ঈদে মিলাদুন্নবী ও আমাদের কর্তব্য
সাইয়্যেদ বেলাল নূরী আল সুরেশ্বরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২৩:৪৯:৩৫

‘ঈদ’ এবং ‘মিলাদ’ শব্দ দুটি আরবি। ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ বা খুশি আর ‘মিলাদ’ শব্দটি ‘মাওলুদ’ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ জন্ম, জন্মদিন, জন্মবৃত্তান্ত ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ বলতে নবি করিম (সা.) এর জন্মদিনে আনন্দ করাকে বুঝানো হয়েছে। তাইতো যার আগমণে সমগ্র সৃষ্টিকূল বা মাখলুক আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছে সেই মহামানবের ধরণীতে আগমণ উপলক্ষে দলমত নির্বিশেষে। পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের পবিত্রতম দিনটি ১২ রবিউল আউয়াল এলে প্রত্যেকেরই হৃদয়ের গভীরে প্রেম নামক সুক্ষ্মতম তারে ভালাবাসার অনুরণ সৃষ্টি হয়। নবি প্রেমিকগণ তাই হৃদয়ের ভিতরে লুকানো সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান ‘মিলাদুন্নবী’ বা ‘মিলাদ মাহফিল’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আমার দৃষ্টিতে প্রেম হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্ট বিনিসুতোর মালার মতো। যা চাইলেই যেমন গাথা যায় না, আবার চাইলেই তেমন ছিঁড়ে ফেলা যায় না। হৃদয়ের দুর্নিবার শক্তি এবং সাধনালব্দ প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান দিয়েই শুধু এটা জয় করা যায়। নবি প্রেমিকগণ তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে প্রেমের মাধ্যমে রাজি খুশি করে মহানিয়ামত লাভের আশায় তারই বন্ধু হুজুর পুরনূর আহমদ মোজতবা মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) কে উপলক্ষ তথা উছিলা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন। আর এই মহানিয়ামত লাভের জন্য শ্রেষ্ঠতম অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘মিলাদুন্নবী’।
যেহেতু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব (সা.) কে এই ধরাতে পাঠিয়েছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ, তাই আমি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নবি প্রেমিকদের নিকট আরজ করবো যথাযোগ্য মর্যাদা বা ইখলাসের সাথে যেন ‘মিলাদুন্নবী’ পালন করা হয়। যিনি আশেক, যিনি প্রেমিক, যার অন্তর নবিপ্রেমে বিগলিত নিশ্চয়ই সে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালের জন্য বসে থাকেন না। তার জন্য প্রতিদিনই ‘মিলাদুন্নবী’।
ঈদে মিলাদুন্নবী যেন শুধু অনুষ্ঠান মাত্র না হয়ে যায়। বছরের একটি বিশেষ দিনে যেন মাহফিল, জলসা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মতো বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানে পর্যবশিত না হয়। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সমস্ত কাজের মধ্যে প্রেম বা ইখলাসেরই প্রাধান্য দেন। প্রেম বা ইখলাসের ধর্মই আলাদা।
হযরত শাহ আহমদ আলী ওরফে জানশরিফ শাহ সুরেশ্বরী (রহ.) তার “নূরে হক্ব গঞ্জে নূর” কিতাবে প্রেমের ব্যাপ্তি বুঝাতে গিয়ে লিখেছেন, “ আশেক-মাশুক রয় যে রাজ অন্তর/কেরামন কাতেবীন তার রাখে না খবর।”
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রভাব থাকে বছরব্যাপী প্রকারান্তরে জীবনব্যাপী। তাই আসুন, শুধু ১২ রবিউল আউয়াল নয় বরং সারাটা জীবনকেই আমরা নবিপ্রেমে নিজেদেরকে উজাড় করে হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্চারণ করি, “ইয়া নবি সালামু আলাইকা”। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
মোন্তাজেমে দরবার, গদিনশীন পীর ও মুর্শিদ কিবলা
সুরেশ্বর দরবার শরিফ