ঢাকা: প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের নানা প্রস্তুতি নিলেও এখনই কিছু বলতে চাইছে না দলটি। তফসিল ঘোষণার পর দলের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
গত শনিবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। এই ধারাবাহিকতায় ইউপি নির্বাচনেও দলটির অংশগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক খবরই এত দিন জানা গেছে।
শনিবারের বৈঠকে অংশ নেয়া স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে তফসিলের আগে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা কম। কারণ তফসিলে কী কী ফাঁকফোকর নির্বাচন কমিশন রাখে, সেটা দেখতে চাই আমরা।”
১২ জানুয়ারি কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, মার্চ মাসের শেষ দিকে শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। কয়েক ধাপে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।” এ সময় তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণারও ইঙ্গিত দেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন (ইউপি) আইন অনুযায়ী কেবল চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে এবং একটি দল থেকে একজন মনোনীত প্রার্থী থাকবে। অন্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন বর্জন করেনি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে নানা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত বেশ ভালো ফল করেছিল দলটির প্রার্থীরা। তবে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বিএনপি। এর কারণ হিসেবে ব্যাপক কারচুপি, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ আনে দলটি। পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণেও ফল খারাপ হয়েছে বলে দলের অনেকে মনে করেন।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক এমপি অথবা এমপি প্রার্থী ছিলেন এমন নেতাদের মতামতকে প্রধান্য দেয়া হয়েছিল। তৃণমূলের মতামত তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে পৌরসভার মতো ইউপি নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় মনিটরিং সেল থাকবে। তারা তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনের মনিটরিং সেলে যারা কাজ করেছেন, সামনের নির্বাচনে তাদেরই থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে এবার প্রার্থী বাছাই হবে তৃণমূলের পছন্দে। কারণ পৌরসভায় যেসব জায়গায় জেলার নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী দেয়া হয়েছে, সেসব জায়গায় ফল বেশি খারাপ হয়েছে।
পৌরসভায় মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণেও অনেক জায়গায় বিএনপিকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ইউপি নির্বাচনে একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “পৌরসভার চেয়েও ইউনিয়ন পরিষদে সরকার বেশি প্রভাব বিস্তার করবে, সেটা আমরা জানি। তবু্ নির্বাচনে যেতে হবে আমাদের। আশা করি সঠিক সময়ে সঠিক খবর জানাতে পারব।”
(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/মোআ)