logo ১৮ মে ২০২৫
সালাম কালাম আর শুভেচ্ছায় ভরে উঠবে মুসলিম জনপদ
২৬ জুলাই, ২০১৪ ০৯:২৯:৪০
image

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:  পবিত্র মাহে রমজানের আজ ২৭তম দিবস। গতকাল পালন করেছি আমরা লাইলাতুল কদর। অসংখ্য আল্লাহতে ভীত মুমিন মুত্তাকীর অশ্রুতে সিক্ত হয়েছে জায়নামাজ। কারণ এদিন ছিল মাহে রমজানের বিদায়লগ্নে খুবই হৃদয়স্পর্শ বরকতপূর্ণ রজনী। আস্তে আস্তে শহর নগরীর মানুষ ঘরমুখী হচ্ছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের এই মৌসুমে সালাম কালাম আর শুভেচ্ছায় ভরে উঠবে মুসলিম জনপদ। আজ আমরা প্রাসঙ্গিকভাবে ইসলাম ধর্মে সালাম সম্ভাষণ, মুসাফাহা, মুআনাকা বিষয়ে কিছু আদবের কথা বলব। সালাম বিনিময়ে বড় ছোট কোন তফাত নেই। সালামদাতাই শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। হযরত সাইয়্যার (রহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সাবিত আল বুনানীর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তিনি কয়েকটি শিশুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সালাম দিলেন এবং বলেন, একবার আমি রাসুলের (স) সাহাবী আনাসের (রা) সঙ্গে ছিলাম। তিনি শিশুদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সালাম দিলেন এবং বলেন, আমি নবীর (স) সঙ্গে ছিলাম। তিনি শিশুদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সালাম দিয়েছেন। (বুখারী মুসলিম)।


স্ত্রীলোককে সালাম দেয়া ॥ হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স) মসজিদে যাচ্ছিলেন। সেখানে একদল স্ত্রীলোক বসেছিল। তিনি হাত উঠিয়ে তাদের সালাম করলেন। (ইবন মাযাহ, তিরমিযী)। নিজের ঘরে প্রবেশকালে সালাম দেয়া : সাহাবী আনাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) আমাকে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে প্রবেশ কর, তখন সালাম দিও। তাতে তোমার ও তোমার পরিজনের কল্যাণ হবে।


কথা বলার আগেই সালাম দিতে হয় ॥ সাহাবী জাবির ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, কথাবার্তা বলার পূর্বেই সালাম বিনিময় হবে। এ সনদেই নবী (স) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সালাম দেয়ার পরই কাউকে খাবারের দাওয়াত দাও।’ (তিরমিযী শরীফ)


সওয়ারী ব্যক্তি পদচারী ব্যক্তিকে সালাম করবে : হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (স) বলেন, আরোহী ব্যক্তি পদচারী ব্যক্তিকে, পদচারী ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং অল্পসংখ্যক লোককে সালাম করবে। ইবনুল মুছান্না বর্ণিত হাদিসে আরও আছে, বয়সে নবীনরা প্রবীণদের সালাম করবে।


মারহাবা (স্বাগতম) বলা ॥ উম্মু হানী (রা) থেকে বণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের সময় আমি রাসুলুল্লাহর (স) কাছে হাজির হলাম। তিনি তখন গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা (রা) একটি কাপড় দ্বারা তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি উম্মু হানী। তিনি বললেন, মারহাবা অর্থাৎ উম্মু হানীকে স্বাগতম। (বুখারী ও মুসলিম)।


মুসাফাহার (করমর্দন) বর্ণনা ॥ আনাস ইবন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বলেন: না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বলেন, না। সে এবার বলল, তাহলে সে হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি বলেন: হাঁ। (তিরমিযী শরীফ)। আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, কপালে হাত রাখা রোগীকে পূর্ণভাবে শুশ্রূষা করার শামিল আর তোমাদের সালামের পূর্ণতা হলো পরস্পর মুসাফাহা করা। অন্য এক হাদিসে বারাআ ইবন আযেব (রা) থেকে বর্ণিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে দু’জন মুসলমান পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের বিচ্ছেদের পূর্বেই আল্লাহ তাদের (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেন। (আ ই দা)


মুআনকা (আলিঙ্গন ও চুম্বন) ॥ হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যায়েদ ইবন হারেসা যখন সফর থেকে মদীনায় ফিরে আসলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) তখন আমার কামরায় ছিলেন। তিনি এসে দরজা খটখট করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা) উদলা গায়ে কাপড় টানতে টানতে তার কাছে গেলেন। আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে আগে বা পরে কখনো উদলা গায়ে দেখিনি। অতঃপর তিনি যায়েদের সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন এবং তাঁকে চুমু খেলেন। এসব হাদিস থেকে আমরা দেখলাম সফরকালে অথবা পরস্পর দেখা দেখিতে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে সালাম দেয়া, মুসাফাহা করা, মুআনাকা করা ইসলামী শিষ্টাচার। বর্তমান সমাজে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাই-বোন প্রভৃতিতে এসব সালাম কালাম ও আদব উঠে গেছে বলেই হৃদ্য ও পারিবারিক সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আসুন না, এ মৌসুমে আমরা এসবের আবার চর্চা শুরু করি।