logo ১৪ মে ২০২৫
শিক্ষার বিস্ফোরণ সংখ্যায়, মানে নয়
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০৯ এপ্রিল, ২০১৬ ১১:৪৩:২২
image



ঢাকা: দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটলেও শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।  প্রধান বিচারপতিও প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার মান নিয়ে।






২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য মাত্র দুজন নির্বাচিত হয়। অথচ ওই বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭০ হাজার ৬০২ জন। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষাবিদরা তখন শিক্ষার মান নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা বলেছিলেন, পাসের হার বাড়লেও মান সেভাবে বাড়ছে না। এ জন্যই ক্লাসের পড়ার বাইরে শিক্ষার্থীরা তেমন কিছুই জানে না।






এই অবস্থা নিয়ে চিন্তিত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ও। আর এ জন্য উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।






শিক্ষাবিদরা বলছেন, কেবল উচ্চ শিক্ষা নয়, প্রাথমিক থেকে শুরু করে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই প্রত্যাশিত মানে উন্নীত হতে পারেনি।






শিক্ষার মান খারাপের বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষায় সংখ্যাগত দিক দিয়ে এগিয়েছি, এখন গুণগত দিকে এগোতে হবে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি আমরা সফল হবো।






শিক্ষার হার: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে শিক্ষার হার ৬১ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার কমে ২০ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে এবং শিক্ষাচক্র সমাপনের হার ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।






প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের হার ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে ধনী পরিবারের ৮১ শতাংশ ও দরিদ্র পরিবারের ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু শিক্ষা গ্রহণ করে। শহরে এ হার ৭৭ দশমিক ২ ও গ্রামে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের হার মোট ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে ধনী পরিবারে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও দরিদ্র পরিবারে ২৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ২০ দশমিক ২ শতাংশ।






শিক্ষার মানে ধস শুরু মাধ্যমিক থেকে: শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার চার স্তরের মধ্যে মাধ্যমিকের অবস্থাই সবচেয়ে দুর্বল। এ স্তরের শিক্ষকদের বেশির ভাগ অযোগ্য ও অদক্ষ।






আবার শিক্ষার মান বৃদ্ধির সঙ্গে পাঠ্যসূচির বাইরের জ্ঞান, সামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, মূল্যবোধসহ বিভিন্ন ব্যাপার জড়িত। এগুলোর চর্চাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি নয়।






শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার গড়পড়তা মান বাড়ছে না। পারিবারিকভাবে সামর্থ্যবানরা কিছু শিখছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই তো সেই সামর্থ্য নেই, তাই তারা তেমন কিছুই শিখছে না। আর শিক্ষকরা ক্লাসরুমবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত। তাঁরা দেখেন জিপিএ কত এলো। শিক্ষার্থীরা কতটা শিখছে তা জানতে চান না। তাই শিক্ষার্থীরাও শুধু নম্বর পাওয়ার কৌশল রপ্ত করছে। মাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতিও গ্রহণযোগ্য নয়। আগে পুরো বই পড়তে হলেও এখন তার দরকার হয় না। শিক্ষকরাও জানে না কিভাবে সৃজনশীল পড়াতে হয়’।






শিক্ষকদের প্রশিক্ষণব্যবস্থাও ভালো নয়। সরকার এই স্তরকে ঢেলে সাজাতে ২০০৮ সাল থেকে চালু করে সৃজনশীল পদ্ধতি। কিন্তু সেই সৃজনশীল এখন হয়ে গেছে নোট-গাইডনির্ভর। শিক্ষকরা এখনো পারেন না সৃজনশীল প্রশ্ন করতে। তাঁরা ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ে পড়াতেই বেশি পছন্দ করছেন। শিক্ষার্থীদের ছুটতে হচ্ছে এক শিক্ষকের কাছ থেকে আরেক শিক্ষকের কাছে।






গবেষণায় শিক্ষার মানের করুণ চিত্র: মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মান যাচাই করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সর্বশেষ গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারে না। এদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বিদ্যালয় তাদের শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে। আর ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বিদ্যালয় বাইরে থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষা নেয়।






গত নভেম্বরে দেশের নয়টি শিক্ষা প্রশাসনিক অঞ্চলের ৬ হাজার ৫৯৪টি বিদ্যালয় ঘুরে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে মাউশি। দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৮ হাজার ৫৯৮টি। প্রতিবেদনে বলা হয়,সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি নিশ্চিত করতে হলে বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং শিক্ষকেরা নিজেরা যাতে প্রশ্ন তৈরির সামর্থ্য অর্জন করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিতে হবে।






মাউশির ‘একাডেমিক সুপারভিশন প্রতিবেদন’-এ বলা হয়, সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো। এই অঞ্চলের ৩৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ বিদ্যালয় বাইরে থেকে এ ধরনের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে। আংশিকভাবে প্রশ্ন করতে পারেন ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আর প্রায় ৩৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেরা এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন।






সিলেট অঞ্চলের ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আংশিকভাবে এই প্রশ্ন করতে পারেন। ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ বিদ্যালয় বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে।






ঢাকা অঞ্চলের শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দক্ষতা বেশি। এই অঞ্চলের ৬২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পুরোপুরি সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন। তবে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন। আংশিক প্রশ্ন করতে পারেন ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।






শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এই পদ্ধতিতে শিক্ষকদের যে ব্যাপক ও নিবিড় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। এ ছাড়া সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য সৃজনশীল অর্থাৎ মেধাবী শিক্ষক দরকার। কিন্তু বর্তমানে অনেক শিক্ষক এটা ধারণ করেন না। ফলে অনেকেই অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন।






রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি উপযুক্ত নয়।






এতে বলা হয়, ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার জন্য গৃহশিক্ষকের সহায়তা নিচ্ছে। পরীক্ষার কেন্দ্রে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এই পদ্ধতির প্রশ্নপত্র বুঝতে পারে না।






প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সৃজনশীল পদ্ধতির ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ৯২ ভাগ শিক্ষার্থী গাইড বইয়ের সাহায্য নেন। মাত্র আট ভাগ শিক্ষার্থী গাইড বই থেকে দূরে থাকে।






এ ছাড়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি এবং ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতকে কঠিন বিষয় হিসেবে মনে করছে। বাংলাকে কঠিন মনে করছে তিন শতাংশ শিক্ষার্থী।






জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘শিক্ষকদের আরও মনোযোগী হতে হবে- এ কথাটা আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি। কোচিং, প্রাইভেট ও গাইড বন্ধেও আমরা তেমন কিছুই করতে পারছি না। মনে হয় যেন ধরাবাঁধা নিয়ম, তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসে। আসলে তাদের আগ্রহ নিয়েই আসতে হবে। শিক্ষকদেরও সচেতন হতে হবে। আমরা যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, কিন্তু তাঁরা নিতে পারছেন না’।






বন্ধ হয়নি কোচিং: সরকার নানা সময় ‍হুশিয়ারি দিলেও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে পারেনি।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল সময়ের আগে বা পরে কোচিং করানো যাবে। তবে কোনোভাবেই জোর করা যাবে না। এ জন্য মেট্রোপলিটন শহরের জন্য বিষয়প্রতি ৩০০, জেলা শহরে ২০০ ও উপজেলা পর্যায়ে ১৫০ টাকা নেয়া যাবে। প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে।






কোনো শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাইরের কোনো কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।






কিন্তু এই নীতিমালার কোনোটিই মানছে না বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমতো না পড়িয়ে ছুটছেন কোচিং ও প্রাইভেটের পেছনে।






সম্প্রতি মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার অজুহাতে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে কোচিং বাধ্যতামূলক করেছে। অভিভাবকরা এর বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ অনড়। এই দুই শ্রেণির কোচিং থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের আয় হবে অতিরিক্ত ৭০ লাখ টাকা। অথচ প্রত্যেক শিক্ষার্থীই স্কুলের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছে। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করার পর কোচিং করতে হচ্ছে আরো দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এরপর বাসায় গিয়ে বিকেলে ও রাতে আবার প্রাইভেট। এতে চাপ বাড়ছে তাদের ওপর।






জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন হচ্ছে না। মাধ্যমিকের বিদ্যালয়গুলোর প্রায় সবই বেসরকারি। এখানের নিয়োগ পুরোটাই ত্রুটিপূর্ণ। অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। নিয়োগে দলীয়, আঞ্চলিকতার প্রভাব প্রকট। পড়ালেখার পুরোটাই টিউশনি ও কোচিংনির্ভর। আর যাঁরা শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেন, তাঁদের মানও যথেষ্ট কি না সেটাও দেখা উচিত’।






মানোন্নয়নের উদ্যোগে সুফল মেলেনি: মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১২৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ)। এরপর আবার ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২১৫টি উপজেলায় তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নতুনভাবে পুনর্গঠিত হয়েছে সেকায়েপ। কিন্তু এই প্রকল্প শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে দুর্নীতির জন্যই বেশি আলোচিত।






প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এনে ২০ কর্মকর্তার ১৬ জনই অনাস্থা প্রকাশ করেন। ফলে তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।






উচ্চ শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও উদ্বিগ্ন: উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ ‍উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।






সংস্থাটি বলছে, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত পাঠ্যক্রম উন্নত মানের। তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে মান খারাপ সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি তাদের পর্যাবেক্ষণে।






জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘শিক্ষার প্রসার ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু গুণমান সেইভাবে নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। তাই শুধু উচ্চ শিক্ষা নয়, প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব পর্যায়েই গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে’।






মান নিশ্চিতে ইউজিসির সুপারিশ: শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে ইউজিসি। এরমধ্যে রয়েছে, পাঠ্যক্রম সংশোধন করা,শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপনের দক্ষতা ও আইটি দক্ষতা বাড়ানো। বিশ্ববিদ্যালগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি না রেখে সমন্বিত পদ্ধতি ও সিলেবাসের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা উচিত বলেও মনে করে ইউজিসি।






উচ্চশিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো দাবি জানিয়ে কমিশন বলছে, বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ। এই বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নূন্যতম চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলেও মনে ইউজিসি।






জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে উদারভাবে নম্বর দিয়ে পাসের হার বাড়ানো হচ্ছে। এখন জিপিএ-৫-এর উৎসব হয়, অথচ এদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারে না। তিনি প্রশ্ন করেন, সবাই যদি পাস করে, তাহলে আর পরীক্ষার দরকার কী?’।






তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার মান বাড়ানো প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এজন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। সিলেবাসে পরিবর্তন দরকার।






কী করবে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল?






গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনের খসড়া অনুমোদন পায়। এই আইনের অধীনে গঠিত একটি কাউন্সিল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে এ বিষয়ে স্বীকৃতি দেবে।






বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮টি পাবলিক ও ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি নির্দিষ্ট মানে আনাও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের উদ্দেশ্য।






মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সনদ দেবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতায় আসতে হবে।






এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, উচ্চ শিক্ষায় মান নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।






(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/এমএম/ডব্লিউবি)