logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
‘সব প্রস্তুত, কমিটি ঘোষণায় বাধা কোথায়?’
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৯:৪৫:৩৫
image



ঢাকা:  “সবকিছুই নাকি প্রস্তুত।যেকোনো সময় ঘোষণা দেয়া হবে। সবশেষ বললো প্রেসিডেন্ট জেল থেকে মুক্তি পেলেই ঘোষণা হবে। কিন্তু দিন যায় দিন আসে কমিটি আসে না। তাহলে আশা দেয়ার কী দরকার ছিল?”  বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলায় বসে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মী এমন করেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।






ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই শুধু আমি না, এমন লাখ লাখ নেতাকর্মীর প্রশ্ন কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হচ্ছে না। কার স্বার্থে কমিটি নিয়ে এমন তালবাহানা চলছে, সবাই জানতে চায়।”






গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ থাকে দুই বছর। সে অনুয়ায়ী ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির মেয়াদ আছে আর মাত্র আট মাস। এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রকে করতে হবে পূর্ণাঙ্গ। ঘোষণা করতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা কমিটি। মেয়াদত্তীর্ণ মোটামুটি প্রায় সব জেলা কমিটি তো আছেই!






ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে একটি অভিযোগ অনেকটা স্পষ্ট। তা হলো- বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সিন্ডিকেটের হাতে সংগঠনটি অনেকটা জিম্মি। তাদের মর্জিতেই মেলে পদপদবী। প্রতিবার কমিটি ঘোষণার আগে নিজেদের অনুসারীদের নেতৃত্বে নানামুখি তদবীর-লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।






এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে একাধিকবার বিক্ষোভও করেছেন ছাত্রদলেরই একাংশের নেতাকর্মীরা।যারা বিক্ষোভ করেন না তাদের মনেও এদের  বিরুদ্ধে আছে চাপা ক্ষোভ। পদ না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন।






তবে রাজিব-আকরাম কমিটির আগে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষণা ছিল-বড় ভাই নয়, যারা দলের জন্য কাজ করেছে তাদের মূল্যায়ণ করা হবে।এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চারও হয়েছিল।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের।






ছাত্রদলের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ি এই সিন্ডিকেট। আংশিক কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোকদের পদ দিলেও বাকি পদে আরো অনুসারী রাখা নিয়ে জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে।






ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সবার ধারণা ছিল এ্যানী-টুকুর সিন্ডিকেটের হাত থেকে ছাত্রদল বাঁচবে।কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেলো।বারবার আশা না দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা উচিত।না হলে বিদ্রোহ হতে পারে।’ 






গত সপ্তাহে আংশিক কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহ করা পদবঞ্চিত  নেতাকর্মীরা বিদ্রোহ করেছিলেন তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।দ্রুত কমিটি ঘোষণা না করলে এ্যানী-টুকুর পাশাপাশি রাজিব-আকরামকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে বলে মহাসচিবকে অবহিত করেছেন।






এ্যানী কারাগারে থাকায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর কাছে  অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।






ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়,সিন্ডিকেটের বাইরেও অতীতের মতো বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের পছন্দের লোকদের অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টায় আছেন। সভাপতি দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় সেক্ষেত্রও কিছুটা সমস্যা তৈরী হয়েছে।তবে সভাপতি গ্রেপ্তার না হলে এতোদিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখতো বলে দাবি ছাত্রদল সংশ্লিষ্টদের।






সভাপতি মুক্তি পেয়েছেন প্রায় এক সপ্তাহ। এখনো কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় ক্ষোভ আছে ছাত্রদলে।






এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাকা মহানগরকে দুই থেকে চারভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত আছে বলেও শোনা গেছে।তবে শেষ পর‌্যন্ত দুইভাগেই থাকবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন।






শোনা যাচ্ছে,কমিটি ঘোষণায় বিলম্বের পেছনে ঢাকা মহানগর নিয়ে জটিলতারও একটি অন্যতম কারণ। নেতাকর্মীরা বলছেন,দলের বর্তমান সঙ্কটময় মুহূর্তে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলকে চার ভাগে বিভক্ত করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে চারভাগ না করে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সক্রিয় করার পর সুবিধাজনক সময়ে করার পক্ষে অনেকের মত।






ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সঙ্গে কমিটির সবশেষ অবস্থা জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও কথা বলা যায়নি।






তবে বুধবার রাতে সভাপতির ঘনিষ্ঠ ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।সবকিছু চূড়ান্ত আছে।সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও চাচ্ছেন দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে।’






তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির আকার প্রস্তাবিত ৪০১ সদস্যের হতে পারে। পাশাপাশি ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও ঘোষণা করা হতে পারে।’






(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/বিইউ)