logo ১৩ জুন ২০২৫
ইতিকাফ ও আমাদের করণীয়
১৯ জুলাই, ২০১৪ ১০:৪২:২২
image

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক: আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২০তম দিবস। দিনের অবসানে শুরু হবে মসজিদে মসজিদে ই’তিকাফের ব্যবস্থা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) খালিস নিয়তে ই’তিকাফ পালনের সাওয়াবকে এক হাদীসে হজ ও ওমরার পুণ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হযরত আয়েশা (রাদি) রিওয়ায়েত করেছেন : ‘ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত নবী কারীম (স) রমজানের শেষ দশ দিন বরাবর ই’তিকাফ পালন করেছেন এবং তার ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীগণ ই’তিকাফের এ পুণ্যধারা অব্যাহত রেখেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)।


এর পর থেকে উম্মাহর দ্বীনদার মানুষগণ ব্যাপকভাবে তা পালন করে আসছেন। কুপ্রবৃত্তি দমন ও চরিত্র সুনিয়ন্ত্রিতকরণের জন্য ই’তিকাফ একটি বলিষ্ঠ ওয়াসিলা। কারণ, মসজিদ এমন এক শান্ত শীতল পূতস্নিগ্ধ জায়গা যেখানে মানুষ কখনও কুচিন্তা মাথায় রাখতে চায় না। মসজিদে থাকা ও শোয়া অনেক ওলামায়ে কেরাম জায়েজ মনে করেন না। কিন্তু শরিয়ত শুধু ই’তিকাফের সময় তা উদারভাবে অনুমোদনপূর্বক উৎসাহিত করে। সুতরাং এ সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। এখানে এলেই তো আপনার মাঝে নির্জন বাস, কবর জীবনের কথা, নীরব নিস্তব্ধ এক আখেরি মঞ্জিলের কথা ভাবার ফুরসত হয়।


ই’তিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ এটি নিয়মিত সামাজিক সুন্নাত, মহল্লার কেউ কেউ পালন করলে সবাই অন্তত এর সওয়াবের ভাগী হয় এবং দায় থেকে মুক্তি পায়। আর যদি মহল্লার কারও পক্ষ থেকে তা পালিত না হয় তাহলে গোটা মহল্লাবাসী এর জন্য দায়ী ও গুনাহগার হয়ে থাকে। সহীহ শুদ্ধ ই’তিকাফের শর্তাবলী নিম্নরূপ :


১. নিয়ত করা। নিয়ত করা ব্যতীত ই’তিকাফ করলে ই’তিকাফ সহীহ হবে না।


২. পুরুষের জন্য এ রকম মসজিদ যেখানে জামায়াতের সঙ্গে সালাত আদায় করা হয় (তবে নফল ই’তিকাফ যে কোন মসজিদে হতে পারে )। মহিলাগণ নিজেদের ঘরে সালাত আদায়ের স্থানে ই’তিকাফ করবে। তারা প্রয়োজন ব্যতীত এ স্থান থেকে বের হবে না।


৩. রোযা রাখা। নফল ই’তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়।


৪. মুসলমান হওয়া। কেননা, কোন অমুসলিম ব্যক্তি ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না।


৫. আকিল জ্ঞানবান হওয়া। প্রাপ্তবয়স্ক বা বালিগ হওয়া ই’তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। এ জন্য জ্ঞানবান অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক-বালিকার ই’তিকাফও সহীহ হয়। যেমনি ভাবে তাদের নামাজ ও রোজা দুরস্ত হয়।


৬. নারী-পুরুষ সকলের জানাবাত বা গোসল ফরজ হয় এমন পবিত্রতা থেকে এবং নারীদের হায়িজ নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া। (আলমগীরী ১ম খণ্ড ও বাদায়উস সানায়ে, ২য় খণ্ড)


ই’তিকাফের কতিপয় আদব :


ক. অহেতুক কথা না বলা। যথাসম্ভব পুণ্যের আলোচনায় মশগুল থাকা।


খ. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা। যেমন মসজিদে হারাম বা জামে মসজিদ ইত্যাদি।


গ. বেশি বেশি করে কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফ পাঠ করা।


ঘ. জিকির করা।


ঙ. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা অথবা শিক্ষা দেয়া।


চ. সীরাতুন্নবী (সা) বা মহানবীর জীবনচরিত অধ্যয়ন করা।


ছ. মহান নবী রাসূল এবং আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী পাঠ করা।


জ. শরয়ী আহকামের কিতাবাদি পাঠ ও রচনা করা।


ঝ. যে সব কথায় গোনাহও নেই এবং সাওয়াব নেই অর্থাৎ মোবাহ্ কথা প্রয়োজন ছাড়া না বলা (আলমগীরী ১ম খ-, শামী ২য় খ- ও মারাকিল ফালাহ, ফাতাওয়া ও মাসাইল ৪/৬৭)।