logo ১৮ মে ২০২৫
জাকাত দিলে সম্পদের বরকত হয়
মুফতী মুতীউর রাহমান
২২ জুলাই, ২০১৪ ০০:৪৭:৪৪
image

আল্লাহ তাআলা মানুষের মাঝে দুটি শ্রেণী সৃষ্টি করেছেন। ধনী ও দরিদ্র, বিত্তবান ও বিত্তহীন। কিন্তু বিত্তবান ও ধনীদের ওপর আল্লাহ তাআলা গরিবদের জন্য এ পরিমাণ জাকাত ও ফিতরা ফরজ করেছেন যার দ্বারা দরিদ্রদের জীবনযাপন সম্ভব। আর এই জাকাত-ফিতরা দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের কোনো করুণা নয়। তাদের ন্যায্য অধিকার। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক (জারিয়াত : ১৯)। অর্থাৎ ফকির-মিসকিনকে যে (জাকাত, ফিতরা ইত্যাদি) দান করা হয় তা তাদের প্রতি অনুগ্রহ নয়। বরং এটা তাদের পাওনা হক। হকদারকে হক আদায় করা কোনো অনুগ্রহ হতে পারে না। বরং এতে নফসের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ হয়। পবিত্র রমজান মাসে জাকাত আদায়ের একটা ব্যাপক প্রবণতা দেখা যায়। এটা ভালোই বটে। কারণ রমজানে জাকাত দিলে অন্য সময়ের তুলনায় সত্তরগুণ বেশি সওয়াব হয়। তাই বুদ্ধিমানরা রমজানে জাকাত দিয়ে দিবেন- এটাই স্বাভাবিক। কথা হচ্ছে, যাদের ওপর জাকাত ফরজ তারা সবাই কি জাকাত দেন? অথবা পরিপূর্ণ হিসাব করে কি দেন? দেশের বিত্তবান লোকরা যদি সঠিক নিয়মে জাকাত দেন তাহলে দরিদ্র থাকার কথা নয়। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য জাকাত-ফিতরার সুষম বণ্টনই যথেষ্ট। এবং এটা কোনো উদ্ভট দাবি নয়। খুলাফায়ে রাশেদার সোনালি যুগে এটা বিশ্বব্যাপী বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইসলামের জাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার কারণেই তখন দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হয়েছিল। যার ফলে তখন এমন একটা সময় এসেছিল যে, জাকাত নেয়ার মতো গরিব লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। জাকাত দিলে সম্পদ কমে যাবে- এই ভয়ে অনেকে জাকাত দিতে চায় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দানের দ্বারা সম্পদ কমে না বরং বাড়ে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন (বাকারা : ২৮২)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, দানে সম্পদ কমে না। ক্ষমার দ্বারা কেবলই সম্মান বৃদ্ধি পায়। আর যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। বাস্তবেও দেখা যায়, দান-সদকার দ্বারা সম্পদে বরকত হয়। বিপদ ও দুর্যোগ থেকে সম্পদের সুরক্ষা হয়। আর জাকাত না দিলে, দান-সদকা না করলে সম্পদের বরকত নষ্ট হয়। দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ আসে। যার কারণে সম্পদ নষ্ট হয়, কমে যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো জাতি যদি জাকাত বন্ধ করে দেয়, তাহলে আল্লাহ তাদের দুর্ভিক্ষে লিপ্ত করেন (তারগিব, তাবরানি আওসাত)। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, জলে-স্থলে যে সম্পদ নষ্ট হয়, তা জাকাত না দেয়ার কারণেই হয় (আততারগিব)। সম্পদে যে বিপদাপদ আসে তা জাকাত না দেয়ার কারণেই আসে। সুতরাং সম্পদের হেফাজতের স্বার্থেও জাকাত দেয়া জরুরি। জাকাত দিলে আল্লাহ তাআলা সম্পদ হেফাজত করবেন। বরকত দিবেন। আর পরকালে সওয়াব তো পাওয়া যাবেই। উপরন্তু জাকাতের হারও কিন্তু খুব বেশি নয়। শতকরা আড়াই ভাগ। তাও বছরে মাত্র একবার। তারও আবার নেসাব রয়েছে। নেসাবের কম হলে জাকাত দিতে হয় না। নেসাব হিসাব হয় নিজের ও পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের ক্ষেত্রে। অপরদিকে প্রতিদিনই কিন্তু আমাদের ট্যাক্স দিতে হয়। ট্যাক্স না দিয়ে কারও কোনো রেহাই নাই। আর ট্যাক্সের হিসাব-নিকাশও বড় আজব। আয়ের ক্ষেত্রেও ট্যাক্স ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ট্যাক্স। খাওয়া-পড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ কোনো কিছুই ট্যাক্সের আওতামুক্ত নয়। সবচেয়ে আজব ব্যাপার হচ্ছে, কথা বলারও ট্যাক্স দিতে হয়। জাকাত দিতে হয় শুধু ধনীদের। আর ট্যাক্স দিতে হয় ধনী, দরিদ্র, ফকির, ভিখারি সবার। ভিখারিরাও মোবাইলে কথা বলে এবং ট্যাক্স দেয়। মুসক দিতে হয় সবারই। ট্যাক্সের পরিমাণও কম নয়। প্রতিদিন সর্বনিু ১৫ পার্সেন্ট। সব ধরনের ট্যাক্স হিসাব করলে দেশের একজন নাগরিকের বার্ষিক সর্বনিু কর কত? কে জানে। সবাই প্রতিদিনই কর দিচ্ছি। বিষয়টা গা-সহা হয়ে গেছে।


সে তুলনায় জাকাত কত সামান্য! একটু ভেবে দেখেছেন? তাহলে জাকাত দিতে কষ্ট লাগবে কেন? সুতরাং আসুন এই রমজানে বিত্তবানরা সবাই নিজেদের সম্পদের জাকাত দিই। আর মহান আল্লাহর দরবারে এর উসিলায় জান-মাল-ইজ্জত আব্র“র হেফাজত প্রার্থনা করি। অবশ্যই তিনি আমাদের প্রার্থনা কবুল করবেন।