ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।ইতিমধ্যে তাদের সাময়িক বরখাস্তের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে।
আওয়ামী লীগের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, যেসব পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, জনগণের মতামতের কারণে তাদের বহিষ্কারাদেশ থেকে সরে আসার দিকে এগুচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু যারা বিজয়ী হতে পারেননি, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানেই থাকতে পারে দলটি। কেননা তাদের কারণে বেশ কয়েকটি পৌরসভায় দলের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। যে সব বিদ্রোহী প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন তারা কেবল নিজেরাই পরাজিত হননি, তারা দলকেও পরাজিত করেছেন। ফলে তাদের ব্যাপারে দল কঠোর মনোভাব দেখাবে।
তবে দলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছেন, জয়ী ও পরাজিত সব বিদ্রোহীর বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। সূত্রমতে, দুই রকম সিদ্ধান্ত হলে বরং দলের ভেতরে অসন্তোষ বাড়বে। কেননা বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকের পেছনে শক্তি জুগিয়েছেন সংসদ, কেন্দ্রীয় নেতা এমনকি মন্ত্রীও। সে ক্ষেত্রে এক ধরনের ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
হাজি সেলিমের উদাহরণ দিয়ে দলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাজি সেলিম দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। তিনি এখনো সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সংসদ কার্যক্রমে অংশ নেন। উপরন্তু ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী-খোকসা আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সদরউদ্দিন খান। তিনিও এখন দলেই আছেন। দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠজন সদরউদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের দাবিদার। এমন অনেক উদাহরণ আছে।
তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে এখন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি বড় হয়ে আসছে। আগামী জুন মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। এবার বিদ্রোহীদের ছাড় দেওয়া হলে ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।এই চিন্তা থেকেই পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
কিন্তু পৌর নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে দলের কিছু সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়ে সেটি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। যারা হেরেছেন, তারাও অনেকে দলের প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এ বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শাস্তির বিষয়টি।
দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্থানীয় অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, যাদের বলা হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীকে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় দল। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে এমনকি তাদের বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়।এসব নির্দেশ-হুমকি উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থেকে গেলে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন দলটি।
এসব বহিষ্কৃত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন মেয়র পদে বিজয়ী হন। তারা হলেন, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মো. মোজাফফার হোসেন মিয়া, নেত্রকোনার মদনে আবদুল হান্নান তালুকদার, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে আবদুল কাইয়ুম, সিলেটের গোলাপগঞ্জে সিরাজুল জব্বার চৌধুরী ও কানাইঘাটে মো. নিজাম উদ্দিন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শফি আলম ইউনুছ, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সাদেকুর রহমান, বগুড়ার ধুনটে এ জি এম বাদশা, দিনাজপুরের বিরামপুরে মো. লিয়াকত আলী সরকার, মেহেরপুরে গাংনীতে আশরাফুল ইসলাম, নড়াইলের কালিয়ায় মুশফিকুর রহমান ফকির, বরগুনা সদরে শাহাদাৎ হোসেন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে আবদুস সাত্তার ও ত্রিশালে আনিসুজ্জামান, মানিকগঞ্জে গাজী কামরুল হুদা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কারিবুল হক, চুয়াডাঙ্গা সদরে ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ও জীবননগরে জাহাঙ্গীর আলম।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৫জানুয়ারি/মোআ)