ইসলামে মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
২৪ এপ্রিল, ২০১৬ ১০:৪১:২৯

শিশুর জীবনে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই। মায়ের দুধ শিশুর জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ। আল্লাহপাকের অফুরন্ত নিয়ামত। এ দুধ শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ, পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত ও আদর্শ খাবার। ইসলাম শিশুকে মায়ের দুধ পান করার বিষয়ে জোর তাগিদ প্রদান করেছে। এটা শিশুর জন্মগত অধিকার। এ কারণে জীবনের নিরাপত্তার চরম হুমকি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহপাক হযরত মূসা (আ.)-এর মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মূসার মায়ের কাছে নির্দেশ দিলাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও।’ -সূরা আল কাসাস: ৭
শিশুর জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য খুব উপকারী। মায়ের বুক থেকে হলুদাভ ঘন-আঁটাল যে দুধ বেরিয়ে আসে তাই শালদুধ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, একে ‘কোলোস্টাম’ বলে। এ দুধে স্নেহ ও শর্করার পরিমাণ থাকে কম। তবে খনিজ লবণ, লৌহ, রোগপ্রতিরোধী পদার্থ ও আমিষের পরিমাণ সাধারণ দুধের চেয়ে বেশি থাকে। মায়ের দুধ গ্রহণকারী শিশুদের এলার্জি, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ডায়রিয়া, যক্ষা, মেনিনজাইটিস, অন্ত্রপ্রদাহ জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয়। হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার।(সুনানে তিরমিজি)
জন্মের পর শিশু এক-দেড় বছর বয়স পর্যন্ত খুব দ্রুত বাড়ে। ওই সময় তার বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন। আর নবজাতকের পুষ্টি বলতে মায়ের দুধকেই বোঝায়। এ দুধ কমপক্ষে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে খেতে দিতে হবে। ছয় মাস পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, শিশুর ওপর মায়ের প্রভাব পড়ে থাকে। সুতরাং এ সময় মাকে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। শিশুর যাতে দুধের অসুবিধা না হয়, সে জন্য মাকে কিছু অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। নবজাতক যেহেতু জন্মের পর অন্যান্য প্রাণীর মতো নিজে খাদ্য সংগ্রহ করে খেতে পারে না, সেহেতু ইসলামি শরিয়ত শিশুর জন্য দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করার অনুমোদন করেছে। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। (সূরা আল বাকারা:২৩৩)
ইসলাম মতে, কোনো কারণে মা শিশুকে দুগ্ধদানে অক্ষম হলে বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর তাগিদ পর্যন্ত করেছে। এর মাধ্যমে অনুমান করা যায় ইসলামে মায়ের দুধের গুরুত্বের বিষয়টি। ইসলাম বুকের দুধ খাওয়ানো প্রতিটি মায়ের জন্য ওয়াজিব করেছে। যারা সফলভাবে এই ওয়াজিব পালন করবে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুর স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, চোখের জ্যোতি, আচার-ব্যবহার, সামাজিকতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার সুন্দর বহিঃপ্রকাশ হয়। যে নবজাতকের মা শিশুকে দুধ পান করান, তার জন্য মাহে রমজানের রোজা পালনের বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করে দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসাঈ)
ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাত শিশুর জন্মগত অধিকার। যাতে কোনো কারণে এটি খর্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ দানকে উন্নয়ন ও সহায়তা করা। ভবিষ্যৎ কর্ণধার শিশুদের মানবাধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে মায়েদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মাতৃদুগ্ধ যাতে শিশুরা নিয়মিত পায় এ জন্য মায়েদের মধ্যে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মায়ের দুধের অনন্য ভূমিকার কথা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান মায়ের দুধ খাওয়ানোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করছে। বিষয়টি মায়েরা মন দিয়ে উপলদ্ধি করলেই মঙ্গল।
লেখক: অলেম ও সাংবাদিক