ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচারক এ টি এম ফজলে কবীর অবসরে গেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে বয়সসীমা উত্তীর্ণ হওয়ায় অবসরে গেলেন তিনি।
মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবসে ট্রাইব্যুনাল-২ এর এজলাস কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয় তাকে।
ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আদালত থেকেই গোলাম আযম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় এসেছিল।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ফজলে কবীর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্ব পান। পরে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হলে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তাকে। স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করলে এই ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্বে আসেন তিনি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে সম্পৃক্ত থাকা এই বিচারক বিদায় বেলায় এই বিচার চলমান থাকার আশা প্রকাশ করেন।
২০১০ সালে গুরুভার কাঁধে নেয়ার পর এক পর্যায়ে হতাশও হয়ে পড়েছিলেন জানিয়ে বিচারপতি ফজলে কবীর বলেন, ‘প্রথম দেড় বছর তেমন কাজ ছিল না। শুধু যাওয়া-আসাই ছিল কাজ। ২০১২ সালের শুরুতে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হয়। আমরা প্রতিদিন অফিস করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যে দায়িত্ব নিয়েছি, তা শেষ করতে পারবো কি না সন্দেহ ছিল। ভেবেছি যে দায়িত্ব নিয়েছি তা সঠিকভাবে করতে না পারলে লোকে কী বলবে? আজ বলতে পারবো, আমি কিছু করতে পেরেছি।’
বিচারপতি ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া রায়ে জামায়াত নেতা সাঈদী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের হোতা গোলাম আযমকে দেয়া হয় ৯০ বছর কারাদণ্ড।
গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রায় দেয়া এই বিচারক বলেন, ‘আমি এ বিচারকাজের একটি অংশ শেষ করেছি মাত্র। বিচার চলবে, আমার পরে এ দায়িত্বে আরেকজন আসবেন। তিনি পরবর্তী কাজ চালিয়ে যাবেন।’
অনুষ্ঠানে বিচারক এ টি এম ফজলে কবীরের শিক্ষা ও কর্ম জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
১৯৪৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জন্ম নেয়া ফজলে কবীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর ১৯৭৫ সালে মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দেন তিনি। এরপর জজ হয়ে ১১ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘একজন অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে আপনি (বিচারপতি কবীর) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। একজন অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে এটি অত্যন্ত সাহস এবং প্রজ্ঞার কাজ। আপনি সেই সাহস এবং প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন।’
বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতা আব্দুল বাসেদ মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/৩১ ডিসেম্বর/এজে)