logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
তল্লাশির নামে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি-দুর্ব্যবহার
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১০ জানুয়ারি, ২০১৬ ২০:০৫:২৯
image


ঢাকা: শনিবার রাত সাড়ে নয়টা। ঘটনাস্থল রাজধানীর মোহাম্মদপুর। ভুক্তভোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী। বিহারী ক্যাম্পের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন নিজ বাসায়। হঠাৎ ডাক দিলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা। মাদক আছে অভিযোগে শুরু হয় তল্লাশি। সেই সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ধমকাধমকি। এক পর্যায়ে ব্যাংক কর্মকর্তার গায়ে হাতও তুললেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।   



 





ঢাকাটাইমসকে গোলাম রাব্বী বলেন, ‘তারা বারবার বলছিল কোথায় আছে ইয়াবা বা অস্ত্র-সরঞ্জাম জাতীয় কিছু। এক পর্যায়ে শুরু হয় লাঠি-রাইফেলের মাথা দিয়ে গুতানো আর আজেবাজে বকাবকি’। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েও রেহাই মেলেনি। টাকা চেয়েছে তারা। দিতে না পারার কারণেই বেশি করে মারধর করেছে’।

ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের একজনের নাম মাসুদ রানা। তিনি মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক। তার সঙ্গে থাকা অন্যরা বুকে থাকা নামফলক খুলে ফেলে এই কাজে লিপ্ত হন।



 





উপ-পরিদর্শক মাসুদের পাল্টা অভিযোগ, ‘সন্দেহ হলে তাকে তল্লাশি করতে চাইলে বাধা দেন তিনি। পরে থানায় নিতে চাইলে বাকবিত-ায় জড়ান’। ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন মাসুদ রানা।



 





ওই ঘটনার সময় ছুটে গিয়েছিলেন রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কয়েকজন লোক শার্টের কলার ঝাপটে ধরে টেনে হিঁচরে তাকে  গোলাম রাব্বীকে) পিকআপভ্যানে তোলার চেষ্টা করে। এরপর বিহারী ক্যাম্পসহ বেশ কিছু এলাকায় ভ্যানে করে ঘুরিয়ে আসাদ গেইটে নিয়ে আসে।  খবর পেয়ে আমরা তিনজন সেখানে যাই। জানতে চাইলে তারা দাবি করে, রাব্বীর কাছে গাঁজা- হিরোইন পাওয়া গেছে। পরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাত একটার দিনে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ’।



 





এই ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকারের কাছে অভিযোগ করেছেন গোলাম রাব্বী। বিপ্লব কুমার সাহা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘অভিযুক্ত এসআইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে’।



 





৩১ ডিসেম্বর রাত তখন ১০টা। মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে থেকে রিকশাযোগে শাহজাহানপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের এক বিপণন কর্মকর্তা। তল্লাশি করে কিছু না পাওয়ার পর একজন পুলিশ সদস্য তাকে কিছু টাকা দিতে বলে তুই তোকারি করে বলেন, ‘স্যারকে খুশি করে যা’।



 





‘কেন টাকা দেবো?’- ওই কর্মকর্তা একথা বললে ওই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘দুই পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে যখন চালান দেব তখন হয়ত পাঁচ বছর জেল খাটবি অন্যথায় দুই লাখ টাকা খরচ করে বের হবি’।



 





ওই বিপণন কর্মকর্তা নিজেকে ঝামেলা থেকে বাঁচাতে পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে দেন। টাকার পরিমাণ কম দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওই পুলিশ সদস্য। বলেন, ‘ব্যাটা, এক হাজার দে’।



 





পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কথা বলে নিজেকে রক্ষা করেন ওই বিপণন কর্মকর্তা।



 





এ রকম বিড়ম্বনা আর নির্যাতনের অভিযোগ ভুরি ভুরি। শীতের মৌসুমে জ্যাকেট পড়ে কাজ করায় পুলিশের বুকের নামফলক দেখা যায় না। কেউ কেউ আবার ইচ্ছে করে নামফলক তুলে ফেলে চাঁদাবাজিতে জড়ান।



 





এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মারুফ হাসান সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের ড্রেস খুলে অথবা নেম প্লেট খুলে ডিউটি করার সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটলে অভিযোগ করতে হবে। এতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।



 





কিন্তু আশ্বাস দিলেও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধস্তনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নেন, এমনটি নয়।



 





২৭ ডিসেম্বর দুপুর পৌনে একটার সময় মাদারটেক আবদুল আজিজ স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। সবুজবাগ থানার সহকারী উপরিদর্শক মোরশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের টহল দল তাকে নির্জন গলিতে নিয়ে তল্লাশি করতে চায়। ওই যুবক তখন বলেন, ‘তল্লাশি করতে চাইলে সবার সামনে রাস্তায় করেন’। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের গাড়ির চালক মনির বুকের নামফলক খুলে তাকে থাপ্পড় মারেন।



 





বিষয়টি সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস ফকিরের কান পর্যন্ত যায়। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থাই নেননি।

ঢাকাটাইমস/১০ জানুয়ারি/এএ/ডব্লিউবি