নিজ পেশায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
০৪ মে, ২০১৬ ১২:০২:১৩

দুনিয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে কোনো না কোনো কাজ করতে হয়। এতে যা উপার্জন হয় তা দ্বারাই প্রত্যেকে তার নিজের ও পরিবারে প্রয়োজন মেটায়। সম্মানজনকভাবে প্রয়োজন মেটানো ও বেঁচে থাকার সামগ্রী সংগ্রহের জন্য এটাই দুনিয়ার চিরাচরিত নিয়ম। আল্লাহ তায়ালা চাইলে এ নিয়মের বাইরেও রিজিক দিতে পারেন। কেননা, প্রকৃত রিজিকদাতা তিনিই এবং রিজিক দানের জন্য তিনি কোনো নিয়ম বা মাধ্যমের মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার স্থান এবং আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সর্বাবস্থায় পরীক্ষা করে থাকেন, তাই মানুষের রিজিক প্রাপ্তিকে নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন। এটাও তার পরীক্ষারই একটি পদ্ধতি।
অর্থাৎ মানুষ কোনো একটা উপায় অবলম্বন করবে, কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকবে এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে রিজিক হাসিল করবে। এ কারণেই কুরআন-হাদিসে মানুষকে রিজিকের জন্য যে কোনো বৈধ উপায় অবলম্বনের প্রতি নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
যেমন ইরশাদ হয়েছে, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর ফজল সন্ধান করবে। (সূরা জুমা : ৯)
মুফাসসিরীনে কেরামের মতে, এ আয়াতে ‘ফজল’-এর সন্ধান দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজিক সংগ্রহ করাকে বোঝানো হয়েছে।
অন্য আয়াতে আছে, যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে, তখন শিকার করবে। (সূরা মায়িদা : ২)
এভাবে সালাত ও হজ আদায়ের পর ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিকার কার্যে লিপ্ত হওয়ার আদেশ দিয়ে এসব ফরজের পর রুজি-রোজগারের চেষ্টা করাও যে ফরজ সে দিকেই ইশারা করা হয়েছে।
মহানবি (সা.)-এর হাদিসে এ ইশারা আরও সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, হালাল রুজি উপার্জন করা অপরাপর ফরজের পর একটি ফরজ কাজ।হালাল রুজি উপার্জনের বিভিন্ন মাধ্যম হতে পারে। তার মধ্যে কে কোনটা গ্রহণ করবে, তা নির্ভর করে তার যোগ্যতা, সুবিধা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর। এসবের ভিত্তিতে যে ব্যক্তি যে কাজই বেছে নিক, হৃদয়ে ঈমান ও তাকওয়ার ঐশ্বর্য থাকলে তার জন্য কোনোটিই তুচ্ছ নয়। কাজেই যথাযথ বিবেচনার পর যে ব্যক্তি যে পেশাই গ্রহণ করবে, তার কর্তব্য সে পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক থাকা। নিজ পেশার প্রতি যদি শ্রদ্ধার দৃষ্টি থাকে, তবে কাজ সুষ্ঠু ও সুচারু হতে বাধ্য। কিন্তু আজকাল এ জিনিসের বড় অভাব। কাজে ফাঁকি দেওয়া কিংবা দায়সারাভাবে আঞ্জাম দেওয়া শ্রদ্ধাহীনতারই আলামত। অথচ প্রতিটি পেশার ভেতরই এমন উপাদান নিহীত রয়েছে, যা শ্রদ্ধা কুঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। একটু চিন্তা করলেই আমরা সে ক্ষমতার স্পর্শ পেতে পারি এবং অন্তরে জাগাতে পারি আপন পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
মোটকথা, পেশা যেটাই গ্রহণ করা হোক, তাতে যদি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ছোঁয়া থাকে, তবে ব্যক্তির চোখে সে পেশা মহৎ হয়ে ওঠতে বাধ্য। তখন আর কোনো পেশাদারের চোখেই নিজ পেশাকে হীন মনে হবে না। হ্যাঁ, একটি পেশার চেয়ে অন্যটি শ্রেষ্ঠ হতে পারে, কিন্তু মাহাত্ম্যের বহুমুখী উপাদান দৃষ্টে তুচ্ছ নয় কোনোটিই। কাজেই শ্রেষ্ঠটি কেন হস্তগত হলো না, সেই আক্ষেপ না করে উচিত আপন কাজের মর্যাদা উপলব্ধি করা। অন্তরে সেই উপলব্ধি এসে গেলে হীনমন্যতা বিদায় হবে এবং আপন পেশার প্রতি দৃষ্টি হয়ে উঠবে শ্রদ্ধাশীল, যা দায়িত্ব পালনে যত্নবান হওয়া ও কার্যে সুষ্ঠুতা আনয়নের জন্য অপরিহার্য।
আলেম ও সাংবাদিক