ঢাকা: সম্প্রতি বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েক দফা হাতাহাতি, মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সব কটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে একজন ‘নিবেদিত’ কর্মীর দিকে আঙুল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বেশ কজন নেতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাতেও তাকেই দায়ী করছেন অনেকে।
এসব ‘ঝামেলা’র জন্য যার দিকে অভিযোগের তীর, তার নাম নজরুল ইসলাম। তিনি নিজেকে পল্টন থানা যুবদলের নেতা বলে দাবি করেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের কোনো পদ-পদবি নেই তার। জন্মসূত্রে নোয়াখালীর অধিবাসী নজরুল থাকেন পল্টন এলাকায়।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, নজরুল আসলে যুবদলের কেউ না। তাকে নিয়ে অফিসে অনেক সময় অনেককে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে দেখা যায়।
ইদানীং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডে সরব দেখা যায় নজরুলকে। একইভাবে সবার আগে তাকে দেখা যায় ‘ঝামেলা’র ক্ষেত্রেও। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দেখভালে নজর রাখলেও তুলনামূলক ছোটখাটো নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে থাকেন অনেকটা আতঙ্কে!
বিএনপির কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা গেছে, সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে সিনিয়র নেতাদের পাশে খালি চেয়ারে কে বসবেন তা অনেকটা ঠিক করে দেন এই নজরুল।
বিষয়টি নিয়ে অনেক নেতা বিব্রত বোধ করলেও কেউ প্রতিবাদ করেন না।
কারণ হিসেবে ‘ঝামেলা’র কথা বললেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুধু শুধু ঝামেলায় জড়াতে চাই না। তাই অনেক সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে মন চাইলেও যাওয়া হয় না।”
অবশ্য এর জন্য অনেকে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।
গত মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনের পর পল্টন থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আলম পাটোয়ারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে,এই নজরুলই তুচ্ছ ঘটনায় ফিরোজকে কিল-ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন।
পরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে নজরুলকে ধমক দিয়ে চলে যান।
ওই ঘটনায় নিজে বিব্রত হয়েছেন জানিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফিরোজ আলম বলেন, “আসলে বিব্রতকর অবস্থা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা উচিত।”
ছাত্রদলের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নজরুল প্রসঙ্গে বলেন, “নয়াপল্টনের ভেতরে-বাইরে বেশ কয়েকটি মারামারির ঘটনায় তাকে (নজরুল) সামনের দিকে দেখা গেছে। কিন্তু তাকে কিছু বলার সাহস নেই কারো।”
৩ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার পোস্ট করা ছবিতে নজরুলকে বসে থাকতে দেখা যায় রিজভী আহমদের চেয়ারের জায়গায়। ওই ছবি নিয়ে সমালোচনা করেছেন দলের অনেকে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির জনসভা মঞ্চে জায়গা সংকুলানের অভাবে যখন দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা নিচে চেয়ারে বসেন ছিলেন, তখন নজরুল গিয়ে দাঁড়ান সভামঞ্চে খালেদা জিয়ার পেছনে।
ওই সময় বারবার মাইকে ঘোষিত নেতারা ছাড়া বাকিদের মঞ্চ ছাড়তে বলা হলেও নজরুল সেখানেই অবস্থান করেন।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে এসব বিষয় জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বিষয় থাকতে আপনারা কেন এমন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন বুঝি না। বড় দলে এই ধরনের টুকটাক ঝামেলা হয়। তবে নজরে পড়লে আমরা এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। আমরা কাউকে ছাড় দিই না।”
তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নজরুল। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, আমি কারো সঙ্গে গ্যাঞ্জাম করি না। কী করি-না করি তা আপনারা তো দেখেনই। আর যদি আমি কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতাম, তাহলে কি নেতারা অফিসে যাওয়ার সুযোগ দিতেন?’
(ঢাকাটাইমস/৬জানুয়ারি/বিইউ/মোআ)