logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
স্বাচিপে ডা. মিল্লাতকে মহাসচিব চায় সব মহল
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১২ অক্টোবর, ২০১৫ ২০:৩৫:৫২
image

ঢাকা: সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। এক যুগ পর গঠিত হতে যাওয়া কমিটিতে জায়গা করে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদ প্রত্যাশীরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্বাচিপ সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। চাইছেন সমর্থনও। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রার্থীতা ঘোষণা না করলেও ভেতরে ভেতরে জানাজানি হয়ে গেছে, সভাপতি ও মহাসচিব পদে লড়তে চান কারা। কমিটিতে ঠাঁই পেতে নতুনদের সঙ্গে দৌড়ে আছেন একযুগের পুরোনো কমিটির নেতারাও।


স্বাচিপের একাধিক নেতা জানান, ক্ষমতা কুক্ষিত করে রাখার অভিযোগ আছে, এমন নেতারাও নাকি নতুন কমিটিতে পদ পেতে জোর তদবির চালাচ্ছেন সরকার ও দলের বিভিন্ন মহলে। তবে এই নেতাদের মধ্যে ভোট নিয়ে আছে বড় ধরনের শঙ্কা। কারণ, তারা ভাল করেই জানেন, ভোট হলে বিতর্কিতদের ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই, ভোট এড়ানোর জন্য নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছেন পুরনো কমিটির শীর্ষ নেতারা।


স্বাচিপ সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে সর্বশেষ স্বাচিপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর দীর্ঘ ১২ বছর সম্মেলনে হয়নি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের। আগামী ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাচিপের সম্মেলন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। বর্তমানে স্বাচিপের সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজারেরও বেশি।


স্বাচিপ সূত্র জানায়, আসন্ন কমিটিতে সভাপতি পদ পেতে ইচ্ছুকদের মধ্যে নতুন-পুরোনো বেশ কয়েকজন নেতা আছেন। বর্তমান সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম  রুহুল হকও আবার সভাপতি হতে চান। যদিও তার বিরুদ্ধে পদ আকড়ে থাকার অভিযোগের অন্তনেই। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও স্বাচিপের পদ ছাড়েননি তিনি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কারণে সংগঠন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়লেও সম্মেলন আয়োজনে উদ্যোগী হয়নি রুহুল হক। যে কারণে, নতুন নেতৃত্ব বঞ্চিত হয়েছে স্বাচিপ। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও গতি হারিয়েছে। তবে বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান সভাপতির দৌড়ে রুহুল হকের চেয়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন স্বাচিপ নেতারা। ভেতরে ভেতরে সদস্যের সমর্থন চাইছেন এই নেতা। তবে তার বাবা জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য ছিলেন, এই তথ্য বিরোধী পক্ষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। আর্সলান দূর্গের দাবি, ভোট হলেও সমর্থনের পাল্লা তার দিকেই ভারি থাকবে। তবে ভোট হলে রুহুল হক যে আর কখনই সভাপতি হতে পারবেন না, এমন আলোচনাও আছে স্বাচিপের ভেতরে।


এছাড়া বিএমএর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া, প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও সভাপতি হতে চান। যদিও ১/১১ সরকারের সময়ে জালাল মহিউদ্দিনের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন আছে। সংস্কারবাদীদের সঙ্গে ওই সময় তার সখ্যতার বিষয়টি কারোই অজানা নয়।


সভাপতি পদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও মহাসচিব পদে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের ইঙ্গিতের আভাস মিলছে। মহাসচিব পদে যে কয়েকজন চিকিৎসক নেতা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত। সব মহলই চায় তিনি স্বাচিপের নেতৃত্বে আসুন। স্বাচিপে তরুণ নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় বলে সংগঠনটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। স্বাচিপ নেতারা জানান, গত ছয়-সাত বছর ধরে স্বাচিপ সাংগঠনিকভাবে কার্যত নিস্ক্রিয় ছিল। কিন্তু যে কয়েকজন চিকিৎসক নেতা চিকিৎকদের স্বার্থে রাজপথসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে সক্রিয় ছিলেন ডা. মিল্লাত তাদের অন্যতম। ২০১২ সালে বিএমএ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন তিনি। এছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নে বিএমএ’র গঠিত কমিটিরও সদস্য সচিব হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তরুণ এই চিকিৎসক নেতা।


স্বাচিপের বর্তমান কমিটিতে আছেন এমন একজন নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাচিপ সদস্যরা চান, তরুণ নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। সেই দিক থেকে ডা. মিল্লাত মহাসচিব পদের জন্য যোগ্য ব্যক্তি। শিক্ষাগত যোগ্যতাতেও তিনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তাছাড়া শুধু রাজনীতিই নয়, চিকিৎসক হিসেবেও ১/১১-এর সময় তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। তখন কারারুদ্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার অধীনে স্কয়ার হাসপাতালে ওই সময় শেখ হাসিনাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে তিনি নিয়মিত দলীয় প্রধানের খোঁজ নিতে যেতেন। অথচ কারা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে ঠিকমত কথাও বলা যেতো না। বিষয়গুলো গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরায়, ওই সময় অনেকের রক্তচক্ষুও তাকে দেখতে হয়েছে। সব বিবেচনায় মহাসচিব পদে ডা. মিল্লাতের বিকল্প খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না।’


এছাড়া মহাসচিব পদে বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, বিএসএমএমইউর প্রাক্তন প্রক্টর অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপনের নামও শোনা যাচ্ছে। স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরীও নাকি মহাসচিব পদ পেতে চান বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। এর মধ্যে আবদুল আজিজ সর্বশেষ ২০০৩ সালে স্বাচিপ নির্বাচনে মহাসচিব পদে লড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এবারও তিনি মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।   


আয়োজক কমিটি নিয়ে কানাঘুষা: স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুতি কমিটি করা নিয়েও অন্তর্দ্বন্দ্বের শেষ নেই। স্বাচিপ সদস্যদের জোর আপত্তির মুখে কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে দুজনকে। এর মধ্যে প্রথম আহ্বায়ক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, দ্বিতীয় আহ্বায়ক হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া। এই দুজনই স্বাচিপের সভাপতি হতে চান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এহতেশামুল হক দুলালকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় একজন স্বাচিপ নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আয়োজক কমিটির নামে পকেট কমিটি করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে ইচ্ছুকদের রাখা হয়েছে এই কমিটিতে। এখানেও ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলুর ভাই মনিরুজ্জামান ভূঁইয়াকে সভাপতি করা হয়েছে। যা নিয়ে ভেতরে ভেতরে কানাঘুষা আছে।’


গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শেন (বিএমএ) অডিটরিয়ামে প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক হয়।  মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সেখানে ছিলেন স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ সিনিয়র চিকিৎসক নেতারা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন বৈঠকে প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে ঘোরতর অভিযোগ তোলা হয়। কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ উল্লেখ করে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাকবিতণ্ডায় জড়ান। কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করার দাবিও তোলেন অনেকে। এসব শুনে অনেক শীর্ষ নেতা সেদিন বৈঠকে যোগ দেননি।