logo ১৭ জুন ২০২৫
সালাত ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগকারী এবং অস্বীকারকারী-উভয়ই কাফির
২৫ নভেম্বর, ২০১৩ ১৩:১৬:৩২
image

যারা সালাত (নামায) কে ইসলামের স্তম্ভ হিসেবে স্বীকার করে কিন্তু তা আদায়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই অনিয়ম করে, তারা মুসলিম নয়, বরং কাফির। সৌদি আরবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা  ইবনে উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এর ‘হুকুম তারিকুস সালাত’ বই থেকে  এই বিষয়ে আলোচনা এখানে তুলে ধরা হল (কিছুটা সংযোজিত ও পরিবর্তিত আকারে)—-


 “সালাত ত্যাগকারী কাফির”


কুরআনে বলা হয়েছে


১) সূরা আত-তাওবাহ-১১—“তবে এখন যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত আদায় করে, যাকাত প্রদান করে, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।”


 এই আয়াতে দ্বীনি ভাই হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা কিছু শর্তারোপ করেছেন—


১ম শর্ত: যেন তারা শিরক হতে তাওবাহ করে।


২য় শর্ত: যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে।


৩য় শর্ত: আর যেন তারা যাকাত প্রদান করে।


অতএব, তারা যদি শিরক হতে তাওবাহ করে কিন্তু সালাত কায়েম না করে ও যাকাত প্রদান না করে তবে তারা আমাদের দ্বীনি ভাই নয়। আর দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব তখনই পুরোপুরিভাবে লোপ পায় যখন মানুষ ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বহিস্কৃত হয়। ফাসেকী বা ছোট কুফরীর কারণে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়ে যায় না।


২) সূরা মারইয়াম: আয়াত ৫৯–“তাদের পরে সেই অপদার্থগণ তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা সালাতকে বিনষ্ট করলো আর মনের লালসা-বাসনার অনুসরণ করলো। সুতরাং অচিরেই তারা তাদের অপকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।”


আয়াত:৬০—“কিন্তু তারা নয় যারা তাওবাহ করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন প্রকার যুলুম করা হবে না।”


এই আয়াত সালাত ত্যাগকারীর কুফরী স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। আল্লাহ তা’আলা সালাত নষ্টকারী এবং লালসা-বাসনার অনুসরণ কারীদের সম্বন্ধে ৬০ নং আয়াতে বলেন যে তাদের মধ্যে তাওবাহকারী এবং ঈমান আনয়নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।


এখান থেকে একথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তারা সালাত বিনষ্ট করার সময়কালে মু’মিন ছিল না। (যদি মু’মিন থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক পুনরায় ঈমান আনার কথা বলতেন না।)


 


হাদীস বলা হয়েছে--  


১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—“নিশ্চয়ই মানুষ ও কুফরীর (শিরক) মাঝে পৃথককারী বিষয় হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।” (সহীহ মুসলিম)


২) “আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, অতএব, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল।”


(মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)


 আর এখানে কুফরীর অর্থ হলো, এমন কুফরী যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতকে মু’মিন ও কাফিরদের মাঝে পার্থক্যকারী বলে ঘোষণা করেছেন।


৩) সহীহ মুসলিমে আরো কিছু হাদীস আছে যেখানে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু মুসলিম শাসকের ভবিষ্যদ্বাণী করেন যাদের কিছু কার্যকলাপ ভাল হবে আর কিছু হবে মন্দ। সাহাবারা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম এই সকল শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন কি না জানতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-“না, যতদিন তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করবে।”


 অতএব, সালাত ত্যাগকারী মুসলিম নামধারী শাসকের উপর থেকে আনুগত্য উঠিয়ে নিয়ে তাদের সাথে লড়াই করা যাবে এই হাদীসের আলোকে। সুতরাং, এটা সুস্পষ্ট যে, সালাত ত্যাগকারী অবশ্যই কাফির কেননা কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে লড়াই করা জায়েয নয়।


বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন—“সালাত ছেড়ে দেয়া তো কুফরী”


সূত্র: তাফসীর ইবনে কাসীর; ১৪ নং খন্ড; ১৭৩ পৃষ্ঠা।


স্বর্ণযুগের ইমামদের বক্তব্য:


১) ইমাম ইসহাক বিন রাহবিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, সালাত ত্যাগকারী কাফির। আর এটাই হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত ইমামগণের মত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগকারী কোন কারণ ব্যতীত সালাতের ওয়াক্ত অতিক্রম করে দিলে সে কাফির।


 ২) ইমাম ইবনে হাযম রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন যে, (সালাত ত্যাগকারী কাফির) একথা উমর ফারুক, আবদুর রহমান, মু’য়ায ইবনে জাবাল, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ সাহাবাগণ হতে বর্ণিত হয়েছে। (আল্লামা মুনযেরীও রাহিমাহুল্লাহ তার তারগীব ও তারহীবে এটি উল্লেখ করেছেন।)


 ৩) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন- সালাত ত্যাগকারী কাফির হয়ে যায়, আর এমন কুফরীতে নিমজ্জিত হয়, যা দ্বীন ইসলামের সীমানা হতে বহিস্কার করে দেয়। তাকে হত্যা করা হবে যদি সে তাওবাহ করতঃ সালাত না প্রতিষ্ঠা করে।


এছাড়াও ইমাম ইবনুল মুবারক, নাখয়ী, হাতাম বিন উতায়বা, আইয়ূব, যোহায়রা বিন হারব প্রমুখ ইমামগণ সালাত ত্যাগকারীকে কাফির বলেছেন।


কিছু ইমাম বলেছেন, সালাত ত্যাগকারী মুরতাদের জানাযা পড়া যাবে না, তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না, তাকে সালাম দেয়া যাবে না এবং তার সালামের উত্তরও দেয়া যাবে না, তাকে সম্পত্তির ভাগ দেয়া যাবে না।


আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে সঠিকভাবে সালাত কায়েমের তৌফিক দান করেন এবং অযথা বিতর্ককারীদের হাত থেকে হিফাযত করেন—–আ—মী–ন। 

মুল: ইমাম ইবনে উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ


অনুবাদ: শাইখ মতিউর রহমান মাদানী


(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/ইসলাপম/এসএ/ঘ)