ঢাকা: এক বছরেও আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় এবার বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা।
২০১৪ সালের অক্টোবরে আংশিক কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহ করেন ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে পদবঞ্চিত যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও। তারা হামলা চালান বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দুই দিন ধরে ওই কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান তারা।
বিক্ষোভের একপর্যায়ে নতুন কমিটি ও পদবঞ্চিত নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।
পরে আন্দোলনে থাকা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আশ্বাসে বিদ্রোহের সাময়িক অবসান হয়।
কিন্তু ১৫ মাসেও এর সুরাহা না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামছেন ওই নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকবেন এমন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বিএনপির হাইকমান্ডকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে দলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন তারা। দু-এক দিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানানো হবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্রোহের কথাও জানাবেন।
পদবঞ্চিত নেতারা সশরীরে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও বিষয়টি অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন। সেটা সম্ভব না হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দলীয় প্রধানকে সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হবে।
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত লিঙ্কন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম, তার এক বছর পার হয়ে গেছে। এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। তাই এখন আর বসে থাকার সময় নেই।”
এবারের আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আবদুল মুকিত বলেন, “আবার আন্দোলন শুরু হলে তা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। তাতে পদ পেলে খুশি, না পেলেও সমস্যা নেই।”
তথাকথিত সিন্ডিকেটের হাত থেকে ছাত্রদলকে এবার উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামার কথাও জানান সাবেক এই ছাত্রদল নেতা।
২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিতরা যে বিদ্রোহ করেন, তাতে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ ওঠে ঘোষিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আরো বেশ কজন কেন্দ্রীয় বর্তমান ও সাবেক নেতার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ ওঠে।
পদবঞ্চিতদের বিদ্রোহ থামাতে তাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। তিনি মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির বেশ কজন শীর্ষ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন আন্দোলনে ভূমিকা ছিল এমন নেতাদের মূল্যায়নের আশ্বাস দেয়া হলে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান পদবঞ্চিতরা।
ওই সময়ে আন্দোলনে ছিলেন একজন সাবেক ছাত্রনেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বলা হয়েছিল ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারির আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আজও কিছুই হয়নি। হবে হবে বলে বারবার কালক্ষেপণ করা হয়েছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। এবার নতুনরূপে আন্দোলন দেখবেন।”
জানা গেছে, পদবঞ্চিতরা এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ, থানাসহ দীর্ঘদিন কমিটি হয় না এমন শাখাগুলোর পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ২০ জানুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে তারা এদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে।
প্রথম দফা বিক্ষোভের সময় পদবঞ্চিতদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন কর্মসূচির আগে ছাত্রনেতাদের অবশ্যই বিএনপির হাইকমান্ডকে অবহিত করা উচিত। এমনও তো হতে পারে কথা বললে সমাধান বের হয়ে আসতে পারে।”
এসব নিয়ে জানার জন্য বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে একাধিকবার ফোন করলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/বিইউ/মোআ)