logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
আংশিক কমিটিতেই ১৫ মাস পার ছাত্রদলের!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:১৬:২২
image


ঢাকা: জোরালো গুঞ্জন ছিল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঘোষণা করা হবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। প্রস্তুতিও নাকি ছিল। কিন্তু ঘোষণা হয়নি। এখন আর গুঞ্জনও শোনা যায় না। কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকদের উৎসাহও নিভতে বসেছে!

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর ইতিমধ্যে এক বছর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর অন্তর কমিটি নির্বাচনের বিধান। সে হিসাবে এই আংশিক কমিটিরই মেয়াদ আছে আর মাত্র ৯ মাস।

এই বাকি সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি দেয়া হবে কি না তা নিয়ে খোদ ছাত্রদলেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী সহসভাপতি হতাশা প্রকাশ করে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই বছর মেয়াদের এক বছর তিন মাস চলে গেছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এটা নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। এভাবে চললে সংগঠনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”

২০১৪ সালরে ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি এবং মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় জানানো হয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২০১ সদস্যবশিষ্টি হতে পারে। কিন্তু এখনো সেই আংশিকই রয়ে গেছে ছাত্রদলের কমিটি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদল যা হোক আংশিক নতুন কমিটি দিয়ে চলছে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ চলছে ‘সুপার ফাইভ’ নামের এক কমিটি দিয়ে; সেগুলোও আবার মেয়াদ ফুরানো। ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঘোষিত এসব কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিল। তবু বহাল মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটি। এসব ইউনিটের কমিটি গঠনের জন্য মূলত সুপার ফাইভ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।   

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় পর্ষদের পাশাপাশি এসব গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক শাখায় নতুন কমিটি ঘোষণা হবে বলেও গুঞ্জন ছিল। এর মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগরকে চার ভাগ করে কমিটি ঘোষণার পরিকল্পনার কথা চাউড় হয়েছিল। বিদ্যমান ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের সঙ্গে যোগ হবে ঢাকা মহানগর পূর্ব ও পশ্চিম নামে দুটি শাখা। এ ছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোকে মহানগরীর অধীনে না রেখে কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে রাখার সিদ্ধান্ত আছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু ছাত্রদলের কোনো কমিটিই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোর মুখ দেখেনি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, যিনি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে কমিটি চূড়ান্ত বলে জানিয়েছিলেন।

দিন পনেরো পর বিএনপির সেই নেতার কাছে কমিটি ঘোষণার বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি নিজেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানেন না।  

শুক্রবার বিকালে ওই নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবকিছু তো ঠিকঠাক ছিল। কেন ঘোষণা হলো না জানা নেই। তবে আশা করি আর বেশি বিলম্ব হবে না।”

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অবশ্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ছাত্রদলের কর্মীদের উদ্দেশে শিগগিরই কমিটি দেয়ার কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে পদ না পেলে বিদ্রোহ না করারও অনুরোধ করেছিলেন।

ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগের সুরে ঢাকাটাইমসকে জানান, সাবেক ছাত্রনেতাদের একটা সিন্ডিকেট সব কমিটিতেই প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। আংশিক কমিটির সময় এদের বেশ প্রভাব থাকলেও পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে তারা নিজেদের সমর্থকদের খুব বেশি পদে রাখতে পারেননি। নিজেদের আরো সদস্য কমিটিতে তারা রাখতে চাইছেন। এটা নিয়েই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিটি ঘোষণার বিষয়টি আটকে আছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নাজমুল হাসান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকের মতো আমরাও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু  হয়নি।  আশা করি নেতাকর্মীদের মানসিক দিক বিবেচনা করে  শিগগিরই কেন্দ্রীয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কমিটি দেয়া হবে। তা না হলে সংগঠন গতি হারাবে।”

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/মোআ)