logo ১৭ মে ২০২৫
শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ভয়াবহ পাপ
ইসলাম ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:১৯:১২
image



ঢাকা: শিশুরা ফুলের মতো। ফুটফুটে ফুল দেখলে যেমন সবাই ধরতে চায়, একটু পরশ বুলাতে চায়, একটু সুঘ্রাণ নিতে চায় তেমনি শিশুদের প্রতিও সবাই স্বভাবতই দুর্বল। কিন্তু সম্প্রতি শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও অনাচারের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। গত দেড় মাসে প্রতিদিন গড়ে একটি শিশুকে বিভিন্ন কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে। সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের বলি হতে হচ্ছে শিশুরা। অথচ ইসলাম শিশুদের প্রতি সদাচারের কড়া নির্দেশ দিয়েছে। শিশুদের অধিকার রক্ষায় সব সময় সচেষ্ট থাকার কথা বলেছে। শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও অসদাচরণ এটা কোনো মনুষ্যত্বের কাজ হতে পারে। ইসলামে এই কাজটি আরও বেশি ঘৃণার ও নিন্দার।






শিশুর প্রতি আচরণ কেমন হবে এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুকে স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান দেখায় না সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। শিশুর প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণের তাগিদ দিয়ে মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘শিশুদের প্রতি স্নেহ ও আদর দেখায় না এমন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করা উচিত’। এজন্য ওলামায়ে কেরাম বলেন, ছোটদের প্রতি দুর্ব্যবহার কবিরা গুনাহের সমতুল্য। আল্লাহ পাকের দয়া ও করুণা পেতে হলে আমাদেরকে ছোটদের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করতে হবে।






ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একদিন রাসুল (সা.) নিজ নাতি হাসান (রা.)কে চুমু খেলেন। সে সময় তাঁর কাছে আকরা বিন হারেস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি দশ সন্তানের জনক। কিন্তু আমি কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি। তখন মহানবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না’। (বুখারি: ৫৬৫১)।



নিজের বাচ্চাদের প্রতি ভালোবাসা সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি আমাদের স্নেহ ও ভালোবাসা দেখাতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিশুর বাবা বেঁচে নেই কিংবা বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই, সেসব অনাথ শিশুদের প্রতি আমাদের মমত্ববোধ প্রকাশ করতে হবে। তাদের খোঁজখবর নিতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি এবং এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখলেন।  (বুখারি: ৪৯৯৮)।






মহানবী (সা.) কেবল শিশুদের ভালোবেসেই ক্ষান্ত হননি, তিনি তাদের খোঁজখবরও নিতেন। মাঝে-মধ্যে তাদের সাথে রসিকতাও করতেন। অনেক সময় ঘোড়া সেজে নাতি হাসান, হোসেনকে পিঠে নিয়ে মজা করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)  আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার ছোট ভাই, তার উপনাম ছিল আবু উমায়ের। তার একটি বুলবুলি পাখি ছিল। সে তার প্রিয় পাখিটি নিয়ে খেলা করতো। একদিন পাখিটি মারা গেল। এরপর কোনো একদিন রাসূল (সা.)  আমাদের বাড়িতে এসে দেখলেন, আবু উমায়েরের মন খারাপ। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আবু উমায়ের মন খারাপ কেন? সবাই বললো, তার বুলবুলি পাখিটা মারা গেছে। তখন মহানবী (সা.) বললেন, ‘হে আবু উমায়ের! তোমার বুলবুলিটির কী হয়েছিল? [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭১]



একজন নবী হয়েও শত ব্যস্ততার মাঝে তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। এটি তাঁর সুমহান চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিশুর প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার কারণে তারাও মহানবী (সা.)কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন জাফর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়িতে ফিরতেন তখন বাচ্চারা তার আগমনের পথে গিয়ে অভ্যর্থনা জানাত। একদা তিনি তাঁর সফর থেকে এসে আমাকে তাঁর বাহনের সামনে বসালেন। অতঃপর নাতি হাসান, হোসেন (রা.)কে বাহনের পেছনে বসালেন। তারপর আমাদের নিয়ে তিনি মদীনায় প্রবেশ করলেন। [মুসলিম : ৬৪২১] মক্কা বিজয়ের পর যখন মহানবী (সা.) মক্কা শহরে আগমন করেন তখন কিছু ছোট বাচ্চা তাঁর কাছে আসে তখন তিনি তাদের তাড়িয়ে দেননি, বরং তাদের আদর করেছিলেন।



হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বিজয়ীবেশে মহানবী (সা.) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন আবদুল মুতালিব বংশের ছোট ছোট ছেলেরা তাঁর কাছে আসে। তিনি তাদের একজনকে নিজ বাহনের সামনে বসালেন এবং অপর একজনকে পেছনে বসালেন। [বুখারি: ১৭০৪]






শিশুদের সাথে ছিল মহানবী (সাঃ)-এর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তিনি ছোটদের তাঁর বাহনের সামনে-পেছনে বসিয়ে আনন্দ দিয়েছেন। আর আজ আমরা তাঁর উম্মত হয়ে শিশুদের অপহরণ ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করছি। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা দয়াহীনতা দেখিয়ে আমরা আমাদের সমাজকে কলঙ্কিত করে ফেলা হয়েছে। হৃদয়হীন বা নির্দয় ব্যক্তি সবচেয়ে বড় হতভাগ্য। তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে না।






(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/জেবি)