রাহীম (অতীব দয়ালু)। আমরা যেসব অবস্থায় আছি ও যেসব বস্তু লাভ করেছি তাহলো আল্লাহর রহমতের ফল। রাসূলদের প্রেরণ, আসমানীগ্রন্থসমূহ অবতরণ, নিরাপত্তা, শান্তি, আরাম, স্বাস্থ্য, সম্পদ, সন্তান, দিনরাত, বৃষ্টি-বাদল ও গাছপালা এসব হচ্ছে বান্দাদের জন্য আল্লাহর রহমত। তিনি হচ্ছেন সামী (সর্বশ্রোতা) ও বাছীর (সর্বদ্রষ্টা)। কোন গুপ্ত বস্তু তাঁর কাছে গোপন থাকে না। হযরত ওমরের (রা.) সময়ে এক মহিলা দুধে পানি মেশাতে মনস্থ করল এবং বলল, নিশ্চয় ওমর (রা.) আমাদের দেখবেন না...। তাঁর ঈমানদার কন্যা বলল, যদি ওমর (রা.) দেখে না থাকেন, নিশ্চয় ওমরের (রা.) পালনকর্তা আমাদের দেখেন। তুমি ভরসা কর পরাক্রমশালী, পরম দয়ালুর ওপর, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি নামাজে দ-ায়মান হও এবং নামাজীদের সঙ্গে উঠাবসা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।-(শুআরা : ২১৭-২২০)। সুতরাং আমরা যদি মহান আল্লাহু সুবহানা তায়ালাকে উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী জেনে দৈনন্দিন জীবন পরিচালিত করি তাহলে অনৈতিকতা, বিশৃঙ্খলা, পরের অধিকার হনন, নাফরমানি প্রভৃতি গুনাহের কাজ আমাদের দ্বারা হতে পারে না, এ রহমতের মাসে আল্লাহর রহমতই আমাদের জন্য অবধারিত।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক