ঢাকা: সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগে এই নীতিমালার কোনো ধারা প্রয়োগ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেইসঙ্গে কমিশনকেই নীতিমালা প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
বেতার, টেলিভিশনের নীতিমালার বিষয়ে সম্প্রচার কমিশন গঠনের সময়সীমা নির্ধারণ না করা এবং কমিশন-সম্পর্কিত আইন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা রাখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।
সম্প্রচার নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে সম্প্রচার ও সম্প্রচার কমিশন-সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় এটিই বিএফইউজের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। এতে আরও বলা হয়, যেহেতু সম্প্রচার কমিশন কত দিনের মধ্যে গঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই—তাই এ কথা বলার সুযোগ আছে যে মন্ত্রণালয় বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই এ নীতিমালাটি করেছে। এটি দেশে ও বিদেশে ভুল বার্তা দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে এর আলোকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে মনজুরুল আহসান বলেন, এ নির্দেশনাটি ভয়ংকর ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ, সরকারি নির্দেশনায় কখনই কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতিমালা তৈরি হয় না।
সম্প্রচার নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে (টক শো) কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য বা উপাত্ত দেওয়া পরিহার করতে হবে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোনো গণমাধ্যম যদি বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেয় তা সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। আর সংশোধন না করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সুতরাং, এটি নীতিমালায় রাখার কোনো প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এটিকে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হিসেবে দেখছেন না। তাঁরা মনে করেন, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের গাইডলাইন মাত্র। এ জন্য তাঁরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে সেই কমিশনই অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে।
মনজুরুল আহসান সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিরও সদস্য ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এ কমিটির সদস্য হিসেবে লিখিতভাবে যে মতামত উপস্থাপন করেছিলাম তার মূল বিষয়ের প্রতিফলন নেই। খসড়াকে চূড়ান্ত করার পর কমিটির সদস্য হিসেবে আমি জানতেও পারিনি খসড়াটির চেহারা কী। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর যা দেখছি তাতে কোনো কোনো বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সম্প্রচার নীতিমালার দাবি সাংবাদিকেরাই তুলেছিলেন। এ অবস্থায় এই উদ্যোগকে তাঁরা ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নীতিমালার বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মনজুরুল আহসান বুলবুল নীতিমালার ধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি ধারায় বলা আছে সশস্ত্র বাহিনী বা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননাকর বক্তব্য ও দৃশ্য প্রদর্শন করা যাবে না। একই সঙ্গে অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। মনজুরুল আহসান বলেন, এই নির্দেশনা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া। এ ছাড়া আরও ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি উৎপল সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সাইফুল ইসলাম তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য কাজী রফিক, মধুসুদন মন্ডল, রফিকুল ইসলাম সবুজ, আবদুল মান্নান ও নাসিমুন আরা হক মিনু।
(ঢাকাটাইমস/ ৯আগস্ট/টিএ)