logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
আগামী নির্বাচনে বিতর্কিতরা বাদ পড়বেন : হানিফ
ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
০২ নভেম্বর, ২০১৩ ২০:৪৩:১৯
image


ঢাকা : আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম আনিফ। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শাসক দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের এখন শেষ সময়। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।



বিরোধী দল ইতোমধ্যোই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই সার্বিক বিষয় নিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফের মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকাটাইমস। তার সঙ্গে আলাপচারিতা নিচে তুলে ধরা হলো-





প্রশ্ন : আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন ?





উত্তর : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে, চূড়ান্ত পর্য়ায়ে পৌঁছে গেছি। আপনারা জনেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল হিসাবে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আমরা আসনওয়াইজ জরিপ করেছি। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতই প্রাধান্য পায়। এভাবেই আমরা আগামী নির্বানের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি।



প্রশ্ন : সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে নির্বাচনকালিন সরকার কাঠামো কেমন হবে এবং তাদের দায়িত্বই বা কী থাকবে?





উত্তর : এই বিষয়টি সংসদ সিদ্ধান্ত নিবে এবং এখনও পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বিভিন্নজন নানা রকম মতামত দিচ্ছেন। কেউ বলছে ছোট পরিসরে সরকার গঠন করতে। সেক্ষেত্রে আমরা সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনকালিন সরকার কাঠামো তৈরি করব। এবং তাদের দায় দায়িত্বও বন্টন করা হবে। সেক্ষেত্রে সকল দলের মাঝে আলাপ আলোচনা ও আন্তরিকতার প্রয়োজন। সকলে আন্তরিক হলে এই বিষয়ে একটি সমাধানে পৌছানো সম্ভব হবে।





প্রশ্ন : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিএনপি নির্বাচন প্রতিরোধের জন্য সংগ্রাম পরিষদ গঠন করছে। বিষয়টি আপনারা কিভাবে দেখছেন?





উত্তর : তারা যেমন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছে, তেমনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটি করে থাকে। তাদের দায়িত্ব থাকে যেসমস্ত ভোটার নির্বানী কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে তাদের কাছে দলীয় প্রার্থীর হয়ে ভোট চাওয়া। নিজের দলের জন্য জনমত সৃষ্টি করা। ভোট প্রদানে তাদেরকে সহায়তা করা। ভোট যাতে অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারটি খেয়াল রাখা। নির্বাাচনের আগেই এই কমিটি তৈরি করা হয় এবারও কমিটি তৈরির কাজ চলছে।  তবে বিরোধী দল সংগ্রাম পরিষদ কেন করেছে সেটা তারাই ভালো জনে। তারা যদি নির্বাচন বাঞ্চাল করার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে থাকে তবে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখবে। যে কোন নাশকতামূলক কর্মকান্ড,অরাজকতা ঠেকাতে তারা তাদের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।



প্রশ্ন : বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেনা বলে ঘোষনা দিয়েছে। তাদেরকে নির্বাচনে আনতে আপনারা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?





উত্তর : আমরা সব সময় বলে এসেছি আগামী জাতীয় সংসদ অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের উপর আস্থাশীল। জনগণের রায়কে তিনি দ্বিধাছাড়াই মেনে নিবেন।





সেকারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সংবিধানে যে কথা বলা আছে সে অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালিত হবে। এছাড়া আমাদের আছে আর কোন পথ খোলা নেই। তাছাড়া বিরোধী দল যদি মনে করেন নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন তাহলে তাদের মতামত দিতে পারে।



প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে যে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলছে সেখানে আপনারা কোন কোন বিষয়টির উপর বেশিগুরুত্ব দিচ্ছেন ?





উত্তর : প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত, যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই এবং যাদের সম্পর্কে মানুষের ভালো ধারণা আছে তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেক এমপি এবার নির্বাচন করতে পারবে এবং আবার অনেকে বাদ বড়বেন।



প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে কত সংখ্যক নতুন মুখ আসছে?





