logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
মহানগর আ.লীগের কমিটিতে ব্যবসায়ী ও এক পক্ষের প্রাধান্য!
তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:৪০:৫০
image



ঢাকা: ব্যবসায়ী ও অরাজনৈতিক লোকদের নিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বাদপড়া ও স্থান না-পাওয়া অনেক নেতা। তাদের দাবি, বঞ্চিত হয়েছে দুঃসময়ে মাঠে থাকা ত্যাগী নেতারা।






আবার কারো কারো অভিযোগ, একটি পক্ষকে প্রাধান্য দেয়ায় নতুন কমিটিগুলো হয়েছে একপেশে। 






তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে কমিটি গঠনের একজন সমন্বয়ক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা যোগ্যদেরই কমিটিতে রেখেছেন। যোগ্য যারা স্থান পাননি, তাদের কেউ কেউ নগর কমিটিতে থাকতে পারেন।






রবিবার ঢাকা সিটি করপোরেশনের আদলে  মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নামে আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। একই সঙ্গে ঢাকা উত্তরের ২৬টি থানা, ২৬টি ওয়ার্ড, ৯টি ইউনিয়ন ও ১০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ২৪টি থানা, ৫৭টি ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন কমিটিও ঘোষণা করা হয়।






ঘোষিত কমিটিগুলো নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মধ্যে।  ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নবগঠিত কমিটিগুলোতে স্থান না পাওয়া থানা ও ওয়ার্ড নেতারাও।






তাদের ভাষায়, নতুন কমিটিতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের বসানো হয়েছে শীর্ষ পদে।  তা ছাড়া এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের পাওয়া যায়নি, তারা স্থান পেয়েছেন নতুন কমিটিতে। বাদ পড়েছেন দলের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতারা।






কমিটি গঠনে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে, তা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি হতে পারে না বলে দাবি করেন তারা। বহিরাগতদের সুপারিশে কমিটি গঠন করা হয়েছে দাবি করে তারা বলেন, এসব কমিটি দলের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি বয়ে আনতে পারে।






ক্ষুব্ধ একজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, “একটি বিশেষ বলয়কে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যারা এক-এগারোর পর দলীয় প্রধানের বিরোধিতা করেছিল, তারাই সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, মেয়র হয়েছে এবং নগর আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছে। আমরা যারা কখনো দলের মধ্যে বলয় সৃষ্টি করিনি, তারা  বঞ্চিত হয়েছি।  সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদককেও কোথাও রাখা হয়নি এবং ওনাকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ”






ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কমিটি একপক্ষীয় হয়েছে। কোনো একটি বিশেষ গ্রুপকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা তো দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলাম।  এখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে নবগঠিত কমিটি।”






ঘোষিত কমিটির তালিকা থেকে দেখা যায়, ঢাকার দুই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চারজনই পেশায় ব্যবসায়ী। তবে দুই কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজনীতিতে তুলনামূলক বেশি সক্রিয়। থানা কমিটিগুলোর অনেক ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বহাল আছেন।  এ ছাড়া থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।






রাজধানীর রমনা থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল মুনির চৌধুরী বলেন, “নেতারা যাদের ভালো মনে করেছেন তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার থানার কমিটিটা পলিটিক্যাল কমিটি হয়নি। রমনা থানায় ওনাকে সেক্রেটারি করার কারণটা আমি জানি না। সভাপতি যিনি হয়েছেন, উনি কখনো রাজনীতির মাঠে ওভাবে সক্রিয় ছিলেন না।”






ক্যান্টনমেন্ট থানার সদ্য সাবেক সভাপতি শফি আহাম্মেদ বলেন, “থানা সম্মেলনে সভাপতি পদে কাউন্সিলররা আমাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। পরে আমাকে সভাপতি করে সমন্বয়ক ফারুক খানের কাছে একটি কমিটি দেয়া হয়। সেখানে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম সহ-সভাপতি ছিলেন।  এমনকি ওই সম্মেলনেও তিনি (কাজী রফিকুল ইসলাম)  সহসভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন।  কিন্তু কমিটিতে কী কারণে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে, আমি জানি না। আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমার মনে হয়, বর্তমান সভাপতির বাড়ি ফরিদপুর অঞ্চলে, ফারুক খানও ফরিদপুর অঞ্চলের লোক, তাই তাকে ( রফিকুল) সভাপতি করা হয়েছে।”






মতিঝিল থানার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু বলেন, “আমি ২৪ বছর ধরে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের নেতা আজিজ ভাই মারা গেছেন, আমাদের কেউ দেখে নাই। কমিটির কোথাও আমাদের রাখা হলো না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। থানা সম্মেলনে আমার নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এসেছিল। রাজ্জাক ভাই আমাকে কী কারণে বাদ দিলেন, সেটা তিনিই জানেন। আমি জানি না আমার কী অপরাধ? দলের জন্য এত কিছু করেছি, এক-এগারোর সময় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন করেছি। সিটি নির্বাচনের সময় দল থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দল দেয়নি। ভেবেছিলাম কমিটিতে রাখা হবে।”






তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। তাদের দাবি, অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে দলের পাশে ছিলেন তারা। তাই দলের সভাপতি তাদের মনোনীত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ থাকত, তাহলে তাদের এ পদে মনোনীত করা হতো না।






রমনা থানার সদ্য সাবেক সভাপতি আবুল বাশার ঢাকাটাইমসকে বলেন, “অনেক দিন তো থানা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলাম, এখন নগরে রাজনীতি করতে চাই।  নেতাদের কাছে তার মূল্যায়ন চাই। আর নতুন কমিটিতে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা অনেক যোগ্য। নিজেদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই এ দায়িত্ব পেয়েছেন তারা।”






একই রকম মনে করেন লালবাগ থানার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, যোগ্য ও পরীক্ষিতদেরই  নতুন কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে।






এদিকে, আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নগর কমিটির সঙ্গে থানা কমিটি দেয়া হয়েছে। শুধু নগর কমিটি নয়, থানা কমিটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী তদারক করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ কয়েকটি থানার নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। 






এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ঢাকাটাইমসকে বলেন, “থানা কমিটির সদ্য সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা নতুন কমিটিতে স্থান পাননি, তাদের মধ্যে যোগ্যরা নগর কমিটিতে স্থান পাবেন।”






নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজ্জাক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি।  তার নির্দেশমতো আমরা থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছিলাম। তিনি তা দেখে অনুমোদন করেছেন। কয়েকটা নাম পরিবর্তনও করেছেন।”






এ বিষয়ে জানতে উত্তরের সমন্বয়ক কর্নেল (অব.) ফারুক খানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।






নবগঠিত ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, “আমি মনে করি, নেত্রীর নির্দেশে অত্যন্ত ভালো কমিটি গঠিত হয়েছে।”






ঢাকা দক্ষিণের নতুন সভাপতি আবুল হাসনাত বলেন, “নেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সবার সঙ্গে মিলেমিশে দায়িত্ব পালন করব। যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করব।”






সদ্য সাবেক অবিভক্ত ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনের বাবা মোহাম্মদ হানিফ, যিনি নিজেও মেয়র ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম এ আজিজ। তিনি সম্প্রতি মারা যান। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।






(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/টিএ/মোআ)