logo ১৭ মে ২০২৫
ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব
ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
৩০ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০৭:৩১
image

ঢাকা: আল্লাহর পথে দাওয়াত বা আহবান করা একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। দাওয়াতের কাজ প্রত্যেক নবীর বৈশিষ্ট্য ছিল। আর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) তার উম্মতকে তার অবর্তমানে এই দাওয়াতের কাজ করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।


দাওয়াতের চারটি ভিত্তি রয়েছে। যা দাওয়াত সফল হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো- আহবান, আহবানকারী, আহূত ব্যক্তি ও দাওয়াতের নিয়ম পদ্ধতি। এই চারটি বিষয় ঠিক করে নিয়ে দাওয়াত পরিচালিত হলে দাওয়াতের সফলতা আসতে পারে।


দাওয়াত ও তাবলীগের মূলনীতি এবং পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের পথ নির্দেশনা দিয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনার পালনকর্তার পথের প্রতি লোকদেরকে আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে। আর উত্তম পন্থায় আপনি তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক সে ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে ব্যক্তি তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনি সেই লোকদেরকেও ভাল করে জানেন যারা সঠিক পথে রয়েছে’ (সূরা নাহাল-১২৫)।


আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত বক্তব্য দিতে হবে। উপদেশমূলক কথাবার্তা বলার সময় বিনয়-নম্রতা ও শিষ্টাচারের নীতি অবলম্বন করতে হবে। জ্ঞানী ও সুধীজনদের মাঝে দাওয়াতের সময় হেকমত ও যুক্তিপূর্ণ কথা বলতে হবে আর সাধারণ মানুষের মাঝে সদুপদেশ সহকারে কথা বলতে হবে।


দাঈ বা আহ্বানকারীকে জাতিগত বা গোত্রত গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। দাওয়াতের বিষয় হলো ইসলাম; দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের প্রতিটি হালাল বিষয় মানার আদেশ ও হারাম থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ করা।


যে দ্বীনে হক্কের দিকে মানুষকে ডাকা হবে সে হক্ক থেকে যেন দাঈকে কোন জাতির শত্রুতা বা মিত্রতা বিচ্যুত করতে না পারে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর জন্য সত্য নীতির উপর স্থায়ীভাবে দণ্ডায়মান থাক এবং ইনছাফের সাক্ষ্যদাতা হও। কোন বিশেষ দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে, তোমরা ইনছাফ ত্যাগ করে ফেলবে। ন্যায়বিচার কর। এটা তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী’ (সূরা মায়েদা-৮)।


আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘অতএব, আপনি উপদেশ প্রদান করুন, আপনি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র। আপনি তাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নন’ (সূরা গাশিয়া-২১ ও ২২)।


দাওয়াতের মূল লক্ষ্য হলো, অন্যায়, মন্দ ও ধর্মের নামে অধর্মের কাজ থেকে মানুষকে পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের দিকে আহ্বান করা। এজন্য দাঈ এর প্রথম কাজ হলো মানুষকে দিকে আহ্বান জানানো।


মহানবী (স.) যখন মুয়াজ (রা.) কে ইয়ামেনে প্রেরণ করেন তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সেখানকার অধিবাসীদেরকে সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই এবং আমি আল্লাহর রসূল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরজ করেছেন। যদি তারা সেটাও মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত করাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদকাহ (যাকাত) ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হয়ে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’ (বুখারী হা/১৩৯৫)।


দাওয়াতের কাজ অনেক ত্যাগের ও কষ্টের মাধ্যমে করতে হয়। আল্লাহর উপর গভীর ঈমান, ধৈর্য ও অনেক ত্যাগের মাধ্যমে একাজ করা সম্ভব। মুমিনের জন্য যথাসাধ্য দাওয়াতের কাজ করা কর্তব্য।


পবিত্র কোরআনে বলা হেয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সত্কর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’(সূরা আল-ইমরান-১০৪)।


দাওয়াতী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলে নিজের জীবনকে আরও ধর্মের প্রতি গতিশীল ও নেক আমলে পরিপূর্ণ করার সুযোগ পাওয়া যায়।


জীবন থেকে ক্রমে ক্রমে অন্যায়, অপকর্ম, অসত্সঙ্গ, পাপকর্ম দূর হতে থাকে। জীবন পবিত্রময় হয়ে উঠতে পারে। আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া একান্তই নেকীর কাজ। মানুষের সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট কথা সেটাই যাতে অপরকে হকের দাওয়াত প্রদান করা হয়।


আল্লাহর পথে আহ্বান করার মত উৎকৃষ্ট ও উত্তম কথা আর কিছুই হতে পারে না।


মহান আল্লাহ বলেন, ‘তার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি মুসলিম? (সূরা হামীম সাজদাহ-৩৩)।


(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/এমআর)