পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২২ মে, ২০১৬ ২০:২৩:৪৬

ঢাকা: নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত আর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা পার করছেন ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে পরিচিত পবিত্র শবে বরাত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় সন্ধ্যার পর থেকেই মসজিদমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। মসজিদে মসজিদে এই ভিড় ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আপনজনদের রূহের মাগফেরাত কামনা করতে কবরস্থানেও দেখা গেছে মুসল্লিদের ভিড়। ফজরের নামাজের পর দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে শবে বরাতের আনুষ্ঠানিকতা।
মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের আশায় আজ নানা ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতযাপন করবেন মুসল্লিরা। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়েছে শবে বরাতের আনুষ্ঠানিকতা। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কথা চিন্তা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবার সবধরনের ফটকাবাজি নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াজ-নসিহত, মিলাদ ও দোয়া। বাদ ফজর বাইতুল মোকাররমে দোয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে শবে বরাতের আনুষ্ঠানিকতা। আগামীকাল অনেকেই নফল রোজা রাখবেন। কাল সরকারি ছুটি।
শবে বরাতের তাৎপর্য
পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত লাইলাতুল বারাত বা ভাগ্য রজনী হিসেবে আমরা জানি। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে শাবান মাসের গুরুত্ব এমনিতেই বেশি। শাবান মাসের তাৎপর্য ও মহিমা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ লাইলাতুল বারাত। আমাদের সমাজে এ রাতটি শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। উপমহাদেশের সবখানেই এ রাতটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। মুমিন বান্দারা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগিতে কাটায়। মধ্যপ্রাচ্যসহ কোনো কোনো দেশে এ রাতটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। তারা মনে করেন, যেহেতু এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলোর সূত্র ততটা সবল নয়, এজন্য বিশেষ গুরুত্ব দিলে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আমাদের দেশেও ইদানীং কেউ কেউ শবে বরাতের ভিত্তিকে অস্বীকার করেন। এ সংক্রান্ত হাদীসের সূত্রের দুর্বলতার দোহাই দিয়ে মুসলমানদের আবেগঘন এ রাতটিকে গতানুগতিকতায় পর্বসিত করতে চান। অথচ হাদিসের মূলনীতি হলো, হাদিস যদি দুর্বলও হয় তবুও তা ফজিলতসংক্রান্ত বিষয়ে তা গ্রহণ করা যায়। দুর্বল হাদিস দ্বারা শুধু কোনো বিধান আরোপ করা যায় না।
শবে বরাতে যারা ইবাদত বন্দেগি করেন তারা তা ফরজ-ওয়াজিব হিসেবে করেন না, নফল হিসেবেই করেন। তিরমিজি শরিফ ও ইবনে মাজাহ শরিফসহ যেসব কিতাবে এ রাতের ফজিলতসংক্রান্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর সূত্র দুর্বল হতে পারে, তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ফজিলতের ক্ষেত্রে হাদিসের সূত্রটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। এজন্য শবে বরাতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হঠকারিতা ও ইসলাম সম্পর্কে অযাচিত বাড়াবাড়ি বৈ কিছু নয়। এ রাতের প্রতি মুসলমানদের যে আবেগ ও বিশ্বাস তার মূল্য দেয়া উচিত। তবে এ কথা সত্য, আমাদের সমাজে শবে বরাত উপলক্ষে অতিরিক্ত ও ইসলামবিবর্জিত যে মাতামাতি করা হয় তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। মনগড়া বিষয় টেনে এনে রাতের পবিত্রতা নষ্ট করা কাম্য নয়।
কোরআনে বর্ণিত ‘বরকতময় রাত’ দ্বারা মধ্য শাবানের রাত বোঝানো হয়েছে বলে মুফাসসিরদের একটি বড় অংশের অভিমত রয়েছে। এ অভিমতের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায় হাদিস শরিফে। মধ্য শাবানের রাতের মহিমা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সা. হযরত আয়েশ রা.কে প্রশ্ন করেন, তুমি জান কি এ রাতে কী হয়? হজরত আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। রাসুল সা. তখন বলেন, এ রাতে বান্দার সারা বছরের কার্যকলাপের প্রতিবেদন আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাদের সারা বছরের রিজিক নাজিল করা হয়। সারা বছরের জন্ম-মৃত্যু তালিকা প্রস্তুত করা হয়।’
‘বারাত’ শব্দের অর্থ মুক্তি। অসংখ্য বনি আদমকে ক্ষমা করার ফলে তারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পায়। এমন সুসংবাদ বিজড়িত হওয়ায় এ রাতের নাম হয়েছে লাইলাতুল বারাত বা মুক্তি রজনী। রাসুল সা. বলেন, ‘মধ্য শাবানের রাত এলে তোমরা সে রাতে ইবাদতের জন্য সজাগ থাকবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সে রাতের শুরুতেই বা সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এভাবে প্রভাত পর্যন্ত তিনি আহ্বান করতে থাকেন। এ রাতে ইবাদতকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ বিশেষ রহমতের অবারিত ধারা বর্ষিত করেন এবং তাদের ইবাদত ও প্রার্থনা কবুল করার জন্য আল্লাহ তাআলা প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং কারো কোনো দোয়া করার থাকলে এ রাতের শুরু থেকেই আল্লাহর সমীপে সমর্পিত হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
যেসব রাতের উসিলায় আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন শবে বরাত এর অন্যতম। আল্লাহর রহমতের বেষ্টনীতে কেউ একবার পড়ে গেলে তার জীবন সাফল্যের দোড়গোড়ায় পৌঁছবেই। বলা যায় না, আল্লাহর রহমত কখন বান্দার দিকে ধেয়ে আসে। স্রষ্টার রহমত অবতীর্ণ হওয়ার উপলক্ষগুলো হেলায় খেলায় কাটিয়ে দেয়া সমীচীন নয়। মুক্তির রাত শবে বরাতও গতানুগতিকতায় কিংবা অনুষ্ঠানসর্বস্বতায় উদযাপন করা বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়। অন্তরকে পরিষ্কার করে, ¯্রষ্টার প্রতি একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত হলেই কেবল মুক্তির আশা করা যায়। তবে এ মুক্তির রাতেও আল্লাহ তায়ালা কয়েক ধরনের লোককে ক্ষমা করেন না। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তারা হলো: মুশরিক, জাদুকর, গণক, সর্বদা মদপানকারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, ব্যভিচারী ও সুদখোর। কারো মধ্যে এ ধরনের কোনো দোষ থাকলে শবে বরাতে স্বচ্ছ মনে, দৃঢ়তার সঙ্গে তওবা করলে আশা করা যায় আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। তাই আসুন, এই মুক্তির রাতে আমাদের মুক্তির গ্যারান্টি অর্জন করি।
(ঢাকাটাইমস/২২মে/জেবি)