ঢাকা: ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলোর একটি হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক। এবার সেটি ভেঙ্গে নবীজির মৃতদেহ অন্য একটি গোরস্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গেছে। সৌদি আরবের একটি প্রভাবশালী মহল এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ ও ডেইলি মেইলসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর দিয়েছে।
সৌদি আরবের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত যে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে-মসজিদে নববী থেকে রাসুলের রওজা মোবারক সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রস্তাবটি মসজিদে নববী’র পরিদর্শকদের মধ্যেও বিলি করা হয়েছে।
৬১ পৃষ্ঠার এ সংক্রান্ত নথিপত্র থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক পার্শ্ববর্তী ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থানে সরিয়ে নেয়া হতে পারে এবং রাসুল (সা.)-কে এমনভাবে দাফন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে যাতে অন্য কবর থেকে এটি আলাদা করা না যায়। মোটকথা রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক কোনটি তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত থাকবে না।
বর্তমানে রওজা মোবারকের আশেপাশে যেসব কক্ষ রয়েছে, সেগুলোও ধ্বংসের প্রস্তাব করা হয়েছে এসব নথিপত্রে। মহানবী (সা.) এর পরিবারের সদস্যরা এসব কক্ষ ব্যবহার করতেন। প্রস্তাবে মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজটিও ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। এই সবুজ গম্বুজের নিচেই মহানবীর মৃতদেহটি শায়িত রয়েছে।
ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. ইরফান আল-আলাভি বলেছেন, এরইমধ্যে মসজিদে নববীর আশপাশের সব কিছু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখন এর চারপাশে রয়েছে শুধু বুলডোজার। তারা চায় না হাজীরা সেখানে যাক এবং জিয়ারত করুক। মাজার জিয়ারত করাকে তারা শিরক বলে মনে করে।
উল্লেখ্য, সৌদি সরকার ওয়াহাবি বা সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী। এ মতবাদে বিশ্বাসীরা মাজার জিয়ারতের বিপক্ষে। এর আগেও তারা ইসলামের ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মাজার ধ্বংস করেছে।
রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান। প্রতি বছর লাখো-কোটি মুসলমান মহানবী (সা.)-র রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।এ রওজা মোবারক ধ্বংসের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে মুসলিম বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্কের ঝড় উঠতে পার বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীন সৌদি রাজপরিবারের গদিও উল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছ।
শিক্ষাবিদ ড. ইরফান আল-আলাওয়ী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, শিয়া-সুন্নি এই দুই সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে পরিচিত মসজিদে নববী সংস্কারের যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে পুরো মুসলিম বিশ্বে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে।
এমনিতেই ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া-সুন্নি সংঘাত বেড়ে যাওয়ায়, সৌদি সরকারের নতুন এই পরিকল্পনা দুই গোষ্ঠির মধ্যেকার হিংসাত্মক ঘটনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি।
ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার পরিচালক আলাওয়ী বলেন, “মসজিদে নববীর চারপাশে যেসব ঘরে মহানবীর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন, মানুষ সেসব ঘর পরিদর্শন করে এবং পরে মূল সমাধিতে গিয়ে প্রার্থণা করে।
এখন তারা দর্শনার্থীদের এ সমাধিক্ষেত্রে আসা বন্ধ করতে চায়, কারণ তারা মনে করে এটা শিরক। কিন্তু মানুষের মহানবীর সমাধি দেখার প্রবণতা বন্ধ করার একটাই পথ আছে, সেটি হচ্ছে তাকে (মহানবী) সেখান থেকে বের করে এনে অন্যকোনো সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া।
প্রতিবছরই কয়েক লাখ মুসলিম পবিত্র হজ পালন করতে মক্কায় যান। হজের সময় অবশ্য পালনীয় কাজের পাশাপাশি তারা মদিনায় অবস্থিত হজরত (সা.) এর রওজাও জিয়ারত করেন।
মহানবীর সমাধির চারপাশ ঘিরে অবস্থিত মসজিদে নববীর বহুবার সংস্কার ও পরিবর্ধন করেছে আরব শাসকরা, বিশেষ করে ওসমান বংশীয়রা। এখানে ক্যালিগ্র্যাফিতে ইসলামের শেষ নবী এবং তার পরিবারের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।
লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এর আগে মসজিদুল হারামের সংস্কারের বিশালযজ্ঞের কথা তুলে ধরেছিল। ওয়াশিংটনভিত্তিক গালফ ইন্সটিটিউটের বরাত দিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছিল, সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে মক্কার কাবা শরীফকে ঘিরে থাকা এ মসজিদের ৯৫ ভাগই ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট আর শপিং মল।
প্রতিবছর অতিরিক্ত হজযাত্রীর চাপ সামলাতে নেয়া এই সংস্কার পরিকল্পনা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ওহাবি মতাদর্শের অনুসারী মসজিদুল হারামের ইমাম আবদুল রহমান আল-সুদাইস।
মসজিদে নববী সংস্কারের জন্য রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ ড. আলি বি আবদুলাজিজ আল-শাবালের তৈরি করা প্রস্তাবটি দুই মসজিদের (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী) অভিভাবক কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আলাওয়ী।
রাষ্ট্রীয় জার্নালে এই প্রস্তাবের নথির কয়েকটি পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছে। মসজিদে নববীকে ঘিরে থাকা যেসব কক্ষগুলোতে মহানবীর স্ত্রী, কন্যারা বাস করতেন সেসব অপসারণের কথা বলা হয়েছে এতে। মহানবীর কন্যা হজরত ফাতিমার কারণে শিয়াদের কাছে এই স্থাপনাগুলো পবিত্র।
নথিতে সবুজ গম্বুজ, এসব কক্ষ অপসারণের পাশাপাশি মহানবীর দেহাবশেষও কাছাকাছি কোনো সমাধিক্ষেত্রে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ড. আলাওয়ী বলেন, মহানবী অজ্ঞাত থাকবেন। মহানবীর মসজিদের চারপাশের সবকিছুই এরই মধ্যে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর চারপাশে এখন অনেক বুলডোজার। আশপাশের সবকিছু সরিয়ে ফেলার পর তারা মসজিদের দিকে এগোবে।
(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/এমএটি/এ্আর/ ঘ.)