অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে এল.এল.বি (অর্নাস) ও এল এল এম ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি আইন পেশায় যুক্ত আছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে শুরু থেকেই নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রসিকিউটর (ডেপুটি এর্টনী জেনারেল) হিসেবে সুনামের সাথে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বিচার কাজ পরিচালনায় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
পারিবারিকভাবেই রাজনীতির হাতে খড়ি ঘটে নুরজাহান বেগম মুক্তার। বাবা ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের ডাকসাইটের নেতা। সেই সুবাদে ছাত্র জীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে শামসু্ন্নাহার হলের সাধারণ সম্পাদিকা ও পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ লাভ করেন মুক্তা।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত তিনি। চাঁদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরজাহান বেগম মুক্তা। মহিলা আইনজীবী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে যোগদান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নিজের ভুমিকা, প্রতিবন্ধকতা, নির্বাচনী এলাকার মানুষ নিয়ে তার ভাবনা ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন মুক্তা। নিম্নে তার সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদালত প্রতিবেদক মেহেদী হাসান।
ঢাকাটাইমস: ট্রাইব্যুনালের একজন মহিলা প্রসিকিউটর হিসেবে আপনাকে কি কি চ্যালেঞ্জের সন্মুখীন হতে হচ্ছে?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করা সত্যিই ঝুকিপূর্ণ দূরূহ এবং চ্যালেঞ্জিং। টেলিফোনে বিভিন্ন সময় আমাকে এবং আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমি মুক্তিযুদ্ধের অংশ বলে মনে করি। আমি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দ্বায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। এ বিচর কাজে সম্পৃক্ত হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করি।
ঢাকাটাইমস: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ পরিচালনা নিয়ে বিরোধী পক্ষ সব সময় হত্যার হুমকি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে আসছে। একজন নারী প্রসিকিউটর হিসেবে কখনও কি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হননি?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বাংলাদেশে আর কে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। তিনি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারিয়েছেন নির্মমভাবে। আমরা তার অনুসারী হয়ে কি এতোটুকু ঝুঁকি নিতে পারবো না? আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য যুদ্ধকরে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা তখন ছোটো ছিলাম। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য কাজ করতে পেরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার স্বাদ পাচ্ছি বলে মনে হয়।
ঢাকাটাইমস: অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে এক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: দেখুন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করেছিল। দেশের জনগন এই সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট দিয়েছে। তাই এই বিচারকে রাজনৈতিক রং দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
ঢাকাটাইমস: যুদ্ধাপরাধে বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা যেমন (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আমনেষ্টি ইন্টান্যাশনাল) প্রশ্ন তুলেছেন। আপনার মতামত কি?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক জাতিসংঘরের বিশেষ দূতসহ বিদেশী অনেক কূটনীতিকরা ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখে প্রশংসা করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- একমাত্র বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালেই আসামিপক্ষের আপিলের সুযোগের বিধান রাখা হয়েছে। পৃথিবীর আর কোন দেশেই যুদ্ধাপরাধীদের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকারের কথা বলছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী হত্যা করা হয়েছিল তখন কোথায় ছিল তাদের মানবাধিকার।
ঢাকা টাইমস: আপনি কি উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: আমি জন্মগত ভাবেই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার পিতা মরহুম আবু জাফর মু: মঈনউদ্দিন ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র জীবনেই আমি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। মানুষের জন্য কিছু করতে হলে রাজনীতি অবশ্যই করতে হবে। আমি রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে চাই।
ঢাকাটাইমস: আগামী নির্বাচনে চাঁদপুরের একটি আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী।
নূরজাহান বেগম মুক্তা: হ্যা আমি চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) থেকে এর আগে ৩ বার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও আমি দল মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নবীন এবং নারীদেরকে নমিনেশনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য যা করেছে তা কেউ করেনি। এ কারণে আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যপারে আশাবাদী।
ঢাকাটাইমস: দল যদি আপনাকে মনোনয়ন না দেয় সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে জয়ী করানোর জন্য সর্বাত্মক কাজ করবো। কারণ আমি দলের প্রতি শতভাগ আনুগত্যশীল। দল যাকে ভালো মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দিবে। আর দলের একজন কর্মী হিসেবে আমি তার জন্যেই কাজ করে যাবো।
ঢাকা টাইমস: নির্বাচনী এলাকা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমার নির্বাচনী এলাকা হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তিকে বাংলাদেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবো। বিদ্যুৎ সমস্যা, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা, মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং এলাকার বেকার সমস্যা সমাধানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ মনোযোগী হবো। এজন্য আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি এলাকায় যাই। সেখানে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণেল কাছে তুলে ধরি। পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করি।
ঢাকা টাইমস: আপনি সংসদে কি ধরনের ভুমিকা রাখতে চান ?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: দেশের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে আমার সোচ্চার ভুমিকা থাকবে। যেহেতু আমি এজন্য নারী তাই নারী সমাজের সমস্যা, দাবি সংসদে তুলে ধরবো।
ঢাকা টাইমস: আওয়ামী লীগ সরকার কি আবারো ক্ষমতায় আসবে? আসলে কোন কারণে আসবে বলে আপনি মনে করেন?
নূরজাহান বেগম মুক্তা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের ৫ বছরে সর্বক্ষেত্রে যত উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পর কোন সরকারের আমলেই এতো উন্নয়ন হয়নি। এই সরকারে আমলে যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে। গ্রামের মানুষ ঘরে বসে প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। বিগত বিএনপি সরকারের মতো দেশে এখন আর লোডশেডিং হয় না। আওয়ামী লীগের আমলে মানুষের মাথাপিছু আয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছেছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ২৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়েছে। জঙ্গিবাদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে। আমি মনে করি দেশের মানুষ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এবং তাদের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় বসাবে।
ঢাকা টাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নূরজাহান বেগম মুক্তা: আপনাকেও ধন্যবাদ।