জুমাতুল বিদা এবং লাইলাতুল কদর একসঙ্গে, এ এক দুর্লভ প্রাপ্তি
২৫ জুলাই, ২০১৪ ০৯:২৬:৪৫

ঢাকা: আজ ২৬ রমজান। দিবাভাগে পবিত্র জুমাতুল বিদা এবং দিবালোকের অবসানে পবিত্র লাইলাতুল কদর। রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাসে আমাদের জন্য এ বছর এক দুর্লভ প্রাপ্তি- দুটি ইবাদতের ও অধিক সাওয়াব অর্জনের দিবস ও রজনী কাছাকাছি উদ্যাপিত হচ্ছে। তাই মসজিদ ও সমাজের ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নতুন সাজে সজ্জিত। জুমার দিনের ফজিলত অন্য যে কোন দিনের চেয়ে বেশি এ কথা বলাই বাহুল্য। মাহে রমজানের সর্বশেষ জুমা অর্থাৎ জুমাতুল বিদা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে দাগ কাটে বেশি। কারণ এদিন মসজিদে মসজিদে ইমাম খতিবগণ হৃদয়গ্রাহী সুরে মাহে রমজানকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান।
শব-ই-কদর হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী। বলতে গেলে মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের স্মৃতিধন্য এ রজনীর বরকতেই মাহে রমজানের মাহাত্ম্য। আমাদের সকলের উচিত আজ বিশেষভাবে লাইলাতুল ক্বদরের সম্মানে দুনিয়াবী কাজ কাম, ব্যস্ততা সংক্ষিপ্ত করে মসজিদমুখী হওয়া, জায়নামাজমুখী হওয়া। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ও আইনবেত্তা সুফিয়ান সাওরীর (রহ) বর্ণনা মতে, বরকতওয়ালা এ রজনীর প্রতিটি নেক কাজ রোজা, নফল ইবাদত হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদত বন্দেগীর সমতুল্য।
এ রাতের মাহাত্ম্য বাড়ার বড় কারণ এ রজনী আল কুরআন নাযিলের। মাহে রমজান যদি কুরআন নাযিলের মাস হয় শবে কদর কুরআন নাযিলের রজনী। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে রমজানুল মোবারকের ২৬ তারিখ দিনগত ২৭ তারিখ কদরের রজনীতে আল্লাহ পাক হেরা গুহা আলোকিত করে হযরত জিব্রাইল ফেরেস্তার মাধ্যমে আমাদের নবীজীর কাছে আল কুরআন অবতীর্ণ করেন। এ জন্য গোটা মানব জাতির কাছে কুরআনুল কারীম নাযিলের এ পুত মুহূর্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা এ রজনীর ফযিলত বুঝাতে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন এবং এ রাতের ইবাদতকে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য অত্যন্ত বরকতের বলে ঘোষণা করেছেন।
নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, দান খয়রাত, ওয়াজ-নসীহতের ব্যবস্থা, দরুদ শরীফ পাঠ ইত্যাদি নফল আমল দ্বারা পুরো রজনীটি সদ্ব্যবহার ও সার্থক করে তোলা যায়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বলব, যাদের ঘুমের প্রয়োজন, ফাঁকে মাঝখানে তারা একবার সংক্ষিপ্ত ঘুম সেরে নিতে পারেন। দেশের বড় মসজিদগুলোতে আজই খতমে তারাবীহর মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মাহে রমজানের কুরআন খতমকে কুরআন শরীফ নাযিলের এ পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত পবিত্র শব-ই-কদরের রাতে সমাপ্ত করা বড় ফযিলতের কাজ। অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ও ঈদের ছুটিকালীন বাড়ি ঘরে যাওয়ার ওযুহাত দেখিয়ে আগেই খতমে তারাবীহর সমাপ্তি টানা হয়, যা শরীয়ত উৎসাহিত করে না। কুরআন শরীফের পারা, সূরা ও রুকুগুলোর বিন্যাস পদ্ধতিটিও ২৬ তারিখ দিনগত ২৭ রমজান ‘খতম’ শেষ করার অনুকূলে। আর এ ব্যবস্থা সম্মানিত তারাবীহর মুসল্লিগণের জন্যও বেশ সহজ ও আসান।
আসুন পবিত্র জুমাতুল বিদায় এবং দিনের অবসানে পবিত্র শব-ই-কদরকে মাগরিব থেকে ফজর পর্যন্ত ইফতার থেকে সাহরী পর্যন্ত আমরা আমাদের পাপ তাপ মার্জনার জন্য পরওয়ার দিগারের সিজদার স্থলে সময় দান করি। তারাবীহর নামাজে তিরিশ পারা কুরআন খতমের বিশেষ মুনাজাতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত অব্যাহত রাখার শিক্ষায় বাকি জীবন উদ্দীপ্ত করার এবং এ পবিত্র শব-ই-কদরকে জীবনের শেষ পাপ মার্জনার সুযোগ মনে করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে লুটোপুটি করি, রোনাজারি করি, স্ত্রী- পরিজনদের এ রিয়াজত সাধনায় উৎসাহিত করি। যেমনটি করেছেন আমাদের আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স)।
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক