logo ১৮ মে ২০২৫
পরকালীন নাজাত ও মুক্তি মিলবে তারাবীহর সালাত আদায়ে
০৬ জুলাই, ২০১৪ ১০:৩১:২৩
image

মহান আল্লাহ পাক এ পবিত্র মাসে দিনের বেলায় আমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করেছেন। আর তার মহান নবী হযরত রাসূলে কারীম (স) রাতের ভাগে আমাদের জন্য তারাবীহর নামাযকে সুন্নত করেছেন। এ নামাযের ফযিলত ও তাৎপর্য অনেক। এটি পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিখ্যাত হাদিস সঙ্কলন নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলে মাকবুল (স) ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি ইমানী প্রেরণা ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে এ মাসে রোযা রাখবে এবং নামায পড়বে সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এরূপ মুক্ত হবে যেন আজই তার জননী তাকে প্রসব করেছে।


আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ কুদরত যে, তিনি মুসলমানদের হৃদয়ে সারা দিনের সিয়াম সাধনার পর তারাবীহ্ সালাতকেও নিষ্ঠার সাথে পালন করার জন্য অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা দান করেছেন। তারাবীহ্ নামাযের প্রতি যুগে যুগে মুসলিম জাতি যে গভীর দরদ ও প্রেমের পরিচয় দিয়ে এসেছে তার তুলনা ধর্মের ইতিহাসে মেলা ভার। এটি হলো হুব্বে দ্বীন ও হুব্বে রাসূলের পরিচয়। বস্তুত বহু প্রামাণ্য হইদস গ্রন্থেই রাসূলুল্লাহ্র (স) ইমামতিতে সালাতে তারাবীহ্ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে একাধারে তিনদিন জামাতের সাথে তারাবীহ্ আদায়ের পর জামাত অনুষ্ঠান থেকে তিনি বিরত হন। কেননা তার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, হয়তো এটা ফরজ করে দেয়া হবে আর উম্মতের জন্য তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আঁ হযরতের (স) উপর লাখো দরুদ ও সালাম, তিনি এ নামাযের গুরুত্ব ও উম্মতের সুবিধা আর কল্যাণ বিবেচনা করে একে সুন্নাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। হযরত রাসূলে করীম (স) ওফাতের মাধ্যমে যখন ওহীর যুগের সমাপ্তি ঘটলো তখন সাহাবাগণ সর্বসম্মতভাবে তারাবীহর জামাত শুরু করলেন। বলা বাহুল্য, সালাতে তারাবীহর ব্যাপারেও তারা তাদের নিষ্ঠাসুলভ ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। তাইতো আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট।


সাহাবাপরবর্তী যুগের উম্মতগণও এ ফজিলতময় ইবাদতের হিফাজত ও সংরক্ষণের ব্যাপারে অত্যধিক যতœবান ছিলেন। এমনকি এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা হকপন্থীদের বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকরূপে স্বীকৃতি লাভ করল। আমরা যেহেতু সালফি সোয়ালিহীন তথা পূর্ববর্র্তী সৎকর্মশীলগণের উত্তরাধিকারের গর্বিত দাবিদার, তাই আমাদের উচিত মর্যাদা বৃদ্ধিকারক সালাতুত তারাবীহ্ ব্যক্তি ও সমাজজীবনে জারি ও কায়েম রাখা। এ পবিত্র নামায আমাদের পরকালীন নাজাত ও মুক্তির জন্য যেমন সহায়ক হবে, তেমনি এর চর্চা ও শিক্ষা আমাদের পার্থিব জীবনে একতা, শৃঙ্খলাবোধ ও পারস্পরিক হামদর্দির পথ প্রশস্ত করছে। আল্লাহ আমাদের পবিত্র তারাবীহ্ নামাযের পাবন্দি বানিয়ে দিন এবং এর বরকতে আমাদের দুনিয়া আখিরাত উজালা করুন। আমিন। উল্লেখ্য, পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের এক হৃদয়কাড়া সংস্কৃতি ও অবলম্বন। এর মাধ্যমে পবিত্র হজ ছাড়া বাকি ৪ রোকন ইমান, নামায, রোজা ও যাকাতের চর্চা ও অনুশীলন আমরা প্রত্যেক্ষ করি। এ মাসে রোজার সাথে সাথে সাহরী ইফতার তারাবীহ্ তিলাওয়াতগুলো আমাদের এক নতুন সংস্কৃতির ধারায় অবগাহন করতে সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে তারাবীহ নামাযে কুরআন খতমের বিষয়টি এক বড় ধহ্নর নিয়ামক শক্তি। বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি, মুসল্লিদের রুচি ও আভিজাত্য বৃদ্ধি এবং কুরআন শরীফ হিফজকারী বা হাফিজদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে তারাবীহ্ নামাযে বেশ নতুনত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের উচিত হাফেজ সাহেবদের সামাজিক মর্যাদা দেয়া এবং তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকে সুনজর দেয়া, যাতে পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা বা হাফেজ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ থাকে। একই সাথে খতম তারাবীহ্ শুদ্ধতার দিকেও মনোযোগী হতে হবে। বস্তুতঃ কুরআন নাজিলের পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত রমজানে তিরিশ দিনব্যাপী তারাবীহ্ নামায পড়া যেমন সুন্নত, তেমনি এ মাসব্যাপী তারাবীহ্তে কুরআন খতম করাও সুন্নত। অবসরে যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে না বা কুরআন পড়তে জানে না তাদের জন্য তারাবীহতে খতম শোনা , সর্বোপরি পবিত্র নামাযে সকলে সুললিত কন্ঠে গোটা কুরআন শোনা অত্যন্ত জরুরী ও সুখকর বিষয়। এ সময় যারা আরবী ভাষায় পারদর্শী তারা আয়াতের মর্ম অনুধাবনেও সক্ষম হয়। অবশ্য এ জন্য চাই যোগ্য হাফেজ ও প্রয়োজনীয় সময় বরাদ্দ।


শীতের মৌসুমে যেমন অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে তেমনি রমজানের আগ মুহূর্তে খতমে তারাবীহ্ পাওয়ার মানসে নগরীতে সংঘটিত হতে থাকে কুরআনে হাফিজগণ। বর্তমানে মসজিদের সংখ্যার তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে হাফিজ সাহেবদের সংখ্যা।


অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক