logo ১০ মে ২০২৫
চোখের জলে বিদায় বেবী মওদুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৫ জুলাই, ২০১৪ ২২:৪৭:৪৬
image


ঢাকা: প্রবীণ-নবীণ সাংবাদিক, দেশের বিশিষ্টজন, রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সবাই ছিলেন অপেক্ষায়। সবার চোখ ছিল টলমল। অপেক্ষা যার জন্য তিনি এলেন। তবে পায়ে হেঁটে নয়,  খাটিয়ায় শুয়ে। আর কখনও দেখা যাবে না সফেদ শাড়ি পড়া এ এম মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদকে প্রেসক্লাব চত্বরে ঘুরে বেড়াতে। তাই শেষবারের মতো দীর্ঘদিনের কলমযোদ্ধাকে বিদায় দিতে এত আয়োজন।

শুক্রবার রাতে প্রবীন নারী সাংবাদিক, লেখক ও সাবেক সংসদ সদস্য বেবী মওদুদকে বিদায় দিতে এসে সবাই যেন কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন। ‘এ ক্ষতি পূরণের নয়। অনেক বড় একজন অভিভাবককে হারালাম আমরা।’ প্রায় সবার ভাষ্য ছিল এটাই।

আগে থেকেই সব ঠিকঠাক ছিল। তাই মরদেহ প্রেসক্লাব চত্বরে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে যান জানাজার নামাজের জন্য। এর আগ মুহূর্তে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘ দেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ছিলেন বেবী মওদুদ। তিনি শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না, ভাল একজন লেখিকাও ছিলেন।’ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় মরহুমার রুহের মাগফেরাতের জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান।

এবার পালা সদ্য প্রয়াত সাংবাদিকের বড় ছেলে অভির। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আমার মা সততা ও আদর্শের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তার এই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। আমার মায়ের কোনো আচরণে আপনারা কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেবেন।’

পরে রাত ৯ টা ৪০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান প্রেসক্লাবের ইমাম মাওলানা আবুল হোসেন।

জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনিই আবার বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের পক্ষে হুইপ আতিকুর রহমান আতিক একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয় বেবী মওদুদের প্রতি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতেই বনানী কবরস্থানে স্বামী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলীর কবরে দাফন করা হবে প্রবীণ সাংবাদিককে।

এর আগে এশার নামাজের আগেই নিজের বাসভবনের সামনে বেবী মওদুদের প্রথম জানাজা হয়। এরপর ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে এশার নামাজের পর হয় দ্বিতীয় নামাজের জানাজা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আগামী ১ আগস্ট মরহুমার বাসভবনে কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

বেবী মওদুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। তার বাবা আবদুল মওদুদ ছিলেন একজন বিচারপতি। আর মায়ের নাম হেদায়েতুন নেসা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার দিনগুলোতেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ।

১৯৭১ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার আগে ১৯৬৭-৬৮ সময়ে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন বেবী মওদুদ।

নবম জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

(ঢাকাটাইমস/ ২৫ আগস্ট/ এইচএফ/ ১০.৪৪ঘ.)