ঢাকা: এক বছর পার হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বয়স। যদিও এমন কথা বলা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িসহ নানা অজুহাতে আন্দোলন সংগ্রামে দেখা মেলেনি গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের নেতকর্মীদের। আর দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। দুই একজন ছাড়া অন্য নেতাদেরও খুব একটা দেখা মেলে না। তাই নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে এখন রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির কর্মীরা।
যার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। কারণ জেলা শহরে বেশ ভালো উপস্থিতি চোখে পড়লেও ঢাকার রাস্তায় সেইভাবে কর্মীদের দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, প্রায়ই মহানগর বিএনপি কার্যালয় বন্ধ থাকায় গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজও যায়নি।
সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে তৎকালীন ঢাকা মহানগর বিএনপি ব্যর্থ বলে নেতাকর্মীদের তরফ থেকে দাবি উঠে। পরবর্তী সময়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মহানগর কমিটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সরিয়ে দেয়া হয় সাদেক হোসেন খোকা ও আব্দুস সালামকে।
প্রবীণ ও নবীণের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি হাইকমান্ডের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে সংশ্লিষ্টরা এমনটাই মনে করছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে উল্টো। যা নেতারাই অকপটে স্বীকার করছেন।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোটা আন্দোলন ব্যর্থতায় রূপ নেয়ার নেপথ্যে আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা মহানগর। ঢাকা মহানগর চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেবার পরও তাদের পদে রাখা হয়েছে কেন? তৃণমূলের কাছে তার উত্তর নেই। যারা দলের জন্য সময় দিতে পারবেন তাদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করা উচিত।”
এদিকে বারবার উদ্যোগ নিয়েও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই ঢাকা মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ডে। যদিও বারবার বলা হয়েছে, ওয়ার্ড ও থানার কমিটির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। যেকোনো সময় ঘোষণা দেয়া হবে। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।”
এদিকে কমিটির যখন এমন অবস্থা, তখন সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ তো দূরের কথা দলীয় কর্মসূচিতে তারা নিশ্চুপ। মহানগরের ৫২ সদস্যের কমিটির প্রায় সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।
সবশেষ গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মতো জাতীয় ইস্যুকে পুঁজি করে রাজপথে নামতে পারেনি বিএনপি। দলীয় ইস্যুতেও একই। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও কোনো কর্মসূচি পালন করেনি ঢাকা মহানগর বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে।
পল্টন থানা বিএনপির একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন ‘কমিটির ৫২ সদস্যের সবাই কারাগারের বাইরে তারপরও কর্মীদের গাইড লাইন দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে কি দল চলতে পারে।’
কর্মীদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই একমত ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন।
ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন “মহানগরের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই। বিগত আন্দোলনে ব্যর্থতার পর পরবর্তী করণীয় নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। হাইকমান্ড থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও নেই। আন্দোলনের আগে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে ছিল সেখানেই আছে।”
এদিকে ক্রমে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক কর্মীই এখনও নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে জানেন না। যদিও পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আছেন অন্ধকারে। অন্যদিকে আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরও মহানগর পুনর্গঠনে কোনো উদ্যোগ নেই। তাই এ নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।
অবিলম্বে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ, ত্যাগী, উদ্যমী এবং সংগঠনে সময় দিতে পারবেন এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান। জানুয়ারির আন্দোলনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন মির্জা আব্বাস। মাঝে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ঝলক প্রকাশ্যে এলেও এখন আর তার দেখা মিলছে না।
এই নেতা বেশিরভাগ সময় বাসায় অবস্থান করছেন এমনটা জানা যায়। সময়-সুযোগ বুঝে ব্যবসায়িক কাজেও সময় দিচ্ছেন।
অন্যদিকে সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে এখনও তিনি ফেরার।
তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বর্তমানে সাংগঠনিক কাজকর্ম তেমন নেই। এছাড়া আপাতত দলের চেয়ারপারসনের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় সাংগঠনিক কাজে সেইভাবে অংশ নিচ্ছেন না।
পুরান ঢাকার চকবাজার থানা বিএনপি কর্মী রাজু আহমেদ নিজেকে দলের সক্রিয় কর্মী দাবি করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “কমিটির ৫২ সদস্যের সবাই কারাগারের বাইরে তারপরও তো গাইড লাইন দেবার লোকটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে দল কতদিন চলবে।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “নেতারা নাই, তাই আমরাও মাঠে নাই।”
মাঠের কর্মীদের এমন বক্তব্যকে উড়িয়ে না দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান টাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য আসেনি। তবে এজন্য সরকারের কঠোর অবস্থানকে আমি দায়ী করবো। আশা করি দল পুনর্গঠনে কর্মীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।”
(ঢাকাটাইম/২৭সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেবি/এআর/ঘ.)