logo ১৫ মে ২০২৫
হজযাত্রীদের জন্য পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৩ আগস্ট, ২০১৬ ১২:৪৩:০৩
image



ঢাকা: এবারের হজের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজ ক্যাম্পে এবারের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট। আগামী মাসের ১০/১১ তারিখে পালিত হবে এবারের হজ। এবার যারা হজে যাচ্ছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো: 






প্রয়োজনীয় মালপত্র






হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন: ১. বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার অথবা রিয়াল) কেনা, ২. পাসপোর্ট, ভিসা, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ ৩. ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড়। ইহরামের কাপড় হবে সাদা। সুতি হলে ভালো হয়। নারীদের জন্য: সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড় ) ৪. নরম ফিতাওয়ালা স্পঞ্জের স্যান্ডেল ৫. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট) ৬. গামছা, তোয়ালে ৭. আপনার জন্য আরামদায়ক পোশাক যেমন: লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি সঙ্গে নিতে পারেন ৮. সাবান, টুথপেস্ট, টয়লেট পেপার, ব্রাশ, মিসওয়াক ৯. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা ১০. থালা, বাটি, গ্লাস ১১. হজের বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক ১২. কাগজ-কলম, ১৩. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা (ভিড় বা অন্য কোনো কারণে ভেঙে গেলে ব্যবহারের জন্য) ১৪. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য) ১৫. নারীদের জন্য বোরকা ১৬. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা সুটকেস (তালা-চাবিসহ); ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখতে হবে। ১৭. মোবাইল সেট (সৌদি সিম কিনে ব্যবহার করতে পারবেন) বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।






হাজি ক্যাম্পে



বিমানে যাত্রার আগে হাজি ক্যাম্পে যত দিন অবস্থান করবেন, আপনার মালপত্র খেয়াল রাখবেন। একদল সুযোগসন্ধানী লোক মালপত্র চুরি করে। কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিন।






ব্যাগেজ নিয়মকানুন



বিমানে উড্ডয়নকালে হাত ব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেয়া যাবে না। হজযাত্রীর লাগেজে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ এজেন্সির নাম এবং সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির প্রতিনিধির মোবাইল নম্বরসহ ঠিকানা ইংরেজিতে লেখা বাধ্যতামূলক। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন: রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।






জরুরি কাগজপত্র



১০ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকা কার্ড। নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। এই নম্বরটি জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওয়েবসাইটে ওই হাজির তথ্য পেতে পারেন সহজে।






কবজি বেল্ট বাধ্যতামূলক






বেসরকারিভাবে গমনেচ্ছু হজযাত্রীদের জন্য ইলেকট্রনিক কবজি বেল্ট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ঢাকা হজ অফিসকে এ বিষয়টি জানান। চলতি বছর বেসরকারি পর্যায়ে ৯৬ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নারী, পুরুষ ও শিশু হজে যাবেন। হজ পালনরত অবস্থায় হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের কবজি বেল্টের মাধ্যমে খুঁঝে বের করে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবেন। 






ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কবজি বেল্টে হজযাত্রীদের নাম ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষিত থাকবে। হজযাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সৌদি সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 






কিছু জরুরি পরামর্শ






১. হজযাত্রীদের যাবতীয় তথ্য, দেশের পরিবার-পরিজনের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছানো যায়। হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশনে আইটি হেল্প ডেস্ক সাহায্য করে। ২. কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় পড়লে বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল সদস্যদের (চিকিৎসক) সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ৩. আপনার ট্রাভেল এজেন্সি আপনাকে যথাযথ সুবিধাদি (দেশ থেকে আপনাকে থাকা-খাওয়াসহ অন্য যেসব সুবিধার কথা বলেছিল) না দিলে আপনি মক্কা ও মদিনার বাংলাদেশ হজ মিশনকে জানাতে পারেন। এতেও আপনি সন্তুষ্ট না থাকলে সৌদির ওয়াজারাতুল হজকে (হজ মন্ত্রণালয়) লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। ৪. মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসেন, তাহলে ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিতে হবে। ৫. আরাফাতের ময়দানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে খাবার, জুস, ফল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। ওই সব খাবার আনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। তাই সাবধান থাকবেন। ৬. আরাফাতের ময়দান থেকে যদি হেঁটে মুজদালিফায় আসেন, পথে টয়লেট সেরে নেবেন। কেননা, মুজদালিফার টয়লেটে অনেক ভিড় লেগে যায়। ৭. হজ মন্ত্রণালয় মিনার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (যেখানে হজযাত্রীদের সহজে চোখে পড়ে) কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক বিলবোর্ডে পৃথিবীর প্রায় ১৮টি ভাষায় বিভিন্ন জরুরি দিকনির্দেশনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় প্রচার করে। ৮. হজের বেশিরভাগ সময় হজযাত্রীদের মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। তাই মিনাকে এক হিসেবে তাঁবুর শহর বলা যায়। চারদিকে তাঁবু আর তাঁবু। সব তাঁবু দেখতে একই রকম। মোয়ালি্লম নম্বর বা তাঁবু নম্বর জানা না থাকলে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। এ সমস্যা এড়াতে যে তাঁবুতে অবস্থান করেন, সেসব তাঁবু চিহ্নিত করে নিন। ৯. মোয়ালি্লম অফিস থেকে তাঁবুর নম্বরসহ কার্ড দেওয়া হয়; তা যত্নে রাখুন। বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখুন।






১০. হজযাত্রী সচেতন থাকলে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। অনেক বাংলাদেশি হারিয়ে যাওয়ার কারণে হজের আহকাম বা নিয়ম-কানুন ঠিকমতো পালন করতে পারেন না। ১১. মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল_ সবই পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে বাড়িতে খাবার নিয়ে দু'জন অনায়াসে খেতে পারেন। ১২. মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন। তাই ভাষাগত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কিনবেন। এছাড়া হিন্দি ভাষা প্রায় সবাই বোঝেন। ১৩. হজের সময় প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। পকেটে টাকা থাকলেও যানবাহন পাওয়া যায় না। এ কারণে হাঁটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন। ১৪. মিনায় চুল কাটার লোক পাওয়া যায়। নিজেরা নিজেদের চুল কাটবেন না। এতে মাথা কেটে যেতে পারে। ১৫. মিনায় কোনো সমস্যা হলে হজযাত্রীদের সেবা দিতে বাংলাদেশ হজ মিশনের তাঁবুতে যোগাযোগ করবেন।






(ঢাকাটাইমস/০৩আগস্ট/জেবি)