logo ১৩ জুন ২০২৫
ইসলামে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ
জহির উদ্দিন বাবর
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০৬:০৭
image

দেশকে তুলনা করা হয় মায়ের সঙ্গে। একজন মানুষ তার মাকে যেমন ভালো না বেসে পারে না, তেমনি একজন নাগরিকের তার দেশকে ভালোবাসতেই হয়। দেশের প্রতি এ ভালোবাসাটি সহজাত ও স্বতঃস্ফূর্ত। মোটাদাগে সবার মধ্যে দেশাত্মবোধ থাকলেও বিশেষ মুহূর্তে যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগে পিছপা হন না তারাই দেশপ্রেমের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে অনেকের মধ্যে দেশের প্রতি মমতা থাকার পরও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। তবে যারা তাদের কর্মে ও বাস্তবতায় দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির সহায়ক হন তারাই মূলত দেশপ্রেমিক। নাগরিকদের মধ্যে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সংখ্যা যত বাড়বে দেশ তত এগিয়ে যাবে।


দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধের সহজাত বিষয়টিকে ইসলামও সবার শীর্ষে স্থান দিয়েছে। মহানবী (সা.) দেশপ্রেমের সবচেয়ে উজ্জ্বল নজির স্থাপন করে গেছেন। স্বজাতি তাকে অন্যায়ভাবে বের করে দিলেও দেশের প্রতি তার অনুরাগ ছিল প্রবাদতুল্য। মদিনায় আশ্রিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি মক্কার প্রতিই বেশি টান অনুভব করতেন। নববি আদর্শে গড়া সাহাবায়ে কেরামও ভালোবাসতেন নিজ দেশ ও মাটিকে। হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে-প্রাণে স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলি স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। এ অবস্থায় নবী করিম (সা.) সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, 'হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।' (বোখারি)।


দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আহ্বান করেছেন, সাহাবায়ে কেরাম সর্বতোভাবে এ ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা জানতেন, নিজেদের বিশ্বাস, আদর্শ ও ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ভূখন্ডের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তারা যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষায়। ইসলামের আলোকে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ মানুষকে স্বদেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক নাগরিক নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। যুগে যুগে দেশপ্রেমিক নাগরিকরা নিজের সর্বস্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন ও সুরক্ষার আন্দোলন করে গেছেন।


দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবসময় নজর রাখতে হবে সামনের দিকে। জাতির অতীতের চেয়ে ভবিষ্যতের পদক্ষেপই গুরুত্ব পাবে রাষ্ট্র ও নাগরিকের কাছে। কোনো জাতির অতীত ক্লেদাক্ত হলেও ভবিষ্যৎ যেন সুরভিত হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে কর্তাব্যক্তিদের। জাতীয় নেতৃত্বের জন্য সহনশীলতার গুণটি অপরিহার্য। ইসলামের প্রেরণা হলো ক্ষমা, সহিষ্ণুতা ও সহনশীল আচরণ। কারণ এ গুণগুলো জাতীয় জীবনে সামনে চলার প্রেরণা জোগায়, অতীতের অন্ধকারে ফিরে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ইসলামের নবী মক্কা থেকে বিতাড়িত হলেন। কয়েক বছরের মাথায় বিজয়ী হয়ে তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তার মুখে ছিল ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার বাণী। অতীতে তার সঙ্গে কে কেমন আচরণ করেছেন সব তার চোখের সামনে। তবুও তিনি দেশ ও জাতির এগিয়ে চলার স্বার্থে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসামূলক কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতে রাষ্ট্রের কাঠামো আরও সবল হয়েছে। বিরোধী শক্তিও সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা থাকার পরও এর অপব্যবহার না করে উদারতার হাত বাড়িয়ে দেয়া অনেক মহৎ গুণ।