ঢাকা: ইচ্ছে ছিল সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়বেন। কিন্তু ২০০৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে পারিবারিক কারণে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে ভর্তি হলেন রাজধানীর মিরপুরে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে।
কলেজের বড় ভাইদের পরামর্শে অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি প্রস্তুতি শুরু করেন বিসিএসের জন্য। হোমিওপ্যাথিক কলেজ থেকে পাস করার পরই অংশ নেন সরকারি কর্মকমিশনের বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষায়। প্রথম দফায় ব্যর্থতা। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ৩৪ তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষায় পছন্দের পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হলেন মো. শাহ কামাল।
শুক্রবার ঢাকাটাইমসে এসেছিলেন শরীয়তপুরের কৃতী সন্তান কামাল। জানালেন তার সাফল্যের কাহিনি, উঠে আসার গল্প আর দমে না গিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা। বলছেন, ‘ব্যর্থতা জীবনে আসবেই, কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। বরং কোন কারণে সাফল্য আসেনি, সেটা বুঝতে পারলে নিজেকে আরও বেশি তৈরি করা যাবে’।
পছন্দের ক্যাডারে চাকরি, তাও আবার মেধাক্রমে প্রথম। ফলাফল প্রকাশের পর কেমন লেগেছিল?
যখন প্রথম আমি খবরটি পেলাম তখন এক কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আনন্দ প্রকাশের ভাষাই হারিয়ে ফেলি কিছুক্ষণের জন্য। কেবল হেসেছি আর পুরনো দিনের কথা ভেবেছি। কতই না কষ্ট করতে হয়েছে। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটবে ভেবেই সবচেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।
আপনাকে নিয়ে বাবা-মার স্বপ্ন কী ছিল?
পরিবারের স্বপ্ন ছিল-এমবিবিএস পড়বো, চিকিৎসক হবো। সেই স্বপ্ন যখন প্রথম পূরণ হল না, তখন আমার সঙ্গে বাবা-মারও খারাপ লেগেছে। তবে তারা উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, আরও ভাল কিছু হবে।
পুলিশ হওয়ার পরে তাদের অনুভূতি কেমন ছিল?
নিয়োগ পরীক্ষার ফল জানার পর যখন বাড়িতে যাই তখন বাবা-মা দুইজনই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তারা আমাকে দেখে কেঁদে ফেলেন। আসলে এমন পরিবেশ ভাষায় বোঝানো যায় না। কারণ আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে বাবা-মা এবং ভাইদের অবদান অপরিসীম। তারা যদি উৎসাহ না দিতেন তাহলে আমি হয়তো এই অবস্থানে নাও আসতে পারতাম।
এখন নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
চাকরিজীবনে নিজেকে একজন সৎ ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমার কাছে যেন সাধারণ মানুষের আসার সুযোগ থাকে। তারা যেন নির্ভয়ে তাদের কথা বলতে পারে। সেই সুযোগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথমবার বাদ পড়েন কোন পর্যায়ে?
৩৩তম বিসিএসেও প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই আমি। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ে যাই। ৩৪তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার আগে জেদটা আরও চেপে বসে। আরও বেশি মনযোগ, প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেই।
পড়াশোনায় নিশ্চয়ই বরাবর ভালোই ছিলেন...
তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। আমার থানায় প্রথম হয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম। এরপর অষ্টম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। একই বছরে শিক্ষা সপ্তাহের বাংলা রচনা প্রতিযোগিতায় পুরো জেলায় প্রথম। এরপর ২০০১ সালেও একই বিষয়ে জেলায় দ্বিতীয় বারের মতো প্রথম হলাম। স্বপ্ন দেখা তো আসলে সেখান থেকেই শুরু। যদিও স্বপ্ন ছিল এমবিবিএস চিকিৎসক হওয়ার। তারপরেও হোমিও চিকিৎসায় পড়াশোনা করে যে খুব খারাপ ছিলাম তা নয়, তবে পুলিশ ক্যাডার হতে পারায় আরও অন্যান্য স্বপ্ন পুরণ হয়েছে আমার।
বিসিএসে সাফল্যের জন্য কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে?
পছন্দের ক্যাডার পেতে হলে কোন বিষয়ে খুব বেশি দুর্বল হলে চলবে না। বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে বুঝতে হবে কোন বিষয় ভাল আর কোনো বিষয় দুর্বল। দুর্বল জায়গায় জোর দিতে হবে। যে বিষয়গুলোতে সঠিক উত্তর দিতে পারলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়, এসব বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আগামীতে যারা বিসিএস দিচ্ছেন তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?
একজন শিক্ষার্থীর যদি স্বপ্ন থাকে সে বিসিএস ক্যাডার হবেন তাহলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রথমে অ্যাকাডেমিক পড়াশুনায় বেশি মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি পত্রিকা নিয়মিত পড়া উচিত।
পড়াশোনার বিষয়ে শিক্ষার্থীকেই ঠিক করতে হবে কীভাবে পড়লে তার মনে থাকে। আর প্রতিদিনই তাকে পড়তে হবে। একদিন ১০ ঘণ্টা। আরেকদিন একঘণ্টাও না। এভাবে চলবে না। প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পড়তে হবে। আর গ্রুপ স্ট্যাডি করে পড়লে বেশি ভাল হয়। তাহলে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়।
কোথাও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বা তথ্য পেলে ডায়েরিতে লিখে রাখা জরুরি। প্রতিনিয়ত লিখে রাখলে এবং সেগুলোতে চোখ বুলালে নিজের তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিতে হবে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক কিছুই এখন সহজলভ্য ইন্টারনেটের বদৌলতে। পাশাপাশি পড়তে হবে বাংলাদেশের সংবিধান, ধারণা রাখতে হবে ইতিহাস, রাষ্ট্র পরিচালনা, দেশ ও বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। কিছু বিষয় মুখস্থ রাখলেও পরীক্ষার খাতায় লেখার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপনায় স্বাতন্ত্র্য থাকতে হবে। লেখা তথ্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক হতে হবে।
সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/২৯মে/এমএম/ডব্লিউবি)