logo ১৯ মে ২০২৫
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা
আব্দুল আলিম আল-আসাদ
১৫ নভেম্বর, ২০১৩ ০১:১৯:০৭
image


ঢাকা: খেলাফত প্রতিনিধিত্বে আল্লাহ-ই হচ্ছেন সার্বভৌমত্বের একক অধিকারী। মানুষের নিকট যে কর্তৃত্বটুকু আছে আল্লাহ-ই তার একমাত্র উত্স। ঐশী বিধানই তথায় একমাত্র শাসন ব্যবস্থা। ইচ্ছামত পরিবর্তন বা ব্যাখ্যা প্রদানের কোন অধিকারই মানুষের নেই। খিলাফাতের শাসন ব্যবস্থায় মানুষ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করে প্রতি হরফে হরফে আল্লাহর নিটক জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতিতে প্রতি মুহুর্ত্বই কম্পমান থাকা অপরিহার্য জ্ঞান করে। কারণ এখানে কোন মানুষই নিরংকুশ কর্তৃত্বের অধিকারী নয়। খেলাফাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, "স্মরণ কর তোমার রব যখন ফেরেশতাদের বলেছিলেন আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে খলিফা তৈরি করবো" (সূরা বাকারাহ-৩০)। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আদম সন্তান মাত্রই আল্লাহর খলিফা। আমরা মুসলিম আত্মসমার্পনকারী, চিরন্তন সত্যের আলোকবর্তিকায় উদ্ভাসিত দুর্দমনীয় ঐতিহাসিক কাফেলা। আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত বিধানের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, এর সেনানীগণ সেই চির শাশ্বত সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন নিরংকুশ চেতনা জাগ্রত রাখে, নিজেদের স্বাতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখতে শিরক-বিদ'আতের আগ্রসন, অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবল ও বিজাতীয় ভ্রান্ত মতবাদেও রগ্ন আক্রমণের বিরুদ্ধের মরণপণ সংগ্রামসহ একটি সুন্নাতকে অক্ষত রাখতে মাতৃভূমির এক ইঞ্চি মাটিকে সংরক্ষণ করতে সাহাবায়ে কেরামসহ (রা.) সলফে সালেহীন ও ইমাম চতুষ্ঠয়কে জুলুম ও নির্যাতনের এক পর্যায় ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলতে দেখা যায় তীক্ষ তরবারীর নীচে হাস্যোজ্জ্বল জান্নাতী চেহারায় শহীদী রক্তে রঞ্জিত হ'তে; দেখা যায় হাসিমুখে যন্ত্রনা ও দী পান্তরের ভাগ্যবরণ করতে; যুগ যুগ ধরে কারারুদ্ধ থেকে ক্ষুিপপাসায় কালাতিপাত করতে; অবশেষে দেখা যায় সেখানেই বেহেশতের সুধা পান করতে। ইসলামী খেলাফাত রক্ষা করতে মুসলিমদের বুকের লাল টগবগে লহু বিসর্জন দিয়ে উপরিউক্ত অসাধারণ উপমায় চির ভাস্বর হয়ে থাকবে। হে রসূলের আদর্শের অনণ্য প্রতীক মুসলিম ভাই! তুমি কি মুহাম্মাদ (স.)-এর সর্বোত্তম আদর্শকে নিজের সার্বিক জীবনে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছ? তাঁর রেখে যাওয়া কুরআন-সুন্নাহর আসল রূপ অক্ষত রাখতে তুমি কি বলিষ্ঠ ভূমিকায় বলিয়ান? একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ, তুমি আজ তোমার দায়িত্ব হ'তে কোথায় নিক্ষিপ্ত হয়েছ! আল্লাহ প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান ইসলামি খেলাফাত আজ সর্বত্র ভূলুণ্ঠিত, শিরক বিদ'আতসহ যাবতীয় কুসংস্কার ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতির কালো থাবায় কলুষিত। তাই তুমি সেই গৌরবের পানে আবার ফিরে এসো! মুক্ত হস্তে তোমার দায়িত্বভার গ্রহণ কর। তোমার কি মনে পড়ে না স্মরণকালের সাক্ষী তায়েফের রক্তাক্ত অবিস্মরণীয় ইতিহাস? ঐশি বিধান চির অক্ষুণ্ন রাখার বদর, উহুদ, খন্দকের উদ্দীপ্ত ঐতিহ্য? প্রিয়নবীর (স.) মাদানি জীবনকে (৬২২-৬৩২খ্রি.)। খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ (৬৩২-৬৬১খ্রি.) মোট ৩০বছর। আবু বকর (রা.) ৩বছর, ওমার (রা.) ১০বছর, তিনি মদীনার মসজিদে সালাতরত অবস্থায় 'আবুলুলু' নামক জনৈক আত্বতায়ীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে দুই দিন পরে শাহাদত বরণ করেন। ওসমান (রা.) ১০বছর,এ ৮২বছর বয়স্ক খলিফাকে (রা.) কুরআন পাঠরত অবস্থায় গৃহে প্রবেশ করে (৬৫৬খ্রি. ১৭জুন) নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং আলী (রা.) ৭ বছর, ৬৬১খ্রি. ২৭জানুয়ারীতে কুফার মসজিদে ফজরের সালাত আদায়ে গমনকালে আব্দুর রহমান ইবনে মুলজাম (একজন খারিজী) কর্তৃক তলোয়ারের আঘাতে শাহাদত বরণ করেন। মুয়াবিয়া ৬৮০খ্রি. এপ্রিল মাসে মুত্যুবরণ করলে তার জ্যোষ্ঠ পুত্র ইয়াজিদ সিংহাসন জোর পূর্বক দখল করেন। কিন্তু ইমাম হুসাইন (রা.) কে মক্কা ও মদীনার লোকেরা খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যার কারণে ইয়াজিদ ক্ষীপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র করে অবরুদ্ধাবস্থায় ফোরাতনদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে আঁঁটকে রাখে। স্ত্রী কন্যা, আত্মীয়-স্বজনসহ শিশু পুত্র আসগরের (মোট ৭২জনের) শাহাদত বরণ করতে হয়। ইমাম হুসাইনের মস্তক কুফার দূর্গে এনে বেত্রাঘাত করার মাধ্যমে কারবালার বিষাদময় ঘটনার মাধ্যমে খেলাফত চ্যুতি ঘটে। খেলাফাতকে রসূলুল্লাহর (স.) আদর্শানুসারে সোনালী যুগের প্রতিষ্ঠাকল্পে আমৃত্যু আপোসহীন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য খড়গ, ন্যায়ের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আজ তুমি না দেখার, না বোঝার ভানকরে কোথায় প্রস্থান করছো? ফিরে এসো!



লেখক :সাংবাদিক