রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে মোবারকবাদ জানাই
২১ জুলাই, ২০১৪ ১০:০০:২২

ঢাকা: আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২২তম দিবস। এবার প্রায় ১৫ ঘণ্টা দিবাভাগে বাংলাদেশী মুসলমানরা উপবাস ব্রত পালন করছেন। একটু লম্বা সময় বৈকি! তবুও রমজান মাসের আগে অনাবৃষ্টিতে যেভাবে জনপদ হাপিত্যেশ করেছিল, রমজানে বিশেষভাবে করুণাময় আল্লাহ মুসলমানদের মাথায় মেঘমালা দিয়ে ছায়াপাত করেছেন। আমরা আজ এ কলামে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মোবারকবাদ জানাই। তিনি মাহে রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণার নির্দেশ জারি করে একটি দরদি ও পজিটিভ চিন্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন। হাদীস শরীফে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘এ মাসে যে ব্যক্তি তার কর্মচারীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবেন, আল্লাহ তার গুণাহর বোঝা হালকা করে দেবেন।’ বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা প্রত্যক্ষ করছি, স্কুল-কলেজে ঘাটতি লেখাপড়া পুষিয়ে আনার অজুহাতে রমজানের একটি অংশে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছে। এ কয়েক দিন খোলা রেখে ছাত্রছাত্রীরা কতটুকু উপকৃত হয়েছে জানি না, উপকৃত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা। কারণ তাদের আবাসিক বেতন ওঠাতে সুবিধা হয়েছে, কোচিং এবং প্রাইভেট পড়ানোর কাজগুলোও অব্যাহত রাখতে পেরেছে। এর ফলে ধ্বংস হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের গাম্ভীর্য। আমাদের দেশে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকের পক্ষ থেকে বেত্রাঘাত করলেও রোযা ভাঙ্গে না। রোজার প্রতি তাদের দরদ ও ইচ্ছা অকৃত্রিম। একই সঙ্গে প্রায় অভিভাবকই রোযাদার। তারাবীহর নামাজের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে না নিতেই সেহরির সাইরেন। এরপর ফজরের জামাত। ফজরের নামাজের পর বেশ কয়েক ঘণ্টা থাকে আমাদের শিশু-কিশোর মা-বোনদের একটু অখ- বিশ্রামের সুযোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নাম দিয়ে সাম্প্রতিক রমজানের সে কালচারটা মাটি করতে চলেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের ঘৃণা কুড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব রক্ষা করার বিষয়টি বিবেচনায় এনে কঠোরভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সুযোগে এ সময়টুকু উটের বোঝার মতো বই-পুস্তক নিয়ে কিছুদিন স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থেকে মা বাবার সান্নিধ্য নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে নামাজ কালাম ও তিলাওয়াতে সময় পার করছে। মাঝে মাঝে ইফতার সেহরি তৈরির ক্ষেত্রে প্রিয় মা-বাবার পাশে থাকছে। এটি শিক্ষার বিষয় নয় কি! বাস্তব জীবনে এ অনুশীলন একজন শিক্ষার্থীর জন্য ট্রেনিং পিরিয়ড হিসেবে কাজ করছে নয় কি! মাহে রমজান বিশ্বাসের, হাতে-কলমে জীবনকে পবিত্রভাবে গড়ে তোলার এক বিশ্ব মৌসুম। আমরা আশা করি, আমাদের সন্তানরা ধর্ম চর্চার এ উৎসবমুখর মৌসুমে নিজেদের নীতি-নৈতিকতায় বলিষ্ঠ করে তুলবে, একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও তাদের বাকি ১১ মাসের যান্ত্রিক লেখাপড়ার চাপ থেকে একটু বেরিয়ে এসে নিজেদের পেশাগত পাঠ্য বইপুস্তকও সাজিয়ে নেবে, আয়ত্তে আনবে।
আমরা পেপার-পত্রিকায় দেখছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোচিংয়ের নামে ইউনিফর্ম বাদ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার হিল্লা করছে। এটি এক ধরনের ধূর্তামী, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভ্রষ্টতা। আসুন, আমরা মাহে রমজানের এই শেষ দশকে পরস্পর সৎ কাজে উৎসাহিত করি এবং অসৎ কাজে নিরুৎসাহিত করি।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