ইসলামে সম্পদের সুষম বণ্টননীতি
জহির উদ্দিন বাবর
০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:১৮:১৬

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ধনী এক শতাংশ মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে আগামী বছর তা বাকি ৯৯ শতাংশ জনগণের মোট সম্পদের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠান অক্সাফাম এ সমীক্ষাটি তৈরি করেছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে এ সমীক্ষাটি উপস্থাপন করা হবে। অক্সাফাম বলছে, ২০০৯ সালে ধনীরা বিশ্বের মোট সম্পদের ৪৪ শতাংশের মালিক ছিল। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ শতাংশে। আগামী বছর বিশ্বের মোট সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিকানা চলে যাবে ধনীদের হাতে। এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সম্পদের পরিমাণ গড়ে ২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। সম্পদের এ গুরুতর বৈষম্যের ফলে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই ব্যাহত হচ্ছে বলে সমীক্ষায় মন্তব্য করা হয়েছে।অক্সাফাম বলছে, এ পরিস্থিতি বদলে দেয়ার জন্য এ মুহূর্তে ধনীদের আয়ের ওপর কর বাড়াতে হবে এবং নূ্যনতম মজুরি বাড়াতে হবে।
বিশ্বঅর্থনীতির উপরোক্ত চিত্রটি সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থার জন্য অশনি সঙ্কেত। এ জরিপটি অর্থ ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা ও অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়। সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা থাকলে এটা কখনও হতো না। মোট সম্পদের প্রায় পুরোটাই মাত্র এক শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ার পরিণতি কখনও শুভ হতে পারে না। এর মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য চরমভাবে বিঘি্নত হবে। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা সম্পদের এ ভারসাম্যহীনতার জন্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়বে দারিদ্র্য, সৃষ্টি হবে অস্থিরতা। সম্পদ কুক্ষিগত করার এ দুষ্টচক্র অর্থ ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতিধারাকে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থায় এটা ঠেকানোর কার্যকরী কোনো কৌশলও নেই। একমাত্র ইসলামী অর্থ ব্যবস্থাই পারে এ দুষ্টচক্রের হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে।
ইসলাম সম্পদের সুষম বণ্টনের নীতি অবলম্বন করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পদ পুঁজিকরণ সমর্থন করতেন না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'বিত্তবানদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।' (সূরা জারিয়াত : ১৯)। এ কারণে ইসলাম মনে করে, সম্পদ যেন পুঞ্জীভূত না হয়ে গরিবদের মধ্যে আবর্তিত হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে।' (সূরা বাকারা : ২৩৬)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তাদের জন্য সুসংবাদ, যারা সৎপথে অর্থ রোজগার করে এবং তা থেকে ব্যয় করে।' বর্তমান বিশ্বে চলছে অবৈধ সম্পদ আহরণের অসম প্রতিযোগিতা। ইসলাম অন্যায়ভাবে কারও অর্থসম্পদ গ্রাস অথবা আত্মসাৎ করা সমর্থন করে না। এজন্য ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। হাদিসে আছে, 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘা জমি গ্রহণ করেছে, কেয়ামতের দিন তার সাত তবক জমি তার ঘাড়ে শিকলরূপে পরিয়ে দেয়া হবে।' বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদে কখনও পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। অবৈধ ও অনৈতিক পন্থায় উপার্জনের কারণেই গুটিকয়েক লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে বেশির ভাগ সম্পদ।
ইসলামে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ইচ্ছে করলেই যে কেউ, যে কোনোভাবে সম্পদ উপার্জন করতে পারবে না। উপার্জিত সম্পদ যেভাবে খুশি ব্যয় করার অধিকারও ইসলাম দেয়নি। উপার্জনকারী উপার্জিত সম্পদের স্বত্বাধিকারী হলেও এককভাবে সম্পদ ভোগ করার নিরঙ্কুশ অধিকার নেই উপার্জনকারীর। ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদ দ্বারা গরিব-দুস্থদের সাহায্য করা, প্রতিবেশী-আত্মীয়দের হক আদায় করার বিধান রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে দান করা ওয়াজিব।' তিনি আরও বলেছেন, 'সে যেন নিজের হাতে উপার্জন করে, অতঃপর নিজেকে লাভবান করে এবং অন্যকেও দান করে।' ইসলামে জাকাতের বিধান রাখা হয়েছে। নির্ধারিত সম্পদের আড়াই শতাংশ গরিব-দুস্থদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
এছাড়াও সদকা, দান-অনুদানের বিধান রয়েছে ইসলামে। এর মাধ্যমে সমাজের অক্ষম ও পিছিয়েপড়া শ্রেণীটিও আর্থিকভাবে লাভবান হয়। এতে ধনী-গরিবের ফারাক কমে।
ইসলামী অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো অপব্যয় ও অপচয় রোধ করা। হালাল ভোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় অথবা সীমালঙ্ঘন এবং বৈধ কাজে সীমালঙ্ঘন ইসলামে নিষিদ্ধ। সম্পদের সুষম বণ্টন না হওয়ায় ধনিক শ্রেণী এর অপচয় করছে, আর গরিবরা প্রয়োজনীয় সম্পদই পাচ্ছে না। ভারসাম্যহীন এ অর্থ ব্যবস্থা মানবজাতির জন্যই অকল্যাণকর। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ কল্যাণকর ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার সঠিক রূপায়ণ।
(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/জেবি)