ঢাকা: মানব জীবনে চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ তার মনে গ্রোথিত মূল্যবোধ ও গুণাবলীর আলোকেই সম্পাদিত হয়। দার্শনিক ইমাম গাজ্জালীর মতে, মানব মনে যেসব গুণাবলি জাগরিত হয় বাহ্যিক কাজকর্মে তারই প্রতিফলন ঘটে।চরিত্রবান লোককে সমাজের সবাই শ্রদ্ধা করে। এজন্য বলা হয়, money is lost nothing is lost, health is lost something is lost but charecter is lost everything is lost.
সচ্চরিত্র গঠনের জন্যই যুগে যুগে সংস্কারকরা মানুষের সংশোধন ও পবিত্র জীবন যাপনের পন্থা হিসেবে তাদের আত্মার পরিশুদ্ধি ও মূল্যবোধের জ্ঞান প্রথমেই শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের উন্নতি-অবনতি, উত্থান -পতন, মান-সম্মান ইত্যাদি সব কিছুই তাদের মানসিক বিকাশ ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার ওপরই নির্ভর করে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা তাঁদের ভাগ্যে পরিবর্তনের চেষ্টা না করে। (সূরা আর-রাদ,আয়াত ১১)
চারিত্রিক উন্নতি বিকাশকে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।এমনকি তা ইসলামী শিক্ষার অন্যতম একটি কোর্স হিসেবে পরিগণিত করা হয়। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ মতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র মানব সমাজের চারিত্রিক উন্নয়নে প্রচুর নির্দেশনা বিদ্যমান। মূলত মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য এ চরিত্রের আলোকেই হয়ে থাকে। আখলাকের মাধ্যমেই মানুষ মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত মানে উন্নীত হতে পারে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। এ বিধানের পরিপূর্ণতার জন্য তাতে উন্নত চরিত্রের বিধান থাকা আবশ্যক। তাই ইসলামে আখলাকুল হাসানাহ্ তথা উন্নত চরিত্রের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। নিম্নের আলোচনায় তার প্রতি ইঈিত প্রদান করা হচ্ছে।
পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের নিমিত্তে আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন।আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে পৃথিবীতে পাঠানোর অন্যতম কারণ সচ্চরিত্রের বিকাশ সাধন। নবী করীম (স.) বলেন: ‘আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই পাঠানো হয়েছে।’ একদা জনৈক ব্যক্তি রসূল (স.) কে দ্বীনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘উত্তম চরিত্র।’ এ কথা দ্বারা বুঝা যায় উত্তম চরিত্র দ্বীনের অন্যতম একটি রুকন,যা ব্যতীত দ্বীনের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। যেমন হজ সম্পর্কে রাসূলের বাণী: ‘হজের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন হচ্ছে আরাফায় অবস্থান করা, যা ব্যতীত হজ আদায় হয় না, তেমনিভাবে সচ্চরিত্রতা ব্যতীত দ্বীন ও পরিপূর্ণ হয় না। সচ্চরিত্র ব্যক্তিরা যেসব জিনিস লাভ করবেন তা হলো:
*কেয়ামতে আমল নামা ভারী হওয়া: এ প্রসঙ্গে রসূলের বাণী: কেয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের সময় আল্লাহ ভীতি ও চরিত্রতার গুণ মুমিনের আমলনামাকে ভারী করবে।
*মুমিনদের মানগত বিন্যাস: মুমিনরা সবাই ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে গুণগত দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। একদা জনৈক ব্যক্তি রসূল (স.) কে উত্তম ঈমানদার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যে অধিক চরিত্রবান সেই উত্তম।
*কেয়ামতে রসূলের নৈকট্যতা অর্জন করা: মুমিনরা কেয়ামতে রাসূল (স.) এর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে সবাই এক রকম হবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূল (স.) বলেন: কেয়ামতের দিবস তোমাদের মধ্যে আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় ও অবস্থানের ক্ষেত্রে অধিক নিকটবর্তী হবে তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের লোকরাই।
*পরকালে মুক্তির উপায়: ইসলামের অপরিহার্য ফরজ তথা নামাজ-রোযা পালন করা সত্ত্বেও পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত ও জান্নাত লাভের জন্য আখলাক তথা উত্তম চরিত্রের কোন বিকল্প নেই। একদা এক ব্যক্তি রসূল (স.) কে নামাজী ও রোজাদার হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশীদের কষ্টদানকারিণী জনৈকা মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই,সে জাহান্নামী।
*রসূল (স.) এর আখলাক সম্পর্কে দোয়া: রসূল (স.) নিজে গুণাহমুক্ত হয়েও নিজের চরিত্র সুন্দর করার তৌফিক অর্জনের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। যেমন তিনি দোয়ায় বলতেন: আল্লাহ তুমি আমার গঠন-আকৃতি সুন্দর করেছ, আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।
*আল্লাহ কর্তৃক রসূল (স.) এর চরিত্রের প্রশংসা: পবিত্র কুরআনের বাণী:আপনি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আয়াতে মহান আল্লাহ কর্তৃক রসূল (স.) এর আখলাকের প্রশংসা করার মাধ্যমে ইসলামে এর অবস্থান সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে।
*কুরআনে আখলাকের আয়াতের আধিক্য: পবিত্র কুরআনের প্রচুর আয়াতে আখলাকের বিবরণ ও চরিত্রবানদের প্রশংসার বাণী উদ্ধৃত হয়েছে। মক্কী ও মাদানী উভয় সূরাগুলোতে আখলাকের নির্দেশ বেশি থাকায় এর গুরুত্বেরও আধিক্য বুঝা যায়,যা থেকে কোনো মুসলিমের দূরে থাকা অসম্ভব। সুতরাং সৎ চরিত্র গঠনের মাধ্যে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করা প্রত্যেকটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।
(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এমআর)