রমজান রহমতের দরিয়ায় কাটলে সাঁতার গুনাহ যাবে ঝরিয়া
০২ জুলাই, ২০১৪ ১০:৪৩:২০

ঢাকা: ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদ- যার অন্যতম হচ্ছে সিয়াম বা সাওম। রমজানুল মোবারকের একটি মাস শরীয়তের দৃষ্টিতে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তাদের জন্য সুবহি সাদিকের পূর্ব মুহূর্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার কামাচার অনাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা তথা সিয়াম পালন করা ফরজ। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা মুসলিম জাতির জন্য এক বড় নিয়ামত স্বরূপ। এ মাসের সব অনুষ্ঠানমালা একজন মুসলমানকে যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে দুনিয়াতে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করে। আর আখেরাত জীবনের জন্য অফুরন্ত পুরস্কারের খোশখবরী নিয়ে আসে।
সিয়াম আরবী শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা, আরাম করা, বিশ্রাম করা, উপোস থাকা। ইসলামের অন্য বুনিয়াদ যেমন সালাত ও জাকাতের উল্লেখ কুরআন মজিদের বিরাশির অধিক স্থানে রয়েছে। ইমান ও হজের উল্লেখও বেশ আছে। সিয়াম বা রোজার উল্লেখ দেখা যায় মাত্র দু/এক জায়গায়। যেমন সূরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৭ আয়াতে। এসব আয়াতে সিয়াম পালনের নির্দেশ ও বিশদ বিধিবিধান বিধৃত হয়েছে। কুরআন মাজিদের সূরা মরিয়ামের ২৬ নং আয়াতেও ‘সিয়াম’ শব্দটির উল্লেখ দেখা যায়। এখানে সিয়াম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে নীরবতা পালন বা মৌনতা অবলম্বন অর্থে। ইরশাদ হচ্ছে : (হে মরিয়াম!) সুতরাং আহার কর, পান কর ও চোখ জুড়াও। কোন মানুষকে যদি তুমি দেখ তখন বলবে আমি রহমান বা দয়াময় প্রভু আল্লাহর উদ্দেশে সিয়াম পালন করছি। সুতরাং আমি আজ কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলব না।’
আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের জন্য ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো রোজাও পর্যায়ক্রমে ফরজ করা হয়। শুরুতে নবী (স) মুসলমানদের মাত্র প্রতি তিন মাসে তিনটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে প্রিয় নবী হযরত (স) মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করে আসেন। এরপর একে একে বহু বিধান আল্লাহ তায়ালা নাযিল করতে থাকেন। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ অধিকাংশের মতে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের শাবান মাসের মধ্যভাগে আল্লাহ তায়ালা সিয়ামের বিধান নাযিল করেন। তিনি ইরশাদ করেন : ইয়া আয়্যুহাল লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল লাজিনা মিন কাবলিকুম——।’ অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো যেমন দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের। যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো (২: ১৮৩)।
দ্বিতীয়ত: নাজিল হওয়া বিধানটি হলো এই : শাহরু রামাদানাল লাজি উনজিলা ফীহিল কুরআন অর্থাৎ রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন যা মানুষের হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক মাসটি পাবে সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিন্বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্যদিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ব বর্ণনা কর আর যাতে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (২: ১৮৫)।
উপরোক্ত আয়াতে সিয়াম পালনের কেবল সুস্পষ্ট বিধানই আসেনি, বরং সেই সঙ্গে কোন্ মাসে কোন্্ সময় থেকে কোন্ সময় পর্যন্ত কিভাবে সিয়াম পালন করতে হবে তারও বর্ণনা এসেছে। উপরন্তু এখানে পবিত্র রমযান মাসে সিয়াম পালনের বাধ্যবাধকতার ও যুক্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ রমজান মাসেই প্রথম কুরআন মজিদ নাজিল হয়। গোটা কুরআন মজিদ লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। সিয়ামের বিধান নাজিল হবার চৌদ্দ বছর আগে ৬১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ রমজান রাতে আল্লাহ জাল্লাহ শানুহু এই মহান কিতাব লাওহে মাহফুজ থেকে নাজিল করেন। হেরা গুহায় গভীর রাতে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স) এর নিকট ফেরেস্তা হযরত জিব্রাইল (আ) তা বহন করে আনেন। সেদিন আঁ-হযরত (স) নবুয়ত ও রিসালাতের অভিষেকে অভিষিক্ত হন। ঐ রাতেই কুরআন শরীফ প্রথম আসমানে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে অংশ অংশ করে প্রয়োজনানুসারে তা হুজুরের (সঃ) নিকট প্রায় ২৩ বছর ধরে নাজিল হতে থাকে।-(নুরুল আনোয়ার)।
সে হিজরী দ্বিতীয় বর্ষ থেকে একমাত্র মুসলিম জাতি ভিন্ন ও পবিত্র আঙ্গিকে সিয়াম সাধনা করে আসছে। আমাদের মহানবীর প্রবর্তিত শরীয়তের এক অনুপম সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের এ সিয়াম সাধনায়।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক