logo ১৩ আগস্ট ২০২৫
কদর কমছে শিল-পাটার
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১১:১২:১৬
image




‘লাগবে  শিল-পাটা ধার।’ এক সময় দেশের সর্বত্র শিল-পাটা ধার কাটার ছন্দময় সুরের সাথে পরিচয় ছিল না এমন মানুষ খুব কমই ছিলেন। গ্রাম-গঞ্জ এবং শহরের সর্বত্রই শ্রম-ফেরিওয়ালার এই হাঁক কানে আসত। বাংলায় এটি ছিল অতি প্রান্তিক এক পেশাজীবীর শ্রম ফেরী করার সুর।



সাইকেলে অথবা হেঁটে লোকালয়ে শ্রম ফেরি করে বেড়াতেন এসব শ্রম-শিল্পীরা। তাদের হাঁক শুনে যার প্রয়োজন সে বের হয়ে আসতেন ঘর থেকে পাটা ও নোড়াতে ধার কাটানোর জন্য। বিনিময়ে নির্ধারিত বা চুক্তিকৃত মজুরি।



মুগ্ধ হয়ে দেখার মত এই ধার কাটনেওয়ালাদের হাতের নিপুন কাজ। পাটা ও নোড়াতে বাটাল-ছেনি দিয়ে ছোট্ট একটি হাতুড়ির সাহায্যে ঠুকে ঠুকে ধার কাটানো দেখতে শিশুরা গোল হয়ে ঘিরে ধরত।



কাটনিওয়ালা কত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পাটার পাথরটি খোদায় করে চলত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাড়া পাটার গা মাছের আঁশের মত রূপ ধারণ করে ফেলেন তারা। শ্রমের সাথে শিল্পের সক্ষতা বাঙালি মানসে যেন প্রোথিত। পাটা ধার কাটনিওয়ালারা তাদের দক্ষতা আর গৃহস্থের ইচ্ছা অনুযায়ী পাটাতে ধার কেটে কেটে ফুটিয়ে তুলত মাছ, ফুল, লতা ও পাখির ছবি।



পাথরে ধাতুর টোকা পড়ে খোদাই হতো আর থেকে থেকে ঝলকে উঠত আগুনের ফুলকি। বাতাসে পাথর পোড়া বারুদের গন্ধ।



কালের গতি আমাদের ঐতিহ্যেকে যাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে মেশিনে ভাঙা মশলা।



ভোজনরসিক বাঙালিদের ঐতিহ্যে আজো আছে হাতে বাটা মশলায় তৈরি খাবার। এখন হাতে বাটা মশলার বদলে মেশিনে ভাঙানো গুড়া মশলার প্রচলন এসেছে। তারপরও অনেকে  হাতে বাটা মশলায় তৈরি খাবার পছন্দ করেন। এখনও টিকে আছে হাতে বাটা মশলা তৈরির শিল-পাটা।



মুক্তাগাছার বিষ্ণুপুর গ্রামের তোতা মিয়া দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শিল-পাটা ধার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।



(ঢাকাটাইমস/২৩ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)