logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
কী পেলো বিএনপি?
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৯:১০:৪৩
image


ঢাকা: দীর্ঘ সাতবছর পর ভোটের মাঠে ধানের শীষ ও নৌকার  লড়াই দেখলো দেশবাসী। নির্বাচনে দৃশ্যত শোচনীয় পরাজয় বরন করলেও হামলা-মামলা আর গ্রেপ্তারে নাস্তানাবুদ বিএনপির অর্জনও কম নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি নেতারাও অনেকাংশে একমত।

আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিএনপি। এর আগে শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে অভাবনীয় সাফল্য পায় বিএনপি।কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ধাক্কা সামাল দিতে বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভালো ফল পায় বিএনপি।

তবে নান শঙ্কা নিয়ে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ২৩৫টির মধ্যে বিএনপি মাত্র ২২টি মেয়র পদ নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। বিএনপি মতো একটি বড় দলের জন্য এই অংকটা মোটেই স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন অনেকে।এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে পৌরসভা নির্বাচন থেকে কী পেলো বিএনপি। তাদের অর্জনইবা কী?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে উপকৃত হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেও সব দলের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন ভুমিকা রাখবে।

বিএনপি নেতারাও নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বেশ কিছু অর্জন আছে বলে দাবি করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রথমত- নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অনেক বাধা বিপত্তির পরও নেতাকর্মীরা অনেকদিন পর হলেও মুভমেন্ট করার সুযোগ পেয়েছেন।

দ্বিতীয়ত-আমরা রাজনৈতিকভাবে সফল হয়েছি। কারণ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছে এমনটা কেউ যেমন বলবে না, তেমনি আওয়ামী লীগ যে ভয়াবহ কারচুপি করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারও সমালোচনা হচ্ছে সব মহলে। কারণ বিএনপি ২২টি পৌরসভায় বিজয়ী হতে পারে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।

তবে তার আশঙ্কা- নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হওয়া কর্মীদের আবারো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রাণীর শিকার হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমরান হুসাইন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এবং শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকা যেমন প্রশংসার দাবি রাখে। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার বিএনপি যে সুযোগ দিয়েছে সেটাও প্রশংসার দাবি রাখে। বিএনপি নেতাকর্মীরা যে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পেয়েছে এটা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যত আন্দোলন কর্মসূচিতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে। ’

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের  প্রভাব বিস্তার করার সংস্কৃতি চালু আছে। তবে ৫ জানুয়ারির পর সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে পৌরসভা নির্বাচন মোটামুটি ভালো হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

দলের নির্বাচনী সমন্বয় টিমের সঙ্গে শুরু থেকে সম্পৃক্ত ছিলেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পৌরভোট নিয়ে দলের অর্জন নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও ইসির মুখোশ সবার কাছে উম্মোচন করা গেছে। আর সাংগঠনিক অর্জন হলো- দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকা তৃনমূলের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে আনতে সক্ষম হয়েছি। তাই কত পৌরসভায় ধানের শীষ জিতেছে আর হেরেছে সেটা খুব বড় বিষয় নয়।’

অন্য নেতাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচন অংশ নেয়ায় আমাদের রাজনৈতিক অর্জন হলো- আওয়ামী লীগের পাপের বোঝা ভারী হলো। আর বিএনপির কিছুটা হলেও পাপমুক্ত হলো। কারণ ভোট দিতে না পারায় জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ অন্যদিকে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছে।’

আর সাংগঠনিক অর্জন হলো- ‘মামলা, হামলায় জর্জরিত  নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পেয়েছে। বিপদের সময় ঝুঁিক নিয়ে কারা মাঠে থাকতে পারে তাদের বাছাই করা গেছে। পাশাপাশি সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করার সুযোগ হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/বিইউ/ এআর/ ঘ.)