উত্তর : নতুন মুখ হিসাবে জনগণের কাছে অন্যের চেয়ে যার গ্রহনযোগ্যতা বেশি সে অবশ্যই প্রার্থী হতে পারবে। সেক্ষেত্রে নতুন মুখ থাকছে সেটা ধরে নিতে পারেন।



প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন চমক হিসাবে কী থাকছে?





উত্তর : নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি এখনও শেষ হয়নি। আর চমকটা চমকের জায়গায়ই থাক। যখন ঘোষণা হবে তখনই বোঝা যাবে চমক কী থাকছে।



প্রশ্ন : দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় একজন নির্বাচন কমিশনারের এই মন্তব্যকে আপনারা কিভাবে দেখছেন?





উত্তর : আমি মনে করি না যে, একজন নির্বাচন কমিশন কেন এমন মন্তব্য করেছেন। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া যে সম্ভব তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এই সরকারের অধীনে প্রায় ছয় হাজার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে যার একটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হয়েছে যে সরকারের আন্তরিকতা থাকলে ও নির্বাচন কমিশনের যদি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে।



প্রশ্ন : মহাজোটের বর্তমান অবস্থা কী? এরশাদ মহাজোটে থাকছেন না বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, বিষয়টিকে আপনারা কিভাবে দেখেন?





উত্তর : মহাজোট ছিল, আছে এবং থাকবে। আমাদের মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব একজন বয়স্ক প্রবীণ  মানুষ। উনি তার দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে থাকেন যা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না।





প্রশ্ন : দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে আপনার ভূমিকা কী ?



উত্তর : আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন দল। এই দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে অনেকেরই অনেক অবদান রয়েছে। তাদের তুলনায় আমার অবদান চোখে পড়ারমতো নয়। তবে দলকে কিছু দেওয়ার জন্য সর্বদা মন থেকে চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয়না। আমি একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে দলের জন্য কাজ করি।



প্রশ্ন : যুদ্ধাপরাধের বিচারের ফলে আপনাদের জনপ্রিয়তা কেমন বেড়েছে বলে আপনি মনে করনে?





উত্তর : জনপ্রিয়তা কতটা বেড়েছে সেটা পরিমাপ করা মুশকিল। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে এটা আমাদের অঙ্গীকার ছিল। কারণ তাদের বিচার করা বাঙালীর প্রাণের দাবি। আমরা শুধু দায়িত্ববোধ থেকে কাজটাকে যতটা পারি এগিয়ে নিয়েছি। যাদের কারণে আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে তাদের বিচার হবে এটাই স্বাভাবীক। বাংলার মানুষ যেটা চেয়েছিল আমরা শুধু সেটাই করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি রায়ও হয়েছে। এই সরকারের আমলেই আমরা এই রায় কর্যকর করব।





প্রশ্ন : বিগত পাঁচটি সিটি নির্বাচনে আপনাদের পরাজয়ের কারণগুলো কী বলে মনে করেন ?





উত্তর : গত পাঁচটি সিটি নির্বাচনের সময় হেফাজতে ইসলাম যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে তার ফলে আমাদের কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তার পাশাপাশি আমাদের তৃণমূল নেতাদের মধ্যেও কিছুটা হতাশা ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দুরত্ব তৈরি হয়েছিল। ফলে গত পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমাদের অনুকুলে ছিল না।  





প্রশ্ন : দেশের মানুষের জন্য এই মুহূর্তে আপনি কী বলতে চান?





উত্তর : দেশের মানুষের কাছে আমার আবেদন আপনারা ভালোমন্দের বিচার করবেন। আমার বিশ্বাস বিগত যে কোন সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকার দেশের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আমার পক্ষ থেকে দেশের সকল মানুষের জন্য ঈদ ও পুজার শুভেচ্ছা রইল।





(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/ওএফ/এআর/ ঘ.)