logo ২০ মে ২০২৫
মহররমের বিশেষ আলোচনা-১৪৩১ হিজরী
মোহাম্মদ ইলিয়াস
০৩ নভেম্বর, ২০১৩ ২১:৩৭:৫৪
image


ইমাম যখন কুফা যাওয়ার পথে কারবালায় যখন ইমামের কাফেলাকে হোর ইবনে ইয়াযিদের নেতৃত্বাধীন সেনাদল আটকে দিয়েছিলো, তখন ইমামের একজন সঙ্গী বলেছিলেন, এই সেনাদলের আকার অনেক ছোট। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করলে তাদের পরাভূত করতে পারবো। তখন ইমাম বললেন, "আমি আগে যুদ্ধ শুরু করবো না"। তিনি বরং হোরের তৃষ্ণার্ত সেনাদের পানি করানোর জন্য তার সাথীদের নির্দেশ দিলেন। শত্রুবাহিনী হত্যা করতে এসেছে জেনেও তাদের প্রতি এই ছিলো ইমামের ব্যবহার। এই মহানুভব আচরণের পাশাপাশি কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেইন (আঃ) ও তার সাথীদের সাহসিকতার কাহিনীও প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ সম্পর্কে এজিদের বাহিনীর এক সেনার বর্ণনা ইতিহাসে এসেছে এভাবে : "তারা যখন তরবারি হাতে নিয়ে আমাদের দিকে ছুটে আসতো তখন সিংহের ন্যায় আমাদের সেনাদের ছত্রভঙ্গ করতে করতে এগিয়ে যেতো। কয়েক ঘন্টা সময় পেলে তারা আমাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলতো। মৃত্যুর পরোয়া না করে তারা সামনের দিকে এগিয়ে আসতো এবং আমাদের বহু সেনাকে খতম করার পর আমাদের সেনাদের হাতে মারা পড়তো।"



ইমাম হোসেইন (আঃ) এর সঙ্গীরা কারবালার ময়দানে আনুগত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আশুরার আগের রাতে ইমাম তার সাথীদের মুক্ত করে দিয়ে বলেছিলেন, যার ইচ্ছা সে চলে যেতে পারে, কারণ, তাঁর সাথে থাকার অর্থ হচ্ছে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু ইমাদের সঙ্গীরা প্রত্যেকে নানাভাবে তাদের আনুগত্যের শপথ করে ইমামকে ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা করলেন। মুসলিম ইবনে উজ্জাহ নামের ইমামের এক সাথী বললেন, "আমাকে যদি একবার হত্যা করে পুনরায় জীবিত করা হয় এবং ৭০ বার এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়, তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না। আমি নিজের জীবন দিয়ে আপনাকে রক্ষার চেষ্টা করবো, যাতে কেয়ামতের ময়দানে বিশ্বনবী (সাঃ) কে বলতে পারি, নিজের অস্তিত্ব দিয়ে আমি আপনার বংশধরকে রক্ষার চেষ্টা করেছি।"



কারবালার ময়দানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব ঘটনা প্রমাণ করে ইমাম ও তাঁর সাথীগণ পরিপূর্ণ মানব হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর আরো কাছে পৌঁছতে সচেষ্ট ছিলেন। শত্রুশিবিরকে উপদেশ দান অথবা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় ইমাম বা তার সাথীগণ বিন্দুমাত্র মানবীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেন নি। ইমাম শিবিরে যখন পানি ছিলো তখন তিনি পিপাসার্ত শত্রুসেনাদের তৃষ্ণা মেটাতে কার্পন্য করেন নি, আবার যুদ্ধের ময়দানে চরম সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ইমামের এ নমনীয়তা ও দৃঢ়তা প্রমাণ করে তিনি অতি উচ্চ লক্ষ্য অর্জনের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। মানবতার মুক্তি এবং মানবীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা ছিলো ইমামের একমাত্র উদ্দেশ্য। এই মহান লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনীয়তা কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না বলে ইমামের শিক্ষা মানব জাতির পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবে চিরকাল। আমরা যেন কারবালার বীরত্বগাঁথা থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, মহররমের শোকাবহ দিনগুলোতে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।



(ঢাকাটাইমস/৩নভেম্বর/ইসলাম/এসএ/ঘ)