রমজানে কুরআন তেলাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে
০৪ জুলাই, ২০১৪ ১২:৫৯:৫৮

পবিত্র মাহে রমজানুল মুবারকের ৫ম দিবস আমরা অতিবাহিত করে চলেছি। গোটা রমজান মাসের বড় পরিচিতি ও অনুশীলন প্রতীক হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম। কারণ, আল্লাহতায়ালা এ মাসের পরিচয় দিতে গিয়ে সূরা বাকারায় প্রথমেই বলেছেন, এই সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এর মর্মার্থ কুরআন নাযিলের মাধ্যমে যেভাবে এ মাসকে সম্মানিত করা হয়েছে ঠিক সেভাবে মানব জাতির একমাত্র কল্যাণ ও উপকারিতা নিহিত রয়েছে এ মহানগ্রন্থ তিলাওয়াত, অনুধাবন ও বাস্তব জীবনে তা অনুসরণের মধ্যে। আসুন না আমরা এ মাসের শান্ত শীতল সাধনাময় পরিবেশে সে বিষয়টি হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। মানব জাতির জন্য মহান রষ্টা আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াত বা দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্থ আল কুরআন। কোন টেবিল কিংবা র্যাকে দেখলে অমনিতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। হাতে স্পর্শ করলে যেন পুরো শরীর স্বর্গীয় আমেজে শিহরিত হয়ে ওঠে। কি অপরূপ শ্রুতিমধুর না এ তিলাওয়াত! এ শ্রুতিমধুর তিলাওয়াত শুনে কত মানুষের পাষাণ হৃদয় গলে তাদের মুখ দিয়ে মহান কালিমা তায়্যিবার পবিত্র বাক্য উচ্চারিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সত্যিই এটি গোটা মানব জাতির জন্য যুগ যুগ ধরে এক পরীক্ষিত পথপ্রদর্শক ও বরকত লাভের আধার। এখানে শিক্ষা ও সভ্যতা অর্জনের সব উপাদান ও সূত্র নিহিত রয়েছে। এককালে এটিকে মর্যাদা দান, তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে মুসলিম জাতির সমৃদ্ধময় গৌরবদীপ্ত উত্থান ঘটেছে। এর আগে আল্লাহতায়ালা মানব জাতির জন্য যে সব আসমানী গ্রন্থ প্রেরণ করেছিলেন, তা কেবল সমসাময়িক ও স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য। সূরা আল ইমরানের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে : ওহে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি কি তাদের দেখেন নি? যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহ্বান করা হয়েছিল, যাতে তাদের মধ্যে নানা বিষয়াবলী নিয়ে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী জাতিগুলোর জন্য ছিল কিতাবের অংশ বিশেষ; যা দিয়ে তারা বিচার আচার সম্পন্ন করত।
পক্ষান্তরে কোরআনুল কারীমের ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে: ‘এ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। (এটি) পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য...।’ উদ্ধৃত অংশে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কুরআন শরীফ তাদেরই সঠিক পথ দেখাবে, যারা সঠিক পথ পাওয়ার জন্য আগ্রহী ও উদগ্রীব থাকে, হিদায়াতের মন-মানসিকতা নিয়ে এ পবিত্র গ্রন্থ তিলাওয়াত করে। যারা পূতঃপবিত্র মন-প্রাণ নিয়ে এটি অধ্যয়ন ও তিলোয়াত করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তারা অবশ্য সৌভাগ্যময় জীবনের অধিকারী হবে। মাহে রমজান তার সেই তিলাওয়াতের আহ্বান ও সুযোগ আমাদের হাতছানি দিচ্ছে।
এ কুরআনকে বলা হয়েছে শিফাউন লিন-নাস মানব জাতির জন্য নিরাময় বস্তু। আল্লাহতায়ালা বলেন : এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা ধারা, আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশাবলী।’-(৩ : ১৩৮)। কুরআনুল কারীম মানুষকে ন্যায় বিচারে উৎসাহিত করে, হালাল-হারাম চেনার পথ দেখায়, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি দূরীভূত করে সুন্দর, শান্তি পূর্ণ পরিবেশ উপহার দেয়। সূরা আল ইমরানে আল্লাহপাক একদীর্ঘ আয়াতে মুসলমানদের তার করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রুজ্জুকে সুদৃঢ় হাতে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তার অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা অবস্থান করেছিলে এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার।’-(আয়াত নং-১০৩)। আল্লাহপাক তার বান্দাদের কল্যাণ কামনায় উপরোক্ত অংশে কুরআনুল কারীমে তিলাওয়াত নিয়ে যেসব উৎসাহব্যঞ্জক অমিয় বাণী দিয়েছেন, আসুন আমরা তা হৃদয়ে ধারণ করি, শপথদীপ্ত হই আমলের মাধ্যমে অঞ্জলি ভরে তার কল্যণ গ্রহণের।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক