logo ০৯ জুন ২০২৫
বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
ইসলাম ডেস্ক
২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ২০:২৫:১১
image



ঢাকা: সরাসরি স্রষ্টার নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার অন্যতম বৃষ্টি। বৃষ্টি ভূমিকে ঊর্বর ও উৎপাদনশীল করে। বৃষ্টিতে সজীব ও সুশোভিত হয়ে ওঠে গাছপালা ও তৃণলতা। তীব্র খরায়, গ্রীষ্মের দাবদাহে জমিন যখন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, চারদিকে প্রকৃতি খাঁ খাঁ করতে থাকে, তখন মহান প্রভুর ঐশী প্রেরণায় এক পশলা বৃষ্টি জগতে সঞ্চার করে নতুন প্রাণের। প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। মৃতপ্রায় বসুন্ধরা ফিরে পায় তার সজীবতা ও সৌরভ। বৃষ্টি কত বড় নেয়ামত সেটা রাজধানীসহ দেশের কিছু অঞ্চলের মানুষ ভালোভাবে টের পাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য চার দিকে হাহাকার। কবে নামবে রহমতের বৃষ্টি সে অপেক্ষা সবার।






অনাবৃষ্টি ও খরার অবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা উচিত। সৃষ্টিকর্তার শরণাপন্ন হলে আল্লাহ বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, বালা-মুসিবত অবশ্যই দূর করে দেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তিনি (আল্লাহ), যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং আকাশ হতে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, অতঃপর আমি (আল্লাহ) তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, ওগুলোর বৃক্ষাদি উদগত করবার ক্ষমতা তোমাদের (মানুষের) নেই।’ (সুরা নমল)






অনাবৃষ্টি হলে আল্লাহর মহান দরবারে বৃষ্টির জন্য দোয়া করার নিয়ম রয়েছে। ইসলামে বৃষ্টির জন্য দোয়া করার জন্য যে নামাজ আদায় করার নিয়ম রয়েছে সেই নামাজকে ‘ইসতিসকা’ বলা হয়। ইসতিসকা শব্দের অর্থ বৃষ্টির জন্য দোয়া করা। হাদিস শরিফের বিভিন্ন গ্রন্থে ইসতিসকার নামাজ ও দোয়ার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। রাসুল সা. মসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়ানো অবস্থায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছেন। আবার ঈদগাহে কিম্বা খোলা ময়দানে বিশাল সমাবেশে ইসতিসকার নামাজে ইমামতি করেছেন। বৃষ্টির জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাতও করেছেন।






এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জুমার দিনে মিম্বরের সোজাসুজি দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। প্রিয়নবী সা. তখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি প্রিয়নবী সা.-এর দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! গবাদিপশু সব ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোতে চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যেন তিনি বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ সা. তার মোবারক হাত দু’খানা ওপরে তুলে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মাসকিনা আল্লাহুম্মাসকিনা আল্লাহুম্মাসকিনা; হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন। হজরত আনাস রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা দেখিনি, আকাশে মেঘের লেশমাত্রা নজরে পড়েনি। সালআ পর্বত ও আমাদের মাঝখানে কোনো ঘরবাড়িও ছিল না। হঠাৎ সালআ পর্বতের পেছন থেকে ঢালের মতো মেঘ বেরিয়ে এলো এবং মধ্যাকাশে গিয়ে বিস্তৃত হয়ে গেল। তারপর বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হলো। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্যের দেখা পাইনি। পরবর্তী জুমার দিন সেই লোকটি দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। তখন প্রিয় নবী সা. মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল, সড়কগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, কাজেই আপনি বৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়া করুন। হজরত আনাস রা. বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. দুই মোবারক হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর আর বর্ষণ করবেন না- টিলা, পর্বত, উচ্চভূমি, মালভূমি উপত্যকা ও বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, তৎক্ষণাৎ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল, আমরা রোদ মাথায় নিয়ে ফিরলাম।’ (বুখারি)






অনাবৃষ্টি বা খরাজনিত কারণে বৃষ্টির জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করা সুন্নত। অনাবৃষ্টি আক্রান্ত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ দীন-হীন পোশাক পরিধান করে খুবই বিনীতভাবে পায়ে হেঁটে খোলা ময়দানে সমবেত হয়ে বিনম্রভাবে কাতরস্বরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। তারপর ইমামের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজে আজান-ইকামত নেই। ইমাম কেরাত পাঠ করবেন উচ্চৈঃস্বরে। ইমাম তার গায়ের চাদর উল্টিয়ে নেবেন অর্থাৎ চাদরে ডান পার্শ্ব বামে এবং বাম পার্শ্ব ডানে পরিবর্তন করে কিবলামু‍খি অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন। এর আগে খুতবা দেবেন। বহু নজির আছে এই নামাজ শেষ হতে না হতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে থাকে। যদি না হয় মোট তিনদিন এই নামাজ আদায় করতে হয়।






নবী করিম (সা.) মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, মসজিদ থেকে ৩০৫ মিটার দূরে অবস্থিত ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছিলেন। বর্তমানে সেখানে ছাতার আকৃতির কয়েকটি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ আছে। যার নাম ‘মসজিদে গামামা’ অর্থাৎ ‘মেঘের মসজিদ’।






(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/জেবি)