logo ১৮ জুন ২০২৫
রোজাদারের করণীয়
ইসলাম ডেস্ক
২০ জুন, ২০১৫ ১৬:১৯:০০
image

ঢাকা: রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দেব।’ রোজার দ্বারা খোদাভীতির যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা হয় তা অন্য কোনো ইবাদতে সম্ভব নয়। রোজাদারকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধও আল্লাহর কাছে প্রিয়। প্রেমিক আর প্রেমাস্পদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে সিয়াম সাধনা। তবে রোজার দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য ও কৃপা তখনই লাভ করা সম্ভব হবে যখন রোজা হবে নিখাত। একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। রোজার প্রতিটি মুহূর্ত যখন আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পালিত হবে, তখনই এর পূর্ণ ফায়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হওয়ার আশা করা যাবে। এজন্য একজন রোজাদারকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হবে আল্লাহর নির্দেশনার দিকে। শরিয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে প্রতিটি ধাপে ধাপে। প্রকৃত রোজাদারের সারাটি দিন হবে ইবাদততুল্য। বাহ্যিকভাবে যদিও কোনো ইবাদত না করা হয়, তবুও ধ্যান-ধারণায় সব সময় ইবাদতের খেয়াল জাগরুক রাখতে হবে।

একজন রোজাদারের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে রোজার বাহ্যিক দাবিগুলো পূরণ করা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা। পাশাপাশি প্রবৃত্তি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যাবতীয় অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। পেটকে যেমন খাদ্য চাহিদা পূরণ থেকে বিরত রাখবে, তেমনি জিহ্বাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমন যেন না হয় যে, খাদ্যাভাবে পেটের জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হলো কিন্তু মিথ্যা, পাপাচার, কুত্সা ইত্যাদি দ্বারা জিহ্বা তরতাজা হয়ে উঠল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ও তদানুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তাকে শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই (বুখারি)। বাক সংযম করতে না পারলে রোজার প্রকৃত দাবি পূরণ হলো না। যারা অধিক বাকপ্রবণ তারা রোজার দিনে তাদের জিহ্বার লাগাম টেনে ধরতে হবে। মজলিস মাতানোর খায়েশ নিবারণ করতে হবে। প্রয়োজনে রমজানে অসামাজিক আখ্যা পেলেও বাজে বৈঠক পরিত্যাগ করা উচিত। যেখানে গেলে জিহ্বা খোরাক পেয়ে যেতে পারে সে স্থানে যাওয়াই অনুচিত। যাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাদের জন্য রাসুলের (সা.) প্রেসক্রিপশন হলো— যথাসম্ভব কম কথা বলা। তিনি বলেন, ‘যে চুপ থাকে সেসব ধরনের আপদ-বিপদ থেকে হিফাজত থাকে। তবে উত্তম কথা ও দ্বীনের আলোচনা অধিক হারে করতে পারলে জিহ্বা রোজার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রোজাদার তার আচরণকে মার্জিত রাখবে। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগা ও পিপাসা পাওয়া স্বাভাবিক। এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে ফুটে না ওঠে। অযথা রাগারাগি ও বাজে আচরণ রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে। এর কারণে রোজার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হওয়ারও আশঙ্কা আছে। রোজা রেখে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া ফাসাদ কিংবা কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে না। কেউ রোজাদারের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে ঝামেলা বাধাতে এলে সরাসরি তাকে জানিয়ে দিবে যে, ‘আমি রোজাদার, আপনার সঙ্গে কোনো কিছুতে জড়াতে চাই না।’ হাদিসের এ নির্দেশনা পালন করলে আশা করা যায় কেউই রোজাদারকে উত্ত্যক্ত করার প্রশ্রয় পাবে না। কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় কোনো হানাহানিতে জড়িয়ে গেলে উপোস থাকা হবে বৃথা। কারণ রোজার প্রধান দাবি সংযমতাই হলো না। রোজাদারের ধ্যান-ধারণাতেও যেন কোনো অন্যায় কাজ প্রশ্রয় না পায়। এ ধরনের কোনো কিছু মনে উদয় হলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা উচিত। অনেকে রোজা রেখে মানুষের অনিষ্ট করার ফন্দি আটতে থাকেন। কাকে কীভাবে ফাঁসানো যাবে এ চিন্তায় বিভোর হন। এটাও রোজার দাবির পরিপন্থী। প্রকৃত রোজাদার থেকে মানুষরা নিরাপদ থাকবে—এটাই কাম্য। রোজা রেখে দুনিয়া অর্জনের পেছনে অন্ধ হয়ে চলা যাবে না। রোজার মাস এলে অনেকেই ইনকামের সোর্স বাড়িয়ে দেন। অবৈধভাবে উপার্জন করতেও কুণ্ঠিত হন না। একজন রোজাদারের জন্য এটা খুবই জঘন্য কাজ। হারাম উপার্জন ও হারাম খাদ্যে রোজা রেখে কোনো ফায়দা আশা করা যায় না। যাদের উপার্জনের উত্স সম্পূর্ণটাই হারাম, তারা এ মাসে অন্য কোনো উত্স বা উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

রোজার মাস হচ্ছে মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। রোজাদার নানামুখী ইবাদতের মাধ্যমে রমজানকে কাজে লাগাতে পারলে একটি রমজানই জীবনের সফলতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। রমজানে প্রতিটি ইবাদতের জন্যই ন্যূনতম সত্তর গুণ বেশি সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। রোজাদারের জন্য উচিত হলো বেশি বেশি নফল ইবাদতে মনোনিবেশন করা। বিশেষত কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা ইত্যাদি অধিকহারে করা। সারা বছরের আমলে যে ত্রুটি রয়েছে তা এ মাসের নফল ইবাদতের দ্বারা পূরণ হতে পারে। এ মাসের নফলও অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য।

গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো রমজানের অন্যতম লক্ষ্য। রোজা ফরজ করার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো দুস্থ অসহায় মানুষের ব্যথানুভূতি যারা প্রাচুর্যের খনিতে বাস করেন তারা এ মাসে গরিব-দুঃখীদের ব্যথা কিছুটা হলেও বুঝেন। রমজানের দাবি হচ্ছে, ওইসব লোকের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া। যারা সাহরিতে একমুষ্ঠি অন্ন ও ইফতারিতে একটি খোরমাও জোগানোর সামর্থ্য রাখে না, তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া। সদকা, ফিতরা, জাকাত ও অন্যান্য দানের দ্বারা তাদের সহযোগিতা করা যায়। একজন রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক বড় সওয়াবের কাজ। সামর্থ্যবান রোজাদাররা গরিব-দুঃখীদের ইফতার করিয়ে বিশেষ সওয়াবের ভাগিদার হতে পারেন। রমজানের প্রতিটি ইবাদত একনিষ্ঠভাবে পালন করা মুমিনের কর্তব্য। রোজাদারদের সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখতে হবে কীভাবে তার জীবনের প্রাপ্তির খাতায় কিছু সংযোজন করা যায়। প্রকৃত রোজাদারের সারাদিনই ইবাদতের শামিল। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত রোজার প্রকৃত হক আদায় করে রোজার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কোরআন-হাদিস ও শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী রোজার প্রতিটি দিন উদযাপন করতে পারলেই রমজান হবে মুমিনের সফলতার চাবিকাঠি।


(ঢাকাটাইমস/২০জুন/জেবি)